শিল্প- সংস্কৃতি

বিশ্বব্যাপী সমাদৃত ৬টি গোয়েন্দাভিত্তিক চলচ্চিত্র

নরসুন্দা ডটকম   এপ্রিল ২৬, ২০১৮
চলচ্চিত্র

গোয়েন্দা বা স্পাই– শব্দগুলো শুনলে চোখের সামনে ভেসে ওঠে বুদ্ধিদীপ্ত চেহারার ফিটফাট কোনো জোয়ান। প্রয়োজনে কখনো মারপিট, কখনো ছদ্মবেশ, কখনো বা বুদ্ধির মারপ্যাঁচে অপরাধীকে বের করা, আবার কখনো স্পেশাল কোনো মিশনে শত্রুদের মোকাবিলা করা- এভাবেই বিভিন্ন গোয়েন্দা চরিত্রদের রুপালী পর্দায় দেখে থাকি। আজ জানা যাক স্পাই বা গোয়েন্দাভিত্তিক ৬ টি বিখ্যাত চলচ্চিত্রের কথা।

১. স্কাইফল:  গোয়েন্দা মুভির কথা যখন হচ্ছে তখন ইয়ান ফ্লেমিং সৃষ্ট কালজয়ী চরিত্র জেমস বন্ডের কথা আসবে না? এটা অসম্ভব। ২০১২ সালে বিশ্বব্যাপী প্রায় ২ বিলিয়ন আয় করা এই বন্ড মুভির সবকিছুই যেন চোখ ধাঁধানো। আমেরিকান বিউটিখ্যাত অস্কারজয়ী পরিচালক স্যাম মেন্ডেস এ ছবির পরিচালক, অভিনেতা হিসেবে আছেন হাভিয়ার বাওদেম, র‍্যালফ ফিয়েন্স এর মত বিখ্যাতজনেরা আর বন্ড হিসেবে আছেন অনবদ্য ডেনিয়েল ক্রেইগ।

সাবেক এক এমআই৬ এর এজেন্ট সিলভা ব্রিটিশ স্পাই অর্গানাইজেশনের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে চায় তাকে অপমান করে বের করে দেওয়ায়। গুরুত্বপূর্ণ কিছু ডকুমেন্ট একটি চুরি যাওয়া হার্ড ড্রাইভে থাকায় সেটি হাতাতে চায় সিলভা। সিলভা কি পারবে? যেখানে সিলভাকে থামানো ও চুরি যাওয়া হার্ড ড্রাইভ খোঁজার দায়িত্ব বন্ডের কাঁধে। ধুন্ধুমার একশন ও গল্পের অসম্ভব উত্তেজনা, সাথে বুদ্ধির চাতুর্য- সব মিলিয়ে অন্যতম সেরা বন্ড মুভি ধরা হয় একে।

২. স্পাই গেম : কী নেই এই ছবিতে? শুধু সোনালী চুলের দুই সুপারস্টার, ইউনিভার্সাল পিকচার্সের বিখ্যাত ব্যানার আর নামকরা পরিচালক ছাড়াও আছে টান টান উত্তেজনার গল্প। ছবির গল্প দুই গোয়েন্দাকে নিয়ে। সিআইএ’র এক গোপন মিশনে গিয়ে চীনে বন্দি হন টম বিশপ। তাকে ছাড়িয়ে আনার জন্য মাঠে নামেন টমের গুরু নাথান মুর। নাথানের মিশনের সাথে সাথে ছবিতে দেখা যায় টম-নাথানের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, দুজনেরই ব্যক্তিজীবন আর সময়ের সাথে বাড়তে থাকা উত্তেজনা।

নাথান কি পেরেছিল টমকে উদ্ধার করতে? আনস্টপেবল, ট্রু রোমান্স, টপ গানখ্যাত পরিচালক টনি স্কটের ব্যবসায়িকভাবে অন্যতম সফল এই ছবিতে টম চরিত্রে ব্রাড পিট এবং নাথান চরিত্রে অভিনয় করেছে রবার্ট রেডফোর্ড। স্পাই অর্থাৎ এক গোয়েন্দাকে ছাড়াতে আরেক গোয়েন্দার মিশনকে নিয়ে গল্প গড়ে উঠলেও ছবিটি মূল উপজীব্য কিন্তু বন্ধুত্ব। ছবিটির পোস্টারে ট্যাগলাইনে ছিল, In the end, only friendship matters!

