শিল্প- সংস্কৃতি

মৌসুমী বলেন- আমার জ্বর হলে ওর ভালো লাগত না, ওর কোনো অসুখ হলে আমার না

নরসুন্দা ডটকম   মার্চ ২৬, ২০১৮

১৯৯৩ সালের ২৫ মার্চ বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’। সোহানুর রহমান সোহানের এই ছবির মাধ্যমে দেশের চলচ্চিত্রপ্রেমী মানুষেরা পেয়েছিল দুটি নতুন মুখ—মৌসুমী ও সালমান শাহ। প্রথম ছবিতেই তাঁরা বাজিমাত করেন—অভিনয় দিয়ে মানুষের মনের মণিকোঠায় জায়গা করে নেন। ২২ বছর আগে আকস্মিক মৃত্যুতে সালমান শাহ মারা যান।

মৌসুমী ফ্যান ক্লাব গেল রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর উত্তরায় ম্যারি মন্টানা রেস্তোরাঁয় ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবির ২৫ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান আয়োজন করেন।

সেখানে দৈনিক প্রথম আলো’র এক সাংবাদিককে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন এই ছবি নিয়ে অনেক অজানা গল্প।

মৌসুমী ও সালমান শাহ । ছবি: সংগ্রহ।

সালমান শাহ প্রসঙ্গে মৌসুমী বলেন, আমরা তখন খুলনায় থাকতাম। ছোটবেলায় ইমন (সালমান শাহ ডাকনাম) আর আমি প্লে-গ্রুপ ও নার্সারিতে একসঙ্গে পড়েছি। বাবার চাকরির কারণে ইমনের পরিবার খুলনা সার্কিট হাউসে থাকত। ওই স্কুলে আমার ফুফু ছিলেন টিচার। ফুফুর ছুটি হওয়া পর্যন্ত ইমনদের বাসায় আড্ডা দিতাম। সেও আমাদের বাসায় যাওয়া-আসা করত। ভালো বন্ধুত্ব হয়। এরপর হঠাৎ ওরা ঢাকায় চলে আসে।বন্ধুর সঙ্গে বন্ধুর দেখা হওয়ার যে আকাঙ্ক্ষা থাকে, তা ছবিটি করতে গিয়ে নতুন করে টের পাই। ছবির কাজ করার সময় আমাদের দেখা হয়। আবেগাপ্লুত হলাম।

অল্প কদিনেই আমাদের সম্পর্ক আবার আগের রূপ নেয়। নিজেদের সবকিছুই একজন আরেকজনের সঙ্গে শেয়ার করতাম। সালমান আর আমার সম্পর্ক গভীর ছিল। অনেক খুঁটিনাটি বিষয় আমরা শেয়ার করতাম, যা কাউকে বলতে পারতাম না। আমার জ্বর হলে ওর ভালো লাগত না, ওর কোনো অসুখ হলে আমার না। আমাদের আত্মার একটা টান ছিল। দেখা গেল, জ্বরের কারণে আমি শুটিংয়ে যেতে পারিনি, পরিচালকের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে দেখা করতে চলে আসত। ওর কোনো ভালো হলে আমার ভালো লাগত, ওর খারাপ হলে আমার খারাপ লাগত। এমনই ছিল আমাদের অনুভূতি।

‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’

ঢালিউডে নানা কারণে সোহানুর রহমান সোহানের ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’কে স্মরণ করা হয়। বাংলা সিনেমার শীর্ষ দশ ব্যবসাসফল সিনেমার অন্যতমও এটি। সেই সিনেমা মুক্তির সিকি শতক (২৫ বছর) পার করছে রোববার।১৯৯৩ সালের ২৫ মার্চ মুক্তি পায় হিন্দি ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’ সিনেমাটির রিমেক। এর মাধ্যমে বড়পর্দায় পা রাখেন অমর নায়ক সালমান শাহ ও প্রিয়দর্শিনী নায়িকা মৌসুমী। ওই সময় তার পরিণত হন ইয়ুথ আইকনে।

তিন বছরের ক্যারিয়ারে সালমান বেশকিছু জনপ্রিয় সিনেমা উপহার দিয়ে ঢালিউডে চিরস্থায়ী স্থান করে নিয়েছেন। অন্যদিকে মৌসুমী এখনো অভিনয় করে যাচ্ছেন।

একাধিক সূত্রের উল্লেখ করে উইকিপিডিয়া জানায়, প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আনন্দ মেলা হিন্দি ‘সনম বেওয়াফা’, ‘দিল’ ও ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’ এর কপিরাইট নিয়ে সোহানুর রহমান সোহানের কাছে আসে এর যে কোন একটির রিমেক করার জন্য। উপযুক্ত নায়ক-নায়িকা খুঁজে না পেয়ে সম্পূর্ণ নতুন মুখ দিয়ে ছবি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন তারা।

নায়িকা হিসেবে মৌসুমীকে নির্বাচিত করেন। নায়ক হিসেবে প্রথমে তৌকীর আহমেদ ও পরে আদিল হোসেন নোবেলকে প্রস্তাব দিলে তারা ফিরিয়ে দেন। তখন নায়ক আলমগীরের সাবেক স্ত্রী খোশনুর আলমগীর ‘ইমন’ নামে একটি ছেলের সন্ধান দেন। প্রথম দেখাতেই তাকে পছন্দ করে ফেলেন পরিচালক এবং ‘সনম বেওয়াফা’ রিমেকের জন্য প্রস্তাব দেন। কিন্তু ইমন ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’-এর জন্য পীড়াপীড়ি করেন। এ ছবি তিনি ২৬বার দেখেছেন। শেষ পর্যন্ত পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান তাকে নিয়ে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন ও ইমন নাম পরিবর্তন করে সালমান শাহ রাখা হয়।

সিনেমাটির হিন্দি কাহিনি লিখেছেন নাসির হোসেন খান, যার বাংলা চিত্রনাট্য লিখেছেন সোহানুর রহমান সোহান ও সংলাপ লিখেছেন আশীষ কুমার লোহ। প্রযোজক সুকুমার রঞ্জন ঘোষের আনন্দমেলা সিনেমা লিমিটেডের ব্যানারে নির্মিত হয় ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’।আরো অভিনয় করেন রাজিব, আহমেদ শরীফ, আবুল হায়াত, খালেদা আক্তার কল্পনা, মিঠু, ডন, জাহানারা আহমেদ, অমল বোসসহ অনেক।

সিনেমাটি ঈদুল ফিতরে মুক্তি পায়। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে ব্যবসাসফল হিসেবে সেরা চারটি ছবির একটি হিসেবে ৮ কোটি ২০ লাখ টাকা আয় করে।

About the author

নরসুন্দা ডটকম