কবিতা সাহিত্য

বৈশাখে মাহবুব রহমান’র কবিতা

নরসুন্দা ডটকম   এপ্রিল ১৩, ২০১৮
মাহবুব রহমান’র কবিতা

বিষন্ন অরণ্যগুলোর শাখায় শাখায় পরিবর্তীত পরিণয় যখন আন্দোলিত। সবুজে সবুজে রাঙানো শরীর চারিদিকে বিস্তৃত। আত্মার রসদ খুঁজতে বেরিয়েছি জলে স্থলে, নিদারুন মরুচরে, স্পন্দিত সুরধ্বনির প্রণয়ে। সেই স্পর্শগুলো, সেই স্তব্ধতার অনুদিত ধ্বনিগুলো, গানগুলো বিরামহীন অবোধ্যতায় কবিতার প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে এসেছে আমাদের গহীন অন্তস্থলে, প্রাণের অস্তিতে, বহু জীবনের ভাবনায়।

আমাদের গল্পের নায়িকারা

অদ্ভুত, অসুন্দর। বিভ্রমে ডুবন্ত চন্দ্ররাত, রূপসী- পোড়ামুখী,
আমাদের গল্পের নায়িকারা।

মুন্ডহীন পাথুরে দেয়ালের ধাচে দাড়িয়ে থাকে অকম্পমান
বৃষ্টির জলে ভেজা রুক্ষ সড়ক যেন মরুঝড়ে অস্থির নিশিথরীতি।
উৎকন্ঠ প্রহরের পাশে সারি সারি অপাপবিদ্ধ
পাখিদের শব, আমাদের সময়ের নায়িকারা।

শয্যাহীন সঞ্চয়হীন শস্যবনের ধারে
বিচলিত গোধুলী ও রাত্রির ব্যবচ্ছেদে
নৃত্য করে-জাগ্রত হয়
সবুজ পাতার বুক সেলাই করে তেজষক্রিয় অতিকথন প্রলাপ,

বিরহের দরজা খোলেনি তারা। হেটে গেছে, হেটে যায়
ভুল পথে-ভুল সখ্যতায়, আমাদের গল্পের নায়িকারা।

০২.০৩.১৮

 

আবৃত্তি সন্ধ্যায়

একুশের শাড়ী পড়ে তুমি কবিতা পড়েছো
কপোলে তোমার গোধুলী রাঙানো লাল টিপ যা
ঔজ্জ্বল্যে ভরিয়ে দিয়েছে সন্ধ্যার গাঢ় আকাশকে ।
শামসুর রাহমান পড়েছো, পড়েছো সৈয়দ হক,আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ।
তখন আমি খুঁজে ফিরেছি শিমুল ডালের চঞ্চল পাখির চঞ্চুতে
বর্ণমালার যাবতীয় মধুরেণু, ব্যথিত অক্ষর।

পড়েছো চিত্রকল্পে মুদ্রিত অনাবিল স্বপ্নবৃত্যান্ত।

তোমার কাজলআঁকা চোখে বিম্বিত হলো শ্রোতাদের মুগ্ধতা, বিস্ময়।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সরোবরে ঝাপ দিয়ে উঠে আসতে আসতে
পড়েছো নাজিম হিকমত-নেরুদার ক্ষুব্ধ পঙক্তিমালা, যেন নৃত্যপর তরঙ্গে
সমর্পিত হলো জীবনের মগ্নতা। অথৈই উজান বৈঠায় ভর করে যে মাঝি
তীরে ফেরার সংকল্পে দৃঢ়, তুমি তার ব্যর্থতা ও ভুবন বিলাসী পর্যটনের কাহিনি পড়েছো।

