মানুষ- সমাজ

আমার দুই জীবন- লুৎফর রহমান হিমেল

নরসুন্দা ডটকম   মার্চ ৩১, ২০১৮

এমনিতেই আমি ক্ষুদ্রতম বালুকণার সমান এক মানুষ। কেউ কোনো কারণে শুভেচ্ছা জানালে বা প্রশংসা করলে— আমি আরও আ-র-ও ক্ষুদ্র হয়ে একেবারে ধূলায় মিশে যাই। এমন পরিস্থিতিতে সব সময় একটা কথাই শুধু মনে হয়, আমি এতটা পাওয়ার যোগ্য নই।

এই আজকে যেমন আপনারা ভার্চুয়াল ফুল-কেক-মোমবাতি দিয়ে যেভাবে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালেন; এসব উপহার ছোঁয়াও যায় না, খাওয়াও যায় না। অথচ এগুলোর এতো শক্তি! হাতের ছোঁয়ার চেয়ে হৃদয়ের অনুভব হয়ত বেশি শক্তিশালী। নাহলে এ প্রাপ্তিতে আমার হৃদয়ে এতোটা তোলপাড় ফেলবে কেন? আপনাদের এসব উপহার ও শুভেচ্ছাবাণী আমি এইক্ষণে হৃদয় দিয়ে অনুভব করছি। এমন শুভ কামনা পাওয়ার লোভেই হয়ত বেঁচে থাকব অনাগত দিনগুলোতে। ধন্যবাদ আপনাদের। অনেক অনেক ধন্যবাদ।

আজ আমার ঢাকার জীবন আর গ্রামের জীবন সমান হয়ে গেল। অর্থাৎ যাপিত জীবনে আমার যা বয়স হলো আজ, তার অর্ধেকটা গ্রামে আর অর্ধেকটা শহরের।

লুৎফর রহমান হিমেল, সাংবাদিক।

ঢাকায় আসার আগে কখনো আমার জন্মদিন পালন হয়নি। আমি শুধু সিনেমায় কিংবা টেলিভিশন নাটকে দেখতাম নায়ক-নায়িকারা জন্মদিন পালনের দিন মস্তবড় একটা কেক কাটে। কেকের ওপর বড় বড় হরফে তাদের নাম লেখা থাকে। থাকে প্রজ্বলিত মোমবাতি। মোমবাতি ফু দিয়ে নেভায় তারা। এ সময় তাদের চোখে-মুখে মোমবাতির আলো পড়ে রাঙা হয়ে যায়। মোমবাতি নিভে গেলে এর ধোঁয়াগুলো চারদিকে ছড়িয়ে মিলিয়ে যায়। তখন উপস্থিত অসংখ্য অতিথি বেশ জোরে সোরে ‘‘হ্যাপি বার্থ ডে” গানটা গায় অার হাততালি দেয়। এগুলো দেখে দেখে ভাবতাম, জন্মদিন হয়তো শহরের মানুষদের জন্যই। আমি যে গ্রামটিতে জন্মেছি, এখনো আমার সেই গ্রামে সেভাবে কেক-ফুল-মোমবাতির জন্মদিন পালন হয় না। বড়জোর দু-এক বাড়িতে মিলাদ, দোয়া, গরীবদের খাওয়ানো— এসব হয়।

ফলে গ্রামে কোনোদিনও আমি জন্মদিন পালন করিনি। আব্বা-মা কেউই এটার আয়োজন করেননি। সেটি যে বেঠিক ছিল, তা-ও না। গ্রামের মানুষ ধান কাটা, পাটকাটা, গম কাটা, শরিষা বোনার কাজের ব্যস্ততায় জন্মদিনের অনুষ্ঠানের সময় পান না। ভাবতেও পারেন না।
আবার এই যে এখন ঢাকার জীবনে স্ত্রী-সন্তানরা আমার জন্মদিন ঘটা করে পালন করছে, আপনারা শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন— এগুলোও ঠিক আছে। গ্রামের মতো মেলা-পার্বণ-উৎসব-আয়োজন ত শহরে নেই। ফলে শহরে নানা উপলক্ষ্য খুঁজি অনুষ্ঠানের জন্য। মা দিবস, বাবা দিবস, বন্ধু দিবস— এসব হয়তো তারই উদাহরন।

যাপিত জীবনে আমার বয়স কতো হলো— এমন ভাবনা কখনো আমার মাথায় আসে না। তাই কেউ জিজ্ঞেস করলে বলতেও পারি না। কারণ, কখনো আমি নিজের বয়স যোগ করে দেখিনি। আরও দশ বছর আগে আমি আমার প্রত্যাশা শূণ্য ক’রে ফেলেছি । ফলে এখন যা-ই অর্জন করি, মনে হয় সবই বোনাস পাওয়া।

শতভাগ রোমান্টিক মানুষ বলতে যা বোঝায়, তা-ই আমি। এখনো হুটহাট প্রেমে পড়ি। তবে এই প্রেম প্রকৃতির ছোট ছোট সৃষ্টির প্রতি। যেমন: কলমিলতা, চোরাকাটা, ভাঁটফুল, শিশিরভেজা দুর্বাঘাস, শেয়ালের ডাক, টিনের চালে শ্রাবণসন্ধ্যার ঝুমবৃষ্টি, ফাল্গুনের সর্বগ্রাসি জোছনা, গলির মোড়ের চা দোকানির নির্লোভ হাসি—আরও কতো কি। দিনদিন এসবের প্রতিই আসক্তি বাড়ছে। বাড়ছে জীবনের প্রতি প্রেমও।

ধন্যবাদ সবাইকে যারা নাগরিক জীবনের মূল্যবান সময় নষ্ট করে আমার জন্য শুভকামনা রাখলেন। আমাকে এভাবেই আপনাদের প্রার্থনায় রাখবেন সারাজীবন। সবার মঙ্গল কামনা করছি। ভালবাসায় ভরে উঠুক সবার জীবন।


৩১ মার্চ ২০১৮। ১৭ চৈত্র ১৪২৪। ১২ রজব ১৪৩৯। কলাবাগান।

লুৎফর রহমান হিমেল টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বর্তমানে দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন-এ বার্তা সম্পাদক হিসেবে কর্মরত আছেন। এর আগে তিনি পরিবর্তন.কম-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি দেশের শীর্ষ সংবাদপত্রগুলোতেও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।

আরো পড়ুন:

          আপনার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন কি আপনার ওপর গোয়েন্দাগিরি করছে?

 

About the author

নরসুন্দা ডটকম