দেশ-বিদেশ

ইমরান খান : পাকিস্তানের ২২ তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত

নরসুন্দা ডটকম   আগস্ট ১৭, ২০১৮

পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির নবনির্বাচিত প্রতিনিধিরা ভোটাভুটির মাধ্যমে বেছে নিলেন সে দেশের প্রধানমন্ত্রী তথা ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির পরবর্তী নেতাকে। প্রত্যাশিত ভাবেই  ভোটাভুটিতে জিতলেন পাকিস্তান তেহরিক ই-ইনসাফ (পিটিআই)-এর নেতা ইমরান খান।

যদিও ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির নেতা হওয়ার জন্য মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন দু’জন। তাঁরা হলেন পিটিআই-এর নেতা ইমরান খান এবং পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন)-এর প্রেসিডেন্ট শাহবাজ শরিফ

শুক্রবার বেলা সাড়ে তিনটে নাগাদ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে নব নির্বাচিত প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছিল। তার পরই শুরু হয় ভোটাভুটি। ৩৪২ আসনের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির ১৭২ হল ম্যাজিক ফিগার। সংরক্ষিত আসন নিয়ে ইমরান খানের দল পিটিআই দখলেই ছিল ১৫৮ আসন। ছোট দলগুলির সাহায্যে শেষ পর্যন্ত ১৭৬ ভোট ইমরানের পক্ষে যায়। বিরোধী প্রার্থী শাহবাজ শরিফ পান মাত্র ৯৬ ভোট।

সবকিছু ঠিক থাকলে শনিবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন ইমরান খান।

পাকিস্তানের ২২ তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত ইমরান খান

রাজনীতিবিদ ইমরান ……

১৯৯৬ সালে জাস্টিস মুভমেন্ট নামে একটি দল গঠন করেন ইমরান। অনেক দিন চেষ্টা করলেও রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে পারেননি তিনি। পার্লামেন্টে কোনও আসন পায়নি দলটি। এমনকি একটা সময় ইমরান উপহাসের পাত্রে পরিণত হন। নওয়াজ শরিফের দল মুসলিম লিগ ও ভুট্টো পরিবারের পাকিস্তান পিপলস পার্টি তখন সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী। সারাদেশ জুড়ে তখন তাদের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত। প্রথম আসন পেতে ইমরানকে অপেক্ষা করতে হয় ২০০২ সাল পর্যন্ত। নিজ দলের হয়ে ইমরানই একমাত্র আসনে জয় পান। আর ২০০৮ সালের নির্বাচনই বয়কট করেন।

সারা বিশ্বের কাছে পাকিস্তানের অত্যন্ত পরিচিত মুখ হলেও অনেকদিনই তিনি সাফল্য থেকে অনেক দূরে ছিলেন। ২০১৩ সালেই তিনি শক্তভাবে প্রথম নিজের অবস্থান জানান দেন। তখন দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে কয়েকটি আসন দূরে ছিলেন মাত্র। আর এর পাঁচ বছর পর এবার ২০ কোটি জনসংখ্যার পরমাণু শক্তিধর এই দেশটির দায়িত্ব ন্যস্ত হতে যাচ্ছে তার কাঁধে।

পাকিস্তানে ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে সরব ছিলেন ইমরান। এর প্রতিবাদে অনশন কর্মসূচি করায় জেলেও জেতে হয় তাকে। লাহোরে একটি ছাত্রদের র‍্যালিতে কট্টরপন্থীরা তাকে আটক করে পুলিশের কাছে তুলে দেন। সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা হয় তার বিরুদ্ধে। ইমরান উদারপন্থাকে প্রতিষ্ঠা করতে চাইলেও একই সময়ে ইসলামিক মূল্যবোধ বজায় রাখতে চান। বরাবরই পশ্চিমাবিরোধী অবস্থানের কথাও ব্যক্ত করেছেন তিনি।

বিশেষ করে পাকিস্তানে মার্কিন ড্রোন হামলার ঘোর বিরোধী তিনি। বারবারই বলেছেন, ক্ষমতায় এলে মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত করবেন। তালেবানের বিরোধিতা করলেও তার শাসনে থাকা খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে ‘তালেবানের জনক’ খ্যাত মাওলানা সামিউল হকের মাদ্রাসায় ৩০ লাখ ডলার অনুদান দেন তিনি।

তবে ইমরান রাজনীতিবিদ হিসেবে জনপ্রিয় হয়েছেন মূলত তার দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানের কারণে। বারবারই তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন, প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আর সেটাই দুর্নীতিতে জর্জরিত পাকিস্তানি তরুণদের পছন্দের প্রার্থীতে পরিণত করেছে। তবে মানবাধিকার কর্মী ও ইমরান খানের প্রতিদ্বন্দ্বীদের দাবি, পাকিস্তানের রাজনীতিতে সেনা হস্তক্ষেপ রয়েছে। প্রভাব রয়েছে সংবাদমাধ্যমের ওপরও। কিছুদিন আগেই তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এক বছর আগেই তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছিল। ধারণা করা হয়, এসব কিছুই আসলে সামরিক চাপেই হয়েছে। নওয়াজ শরিফের দলের অনেক নেতাই এই রোষানলে পড়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনী নওয়াজের দলকে নেতৃত্বহীন করে ইমরানকে ক্ষমতায় আনতে চেয়েছে। সূত্র: বিবিসি, ডয়চে ভেলে, দ্য গার্ডিয়ান , বাংলাট্রিবিউন ও আনন্দবাজার পত্রিকা।

অারো পড়ুন..

অটলবিহারী বাজপেয়ী : ভারতের সংসদীয় গণতন্ত্রের এক আদর্শ রাজনীতিক

বঙ্গবন্ধুই আমাকে শিখিয়েছেন জনগণের কাছে যাওয়ার মাহাত্ম্য- মো. আবদুল হামিদ

About the author

নরসুন্দা ডটকম