তুমি কবিতা পড়েছো
সান্ধ্য মেঘের ফাটল চিড়ে দীর্ঘশ্বাস উড়ে যাচ্ছে বহুদুরে
জলশূণ্য নদীগুলো ফিরে আসছে উজান ঠেলে বুকের উপকুলে।
তুমি কবিতা পড়েছো
রবীন্দ্রনাথের কাজল কালো মেয়েটি নগরীর কোলাহল ভেঙ্গে
দ্বীধার সিঁড়ি পেরিয়ে উঠে আসছে শ্রোতাদের মৌনবিহারে, সহজেই।
চারপাশে কোলাহল-মুগ্ধতা তবু ভীষণ একাকী এই সন্ধ্যায়
খুব মনে পড়ছে তোমায়, তবু তুমিহীন এই জনারণ্যে
শুনছি তোমারই কবিতা পাঠ।

জলসার সমাপ্তি টেনে দিলে
বাচিক শিল্পের নবদূত সোহেল আহমেদ,বিনয়ী বিদায়ে।
ফেরার বেলায় মঞ্চের শূণ্যতায় তুমি যেন
একুশের শাড়ী পরে গোধুলীর ঔজ্জ্বল্য ছড়িয়ে
ফের পড়ছিলে ব্রততী দেবীর কন্ঠে, আবুল হাসান
অথবা আমার কবিতা ‘তার জননীকে খুঁজতে গিয়েছিল’।

২৭.০২.২০১৮

হেটে যাচ্ছ, যেতেই হচ্ছে

হেটে যাচ্ছে নগর পুরোনো শহর অলিগলি, যাচ্ছে
তোমার দিকে। উপহাস মুদ্রিত বিপন্ন্ সড়ক ছায়া
অনুসরণ করছে তোমাকে যেন উথলে উঠেছে সখার পুরোনো পীড়িতি
আর কথোপকথনে জঞ্জাল ঠাই নিচ্ছে খানাখন্দ, নর্দমায়।

বৈঠকী সম্ভাষনে তুমি উঠে যাচ্ছ গন্তব্যহীন
তোমার পিছু নিয়েছে হতশ্রী নাগরিক রীতি শহুরে অভিলাস
রৌদ্রললাটি এঁকে দিয়েছে দুর্দশার চিত্রকল্প।
চারিদিকে অঙ্গীকারহীন বাজারী তিথীর
বিলবোর্ডে মানবিক অমানবিক বিবরনের অট্রহাসী।
তুমি হেটে যাচ্ছ
তোমার বিপক্ষে ধোয়াশার তর্ক-বিদ্রপ
অনুযোগ, সবকিছু মৌনব্রতে ধ্যানস্থ, প্রতিয়মান । অথচ চন্দ্ররাতে
সেজেছো অদ্ভুত সমাহিত অসুন্দর।

মুদ্রণ প্রমাদে ভরা গ্রন্থমেলার সমালোচক ভঙ্গিটি ফিস্ফাস করে বলছে
অজস্র্ কথা, তোমার প্রসঙ্গে। অসম ভঙ্গিতে হেটে যাচ্ছ,
তোমাকে অনুসরন করছে
মনোবৈকল্য- জঞ্জাল স্তুপ।
গল্প কবিতা বিহিন প্রেমউদ্যানগুলো
তোমার পেছনে পেছনে যাচ্ছে নিঃসঙ্গ কয়েদীর মতো।
পিছু ফিরে চায় বিকেলের ম্লান
অহংবোধ ও পাপিষ্ঠের চিহ্নিত প্রনয়, জানান দিচ্ছে আলো।
কোনকিছু লুকোনো তোমার পক্ষে অসম্ভব।
সর্বশেষ লুকাবার চেষ্টা করছো অতীত কৌশলে প্রতিপক্ষকে
ধরাশায়ী করার অন্তর্নিহিত ধৃষ্টতায়। হেটে যাচ্ছ,
তোমাকে যেতেই হচ্ছে নগর পুরোনো শহর আর
অলিগলির স্তুপাকৃত জঞ্জাল বোঝা
কাঁধে চাপিয়ে পরিণামহীন,একা একা।