৩. দ্য বর্ন আইডেন্টিটি : গুড উইল হান্টিং- এই একটি চলচ্চিত্রে ঘুরে যায় দুজনের জীবনের মোড়। দুই বন্ধু বেন এফ্লেক আর ম্যট ডেমন ঐ একটি ছবির জন্য প্রথম ছবিতেই অস্কার জিতে শুধু ইতিহাসই গড়েননি, পরবর্তীতে যে হলিউডে প্রভাব রাখবেন সেই ইঙ্গিতও রেখেছিলেন। ম্যট ডেমনের নিজের প্রযোজনা ও অভিনীত স্পাই ফ্রাঞ্চাইজি ‘দ্য বর্ন’। এই সিরিজের প্রথম ছবি এটি। এক গুলিবিদ্ধ তরুণকে পাওয়া যায় সাগরে ভাসমান এক ট্রলারে।

তার মনে নেই তার অতীত। নিজের পরিচয় মনে না থাকলেও তার জানা আছে নিনজা স্টাইলে মারপিট, আমেরিকার ভিড় রাস্তায় বাইক ছোটানো আর অব্যর্থ নিশানায় গুলি ছোড়া। পুরো ছবিজুড়ে তার অজানা শত্রুদের থেকে নিজেকে বাঁচানো ছাড়াও খুঁজতে হয়েছে নিজে পরিচয়।

৪. মিঃ অ্যান্ড মিসেস স্মিথ : ব্র্যাড পিট আর এঞ্জেলিনা জোলি- সাবেক এই দম্পতির রোমান্স কবে থেকে শুরু যদি স্পায়িং করে বের করতে চান তবে যেতে হবে গোয়েন্দা মুভিতেই। ২০০৫ সালে বের হওয়া ‘মিস্টার এন্ড মিসেস স্মিথ’ ছবির কাজ করতে গিয়েই নাকি তারা একে অপরের প্রেমে পড়েন, এমনটা অবশ্য তারাই স্বীকার করেছিলেন। এই মুভিতে পিট এবং জোলির মারদাঙ্গা অ্যাকশন দৃশ্য তো আছেই, সাথে আছে টুইস্টে ভরা গল্প।

স্বাভাবিক এক দাম্পত্য জীবন পার করতে থাকা দুইজনই একসময় টের পায় তারা আসলে পরস্পরের শত্রু। কীভাবে শত্রু? আসলে তারা দুটি ভিন্ন সিক্রেট মিশনে থাকা স্পাই যাদের মিশন পরস্পরের বিপরীত। শেষ পর্যন্ত মিশনে কে জিতলো, নাকি জিতলো ভালবাসা- সেই টানটান উত্তেজনাকর গল্পটিই চোখ ধাঁধানো একশন ও অনবদ্য অভিনয়ে দেখানো হয়েছে এই ছবিতে।

৫. ট্রু লাইজ : নব্বইয়ের দশকের নামকরা স্পাই মুভি ‘ট্রু লাইজ’। অভিনয়ে যেমন আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার, লি কার্টিসের মতো বিখ্যাত নাম আছেন, পরিচালনায় আছেন তেমনি হলিঊডের নামজাদা পরিচালক জেমস ক্যামেরন। শোয়ার্জনেগারের দারুণ সব অ্যাকশন দৃশ্য, ক্যামেরনের স্বভাবসুলভ স্পেশাল ইফেক্ট, গল্পের বিচিত্রতা- সব মিলিয়ে দারুণ উপভোগ্য এই ছবিটি।

বাধ্য সংসারী মানুষটি জীবনের অনেকগুলো দিন কাটায় তার স্পাইয়ের পরিচয় গোপন রেখে। একসময় পরিবার ও অন্যত্র সে ধরা পড়ে যায় যখন তার স্ত্রীকে কিডন্যাপ করা হয়। স্ত্রী একসময় ছাড়া পায়, সাথে প্রকাশ পায় মিথ্যায় গড়া তার জীবন ও সংসারের অনেক কথা। বিয়েটাও যে তার মিশনের একটা অংশ ছিলো এটাও অজানা থাকেনা তার, এমনকি সিক্রেট এজেন্ট তার স্ত্রীর আসল পরিচয়ও।

৬. ফ্রম রাশিয়া উইদ লাভ : গোয়েন্দা মুভি নিয়ে আলোচনা করতে গেলে বন্ড মুভির নামই বারবার আসবে। এমনই এক ছবি ফ্রম রাশিয়া উইদ লাভ। ৬০ এর দশকের অন্যতম ব্যবসাসফল এই ছবি সেই সময়ই আয় করেছিলো প্রায় ৮০ মিলিয়ন ডলার। বন্ড চরিত্রে অভিনয় করেছিলো বিখ্যাত শন কনারি।

তুর্কিতে অবস্থানরত এক রাশিয়ান রাষ্ট্রদূতকে মারার মিশনে গিয়ে বন্ড সম্মুখীন হয় তার অনেকগুলো পূর্বশত্রুদের সাথে। এর মধ্যে কেউ চায় তাকে হত্যা করতে, কেউ চায় তাকে থামাতে আর কেউ বা তার থেকে তথ্য চায়। বন্ড একা কি সব সামাল দিতে পারবেন? রক্ত গরম করা সব অ্যাকশন আর কাহিনীর মারপ্যাঁচে দারুণ উপভোগ্য এই বন্ড ছবিটি। বিশ্বব্যাপী দর্শক তো বটেই বিভিন্ন সমালোচকদেরও রেটিং তো তাই জানান দেয়!

About the author

নরসুন্দা ডটকম