কবিতা সাহিত্য

বাংলাদেশের কৃতি পুরুষ, উপমহাদেশের বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া’র কবিতা

নরসুন্দা ডটকম   মে ৯, ২০১৭
বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া’র কবিতা

বাংলাদেশের কৃতি পুরুষ- উপমহাদেশের বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া। যিনি এই মহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পরমাণু বিজ্ঞানীই ছিলেন না, যিনি ছিলেন বিজ্ঞান গবেষক এবং এ দেশের বিজ্ঞান ভিত্তিক উন্নয়নের অগ্রনী পথ প্রদর্শক। তাঁর কর্মময় জীবনে রয়েছে শ্রেষ্ঠত্বের অসংখ্য তিলক। এই শ্রেষ্ঠত্ব অর্জিত হয়েছে তাঁর শৈশবে স্কুলের শিক্ষাজীবন থেকে উচ্চতর শিক্ষা অর্জনের সকল পর্যায়ে।
এ দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পূর্বক্ষণে ছাত্র রাজনীতির যে উত্তাল ও গৌরবদীপ্ত ধারা সুচিত হয়েছিল, তার অন্যতম পুরোধা ছিলেন তরুণ ছাত্রলীগ নেতা ওয়াজেদ মিয়া। সমাজ সচেতন তরুণ এই বিজ্ঞানের ছাত্র ১৯৬১ সালে আইয়ূব বিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হয়ে ১৯৬২তে ছাত্রলীগের প্রার্থী হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফজলুল হক হলের ভিপি নির্বাচিত হন। তখন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে গ্রেফতার করা হলে ঢাকা বিশ্বাবিদ্যালয়ে শুরু হওয়া ছাত্র ধর্মঘটে অন্যতম ছাত্রনেতার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আইয়ুব সরকারের হাতে তিনি গ্রেফতার হন। ৪৫ দিনের সেই কারারুদ্ধ জীবনের অবসান ঘটে তৎকালিন পূর্ব পাকিস্তানের গর্ভনর জেনারেল আজম খানের পদত্যাগের মধ্যদিয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা জীবন শেষ করে তিনি পাকিস্তান আনবিক শক্তি কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে যোগ দেন। ১৯৬৭ সালে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করে ফিরে আসেন ঢাকাস্থ পরমাণু শক্তি কমিশনের উর্দ্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার পদে। এর পর আজীবন দায়িত্ববান এই মানুষটি যুক্ত হয়ে পরেন মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রাণস্থল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের পরিবারের সঙ্গে। বঙ্গবন্ধুর জেষ্ঠ্য জামাতা তিনি। একাধারে বিজ্ঞানী- বিজ্ঞান গবেষক ও লেখক এবং ৭১ এ দেশের মুক্তিসংগ্রাম- স্বাধীনতা অর্জনের প্রত্যক্ষ কান্ডারী পরিবারকে নেপথ্যে থেকে বহুবার রক্ষাকর্তার ভুমিকা পালন করেছেন। মুজিব পরিবারকে কেন্দ্র করে তিনি যে ঝুকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন সে অতুলনীয় দৃষ্টান্তগুলো এদেশের ইতিহাসের অংশ হয়ে আছে। ৭৫’র ১৫ই আগষ্টের নির্মমতার পর ড. ওয়াজেদ বঙ্গবন্ধু পরিবারের অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করেছেন। দেশে রাজনৈতিক গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা পূনঃপ্রতিষ্ঠার নেপথ্য প্রাণ পুরুষও ছিলেন তিনি। এ দেশের শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য ড. ওয়াজেদ মিয়া নতুন প্রজন্মের কাছে এরকম অসংখ্য কারনে অনুকরনীয় দৃষ্টান্ত হয়ে আছেন।
শৈশবে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে শিক্ষা জীবনের শুরু থেকে, পশ্চাদপদ এদেশের জ্ঞান-বিজ্ঞানের ধারা প্রসারের জন্য তিনি স্বপ্ন দেখেছেন। ছাত্রাবস্থায় স্কুল ম্যাগাজিন এ তিনি প্রথম লিখেছিলেন ‘জ্ঞানই শক্তি’ নামক প্রবন্ধ। ড. ওয়াজেদ মিয়া তাঁর দীর্ঘ কর্মময় জীবনে বিজ্ঞান ও রাজনীতি বিষয়ে লিখেছেন। তাঁর রচিত গ্রন্থগুলো আন্তর্জাাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত হলে শিক্ষার্থী ও বিজ্ঞান চর্চার আবশ্য পাঠ্য হিসাবে তাঁর গ্রন্থগুলো বিবেচিত হয়।
ব্যক্তিগত জীবনে নিরহংকারী- নির্লোভ এই মানুষটি অবসরে গান শুনতে ভালো বাসতেন। আবহমান বাংলার পল্লীগীতির প্রতি ছিল তাঁর অকুন্ঠ নিবেদন। তিনি কবিতাও লিখেছেন। ড. ওয়াজেদ মিয়া’র ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে প্রথম দেয়া স্মৃতিচারন মূলক সাক্ষাতকার ও দু’টি কবিতা প্রকাশিত হয়েছিল এম আর আখতার মুকুল ও মাহবুব রহমান সম্পাদিত “সাপ্তাহিক দুর্জয়” পত্রিকার ১৯৯১ সালের ঈদের বিশেষ সংখ্যায়। আমৃত্যু জ্ঞান পিপাসু- বিজ্ঞানের পথ প্রদর্শক ও সাধক ড. ওয়াজেদ মিয়া’র দুটি প্রকাশিত কবিতা পুনরায় “নরসুন্দা ডটকম’র” পাঠকের সামনে তুলে ধরা হলো।

ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া’র কবিতা

তোমার দয়ায় বেঁচে আছি আমি

তোমার দয়ায় বেঁচে আছি আমি,
মুছে সকল দুঃখ সকল যাতনা।

তোমায় যেন কভু নাহি ভুলি আমি
এই হইল মোর অন্তরের প্রার্থনা।

তোমায় যখন আমি প্রথম জেনেছি
সেই থেকে আমি তোমার নাম জপেছি।

যখনি তোমায় ব্যাকুল হয়ে ডেকেছি আমি
সকল সময় আমায় দয়া করেছো তুমি।

জীবনে দেখেছি কতনা লীলাখেলা
জীবনে দেখেছি কতনা যাতনা-অবহেলা।

তবুও তোমায় আমি কভু নাহি ভুলিতে পারিয়াছি
তাই মন আমার সদা যেতে চায় তোমার কাছাকাছি।

বারবার আমি তোমায় স্মরণ করি
তবুও ভয় হয় মোর কখন তোমায় যাই হেরি।

তোমায় যেন আমি সদা স্মরিতে পারি এই আমার বাসনা
দয়া কর তুমি এই যেনো রয় আমার অন্তরের সকল প্রার্থনা।

যাবার বেলায় আমি একি দেখিতেছি
নূতন করে চিনবো, কখনো কিছু ভাবিয়াছি।
তোমায় আমি নাহি ভুলিব এই যেন রয় আমার বিশ্বাস।

আনবিক শক্তি স্টাফ কোয়াটার্স, আমতলা মহাখালী, ঢাকা
১৩ অক্টোবর ১৯৮৯, ২৮ আশ্বিন ১৩৯৬, ১১ রবিউল আউয়াল ১৪১০

জগত আমার এমন কেন হলো !

ওগো, আজি জগত আমার এমন কেন হলো ?
উপায়হীন অধম আমি তুমি আমায় বলো।

মন বলে যে- কোনদিন বিফলে যাবে না
বিশ্ব ধরায় যে কোন প্রয়াস যে কোন সাধনা
যথন তোমায় আমি প্রথম জেনেছি
সেই আমি সবকিছু ত্যাগিছি।

এ বিশ্ব জগতের সকল কল্যানের সন্ধানে
প্রীতি ভালোবাসা শান্তির স্বপ্ন এঁকে মনে।

এ জীবনে কতনা দেখেছি, হয়েছে কত না পরিচয়
কত সুন্দর কতো গোলাপের ঘটেছে চির অবক্ষয়।

তবুও শেষ হয়নি বিশ্ব মানবের সাধনা
করিতে সৃষ্টি নূতন বিস্ময় সুন্দরের আরাধনা।

যাবার বেলায় দেখি কতো প্রণয় কতনা ব্যত্যয়
সবকিছু হবে কি বিলীন, মনে হয় এই ভয়।

তোমার কাছে মিনতি আমার রেখ চির অম্লান
মোদের সকল কীর্তি সকল সৃষ্টি দীপ্ত অনির্বান।

আনবিক শক্তি স্টাফ কোয়াটার্স, আমতলা মহাখালী, ঢাকা
১৭ অক্টোবর ১৯৮৯, ২ কার্তিক ১৩৯৬, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪১০

About the author

নরসুন্দা ডটকম

Leave a Comment