২৫.০২.২০১৮

পৃথক করেছিল

ভাঙ্গাঁ তরীর মাস্তুলে দুলছে অস্থির প্রহর
বিপরীত পাড়ে প্রস্ফুটিত পৃথিবীর সবাক স্বরূপ
মাটির অন্তরে- বৃক্ষপত্রে জল তরঙ্গের সমাহিত স্বপ্ন নূঁপুরে ধ্বনিত।

দশ দশটি আঙুলে ঋতু বদলের সাথে কুঁড়িয়েছি
অতলজলের শামুক ঝিনুকের রঙে
ধূলোর দীর্ঘশ্বাস, যাবতীয় দ্বীধা ও প্রণয়।

উপকুলে ছড়িয়ে থাকা
উজান স্রোত চিত্রিত ছিল প্রভাতী চুম্বনে
রাত্রির শিয়রে অন্ধকার শ্যাওলার বুকে
ফুঁটেছিল নির্ভার জোস্নাকালের সাহস।

হারিয়ে ফেলেছি, হারিয়েছি সেই সব
সঞ্চিত স্মৃতি-মৌনমিছিলের বেদনার্ত মুখচ্ছবি
মেঘের পালকে উড়ন্ত যতো নিন্দিত কাল।
সমুদ্রজল ভাসিয়েছে এপার ওপার।
খুঁজে ফিরছি পরস্পরের পৃথিবীকে, অনির্ণীত
দুঃখ বেলার অভিমানে কখনো যে আপন অথবা
করেছে পৃথক ভালবেসে,ভাল না বেসে।

২৪.০২.২০১৮
সম্পর্কের সারমর্ম-২

ঝরে পরা গোলাপ পাপড়ীগুলো
আমাদের শরীর ছিলো, ঘাসে ঘাসে ছড়ানো
স্বপ্নগুলো যৌথ অঙ্গীকারে ছিল শেকড়ে প্রথিত।
এখন ভাবতে পারিনা খুনসুটি করা যুগল পায়রার মতো
একই বৃন্তে পরস্পরের শরীর প্রস্ফুটিত হবে সৌরভে।
জীবন ছড়িয়ে দিয়েছিল রঙে, বিকশিত দিনরাত্রির উপমিত ফুলের বাহারে।

সেই মৌন মগ্নতা আমাদের ভেতরের নদীগুলোকে
পাখীগুলোকে যন্ত্রণাবিদ্ধ প্রহরগুলোকে তীরন্দাজের
নিশানায় পরিণত হতে দেবে আমরা ভাবতে পারিনি।
বিক্ষত মানুষেরা বুঝতে অক্ষম
দ্বৈত দ্বিধায় মনোবোধ রক্তাক্ত পাপড়ীর মতো
লুটিয়ে পরে ঘাসে নির্দয় চরণতলে আত্মহুতি দিতে বার বার।
প্রথিত শেকড়ের বিচূর্ন অনুভবগুলো শুধু
জানতে চায়, ফুলেরা স্বল্পায়ূ হয় কেন?

২৭.০২.২০১৮
একগুচ্ছ চাবির অহমিকা

চাবি নিয়ে ফিরে আসার পর
দরোজা খুলতেই হুরমুর করে ঘরে ঢুকে পরলো নৈঃশব্দ কোলাহল
দেয়ালে টাঙানো ছবি খান খান হয়ে ভেঙ্গে পরলো নির্জনতায়
প্রত্যাখ্যাত দেয়াল উঁচু হতে হতে ছাদ ফুঁড়ে আকাশ স্পর্শী হয়ে ছুটে গেলো
বিদ্রুপে একাকার ঝুলন্ত বারান্দার চন্দ্রগ্রাসে, সমাহিত হতে।

ঘরের চাবি ফিরিয়ে দিলে নির্বাসিত
যে নদীগুলো বহুদিন আগে ছেড়ে এসেছি, জলশূন্য করুনায়
উজানে ভেসে এলো – ডুবন্ত পাড়ে ভেসে এলো
পৃথকীকরণের ঢেউ, পাথর থেকে পাথর খসে পরার
মূহুর্তে দৃশ্যমান হলো পাহাড়ি ভাঙনের উৎসবে

