প্রকৃতি

ভুলবশত প্লাস্টিকখেকো এনজাইম তৈরি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা

নরসুন্দা ডটকম   এপ্রিল ১৯, ২০১৮
প্লাস্টিকখেকো এনজাইম

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের গবেষকরা ভুলবশত তৈরি করে ফেলেছেন এমন এক এনজাইম যা প্লাস্টিক খেয়ে ফেলতে পারে। বিজ্ঞানীদের আশা, ভুল করে তৈরি হওয়া এই এনজাইম হতে পারে বিশ্বজুড়ে বাড়তে থাকা প্লাস্টিক দূষণের সমাধান।

কয়েক বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব পোর্টসমাউথ এবং ইউএস এনার্জি ডিপার্টমেন্ট-এর ন্যাশনাল রিনিউয়েবল এনার্জি ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানীরা মিলে জাপানে আবিষ্কৃত একটি প্রাকৃতিক ব্যাক্টেরিয়া নিয়ে গবেষণা শুরু করেন।

ইডিওনেলা সাকাইয়েনসিস নামের ব্যাক্টেরিয়াটি বিশেষ ধরনের এক প্লাস্টিক বেশ দ্রুতগতিতে ক্ষয় করে খেয়ে ফেলে। পলিইথিলিন টেরেফথ্যালেট (পিইটি/পেট নামে পরিচিত) জাতীয় এই প্লাস্টিক প্লাস্টিক বোতল তৈরিতে ব্যাপক হারে ব্যবহৃত হয়।

জাপানি গবেষকদের ধারণা, ব্যাক্টেরিয়ার প্রজাতিটি খুব বেশিদিন আগে পৃথিবীতে আসেনি। কেননা প্লাস্টিক ১৯৪০-এর দশকের আগে আবিষ্কারই হয়নি। গবেষকদের উদ্দেশ্য ছিল ইডিওনেলা সাকাইয়েনসিসের দেহে থাকা পেটেজ (PETese) নামক বিশেষ এনজাইমের গঠন বিশ্লেষণের মাধ্যমে এর কাজ বোঝা।

কিন্তু তারা পরীক্ষা করতে গিয়ে এনজাইমটিতে পরিবর্তন এনে এমন এনজাইম তৈরি করে ফেললেন যা পিইটি প্লাস্টিকের অণু ভাঙ্গার কাজ আরও অনেক ভালোভাবে করতে পারে।

বিজ্ঞানীরা প্রথমে সূর্যের চেয়েও এক হাজার কোটি গুণ উজ্জ্বল অতি উচ্চ ক্ষমতার এক্স-রে ব্যবহার করে এনজাইমটির আল্ট্রা-হাই-রেজ্যুলেশনের একটি ত্রিমাত্রিক মডেল তৈরি করেন। ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ফ্লোরিডা এবং ব্রাজিলের ইউনিভার্সিটি অব ক্যাম্পিনাস-এর বিজ্ঞানীরা একটি কম্পিউটার মডেল তৈরি করে দেখলেন, পেটেজের গঠন অনেকটা ছত্রাক ও অন্যান্য ব্যাক্টিরিয়ায় থাকা কিউটিনেজ নামের আরেকটি এনজাইমের মতো।

শুধু পেটেজের একটা অংশ কিউটিনেজের থেকে আলাদা। গবেষকরা অনুমান করলেন, ওই অংশটাই সম্ভবত মানবসৃষ্ট প্লাস্টিক ক্ষয় করার কাজে ভূমিকা রাখছে। তাই পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তারা পেটেজের ওই ভিন্ন অংশটাকে মিউটেশনের মাধ্যমে আরও বেশি কিউটিনেজের মতো করার চেষ্টা করলেন। কিন্তু সেটা ভুলবশত কিউটিনেজের মতো না হয়ে আরও ভিন্ন হয়ে গেল; যার ফলে মিউট্যান্ট পেটেজ প্রাকৃতিক পেটেজের তুলনায় পিইটি বা পেট অণু ভাঙ্গার কাজে আরও বেশি সক্রিয় হয়ে উঠল।

প্রতি বছর পৃথিবী জুড়ে সাগর মহাসাগরে মোট ৮০ লাখ টনেরও বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য হিসেবে ফেলা হয়। এই বিষাক্ত বর্জ্য মানব স্বাস্থ্যের পাশাপাশি পরিবেশের জন্যও খুব ক্ষতিকর। কিন্তু রিসাইক্লিংয়ের নানাবিধ চেষ্টার পরও একে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না। বেশিরভাগ প্লাস্টিকই খোলা পরিবেশে শত শত বছর অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

তাই এই ক্ষতিকর বর্জ্যের পরিমাণ দিন দিন বাড়তে থাকায় আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিজ্ঞানী ও পরিবেশবিদরা। গবেষকরা জানিয়েছেন, তারা এখন নতুন এনজাইমটিকে আরও বেশি উন্নত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। আশা করছেন, শিগগিরই একে ব্যাপক পরিসরে উৎপাদন করা সম্ভব হবে এবং প্লাস্টিকের জৈব ধ্বংসের কাজে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা যাবে।

About the author

নরসুন্দা ডটকম