গৌতম অধিকারী >>
পার্থপ্রতিম বন্দ্যোপাধ্যায় নৈহাটি ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র কলেজের ইতিহাসের অধ্যাপক। কিন্তু আমাদের ছাত্রাবস্থাতে তাঁকে আমরা তাঁর অগ্রজ সরোজ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপকই ভাবতাম। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার প্রয়োজনে তখন পড়েছি ‘উপন্যাস সমাজত্ত্ব’, ‘সমরেশ বসু : সময়ের চিহ্ন’ , ‘অন্তর্বয়ন : কথাসাহিত্য’, ‘উপন্যাস রাজনৈতিক’ , ‘উপন্যাস রাজনৈতিক : বিভূতিভূষণ’ — এইসব বইগুলো। প্রথাগত রেফারেন্স এগুলো নয়। আমাদের ছাত্রাবস্থায় যে প্রশ্নপত্রের সংকলন বেরুত, সেখানে বিভিন্ন বিষয়ের নানা রেফারেন্স বইয়ের নাম থাকতো।
কিন্তু এগুলোর নাম ছিল না। কেননা, এগুলোর এ্যাপ্রোচ আলাদা। অন্যরকমের একটা স্বাদ মূল্যায়নে পাওয়া যেত। ফলে পার্থদার আগে তার বইগুলোর সঙ্গে আমার পরিচয় ঘটে যায়।
আরো পড়তে পারেন…
নির্জনে নিজন : নিজন দে চৌধুরীর কবিতা
এই পার্থদার সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ আমার ১৯৯৭-৯৮ সালে। র্যাডিক্যাল ইম্প্রেশনের ঘরে বসে আছি, পার্থদা ঢুকলেন। কথাবার্তার ফাঁকে অরুণদা ( অরুণ দে ) আলাপ করিয়ে দিলেন। আমার তো বিষ্ময়ে চুপচাপ। পার্থদাই কথা এগিয়ে নিয়ে গেলেন।
‘দিবারাত্রির কাব্য’ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত থাকার সুবাদে তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়লো। একাধিক দিন পার্থদার নৈহাটির বাড়িতে ‘দিবারাত্রির কাব্য’ – এর সভা হয়েছে। এই সম্পর্কটা আরও বেশি সম্প্রসারিত হলো ২০০০ সালে। পুরনো চাকরি ছেড়ে দিয়ে সরকারি স্কুলের চাকরিতে ঢুকি এই বছর। আমার প্রথম কর্মক্ষেত্র হুগলি মাদ্রাসা। নৈহাটি স্টেশন থেকে লঞ্চঘাট যেতে হয় পার্থদার বাড়ির সামনে দিয়ে। বহুদিন পথে দেখা হয়। জোর করে বাড়িতে নিয়ে যান। বিশেষত বিকেলে ফেরার সময়। এরপর এমন হয়ে গেল, প্রায়শই আমি নিজেই চলে যেতাম।
২০০২ সালে বের করি ‘কথারূপ’। পার্থদাকে লিখতে বললাম। সুলেখা সান্যালের ‘দেওয়াল পদ্ম’ উপন্যাস নিয়ে লিখলেন। কিন্তু ৪ ডিসেম্বর যখন ‘কথারূপ’-এর সুলেখা সান্যাল সংখ্যা বেরুলো, বাংলা আকাদেমির জীবনানন্দ সভাঘরে পার্থদা যাননি। কলকাতা নিয়ে একটা অভিমান তখনই টের পেয়েছি। ‘কথারূপ’-এর প্রায় সব সংখ্যায় পার্থদা লিখেছেন।
ননী ভৌমিক সংখ্যা-১ এ পার্থদাকে লিখতে বলিনি। খুব অভিমান হয়েছিল। ননী ভৌমিক সংখ্যা-২ তে লিখলেন ধুলোমাটি উপন্যাস সম্পর্কে। স্বর্ণকমল ভট্টাচার্য সংখ্যার জন্য ছোটোগল্প সম্পর্কে আলোচনা লিখে পাঠিয়ে দিলেন। সংখ্যাটি দেরি হচ্ছে বলে স্বর্ণকমল ভট্টাচার্যের ‘গল্প সংগ্রহ’ ভূমিকা হিসেবে ছাপতে চাইলাম। তাই হলো। ২০১৫-র পর নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলাম। পার্থদার সঙ্গে কেন, অনেকের সঙ্গেই যোগাযোগ ছিল না। ২০১৭-তে ‘গল্পদেশ’ বেরুনোর পর পত্রিকা নিয়ে গেলাম। ইতোমধ্যে সরোজ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রয়াত। পার্থদা একটু যেন ভেঙে পড়েছেন। তবুও ‘গল্পদেশ’ দেখে খুশি। প্রথম সংখ্যা নিয়ে যাবার কথা ভাবছি যখন, তখনই চলে গেলেন বাংলা কথাসাহিত্য, চলচ্চিত্র আলোচনার এই অন্যধরণের বিশ্লেষক মানুষটি, যিনি সারাজীবন লিটল ম্যাগাজিনেই লিখে গেছেন।
গৌতম অধিকারী : কবি, লেখক ও সম্পাদক। কলকাতা, ভারত।।