সহজেই জেনে যাই কতো সামান্য ছিল
নির্জনে প্রথিত শেকড়, যখন উর্ধমুখি দেয়ালগুলো
ভাঙতে চাইছি, খসে পরছে পলেস্তরা ইটবালু ও সহমর্মী ছায়া
স্তব্ধতায় ভর করে ছুয়েছি নৈঃশব্দ প্রান্তরে, নদীদের পরাস্ত
ঢেউগুলো চিনতে চাইছি, ছুটন্ত অশ্বদল যেন কেশর দুলিয়ে
ছুটে যায় অচেনা অন্ধকারে।

নাগালের বাহিরে চলে যায় অপেক্ষমান জিজ্ঞাসা
ফিরে এসেছি, চাবি হাতে খুলেছি দরোজা জানালা দেরাজ
চন্দভূক ছায়ায় বিমূর্ত টুকরো টুকরো
অস্তিত্বগুলো নদীগুলো শব্দহীন তিরস্কারগুলো
তীরবিদ্ধ রাতের পাখির পালক দখলে নিতে চায় সমর্পিত অধিকার

তখন বুঝতে পারিনি, কেন ফিরে এসে
সবকিছু আগলে রেখেছি, এক নিচ্ছিদ্র প্রহরীর প্রতীক্ষায়।

০১.০.৩.২০১৮

একটি শব্দ দিয়ে

যখন জলরাশীর উপর ভেসে ছিল
বিস্তির্ন আধাঁর ও শূণ্যতার স্থিতিকাল
ছিল প্রণয় যা পৃথক করেছিল অন্ধকার গোলার্ধের উড়ন্ত ভাবনাকে।
হাত বাড়িয়ে স্পর্শ করেছি দিবস, অন্যহাতে রাত্রির গহিন পাপড়ী প্রদোষ।
আকাশের বাড়িয়েছি উর্ধবাহু মৃত্তিকায় রেখেছি পরান।

জনারণ্যে হারিয়ে যাওয়ার আসে বলেছিলে, ডেকে নিও।
শয়নের পূর্বক্ষণে বলেছিলে, রাত্রীশেষে জাগ্রত করে দিতে
যে রাত্রীগুলো ব্যপ্ত পরাণের তৃষ্ণায় অনিঃশেষীত উপকুলে দাড়িয়ে থাকে,
ফেরানো যায়নি তাকে, লক্ষীন্দরের ভেলায় ভেসেছে সে।
হারিয়ে যাবার কালে কীভাবে ফেরানো যায়, মতিভ্রম?
শূণ্যতার ব্যবচ্ছেদে কী ফললাভ হবে, পৃথকীকরনের?

অনির্নীত রাত্রির যাত্রীদের অন্তহীন দিবসের
বিপরীতে ভালবাসার একটি শব্দ দিয়ে ফেরানো সম্ভব,ঋতুসমূহকে?

০২.০৩.২০১৮

দরজা খুলিয়া দিও

ঘুমাইয়া পরার আগে
আমার কথা মনে করিও
তাহলে ঘুম আসিবেনা
আসিবে স্বপ্ন
দরজা খুলিয়া দিও।।

স্বপ্ন বসিবে হৃদয়ের স্থলে
ঘুম আসিবেনা উতলা হইয়া শোন
গাইয়ো তুমি
নিশিথ গ.. গান, চান্দেও তরী
পবনে উড়িয়াবসিবে পরানে
ভাঙ্গিঁবে উজান।

ঘুমাইয়া পরার আগে
মাঝির কথা মনে করিও
ঘুম আসিবেনা,আসিবে চেনাজানা
মানুষের ছায়াখান।

ছায়ায় ছায়ায় বসিবো দ’জনে
জলেভেজা হৃদয় বসে
ফের ভাসাইও সাম্পান।।

৭মার্চ ২০১৮

About the author

নরসুন্দা ডটকম