।। তোমার মত তোমাকে ।।
যেতে যেতে তোমাকে ছেড়ে অনেকদুর
চলে এসেছি প্রিয়তমা।
দুপুর গড়িয়েছে চলো!
বলেই আবার চলতে শুরু করেছিলে।
এই নির্জনে হাতে হাত রেখে চলবো দুজন
এই আনন্দে ঘর ছেড়ে বেড়িয়েছিলাম পথে।
কিন্তু কোথায় তুমি!
ভেবেছিলাম এই পাহাড় ডিঙ্গিয়ে গোধূলি
বেলাতেই পৌঁছে যেতে চাও স্বপ্নের দ্বীপে।
তাইতো দ্রুত পায়েই পাহাড় কে মাড়িয়ে
চলে এলাম সাগর তীরে।
ইচ্ছা ছিল-
ভালোবাসার ডিঙ্গিতে চড়ে সাহসের বৈঠায়
উত্তাল সাগরের বুক চিড়ে পৌঁছে যাবো
সবুজে ঘেরা আমাদের স্বপ্নের দ্বীপ রাজ্যে।
অসংখ্য প্রজাপতির ঝাক রঙিন পাখা মেলে
অভিবাদন জানাবে তাদের দ্বীপের রানীকে।
অন্ধকারে ঘেরা রাজ প্রাসাদটি আলোকিত
হয়ে উঠবে নিমিষেই।
আজ ভরা পূর্ণিমা
এই দ্বীপে তুমি আর আমি ছাড়া কেউ নেই।
ভাবছি একা সাগর তীরে সুখের সেই কবিতা।
পথে ঝরনা দেখে প্রেমে পড়ে গেলে
সাগর ছেড়ে এখন পাহাড়েই থাকতে চাও বুঝি!
পাহাড়ের গায়ে হেলান দিয়ে কবিতা শুনছো তুমি
আর আমি উত্তাল সাগরের বুক থেকে ছুটে আসা
কষ্টের ঢেউ এর সাথে নিজেকে মানিয়ে নিচ্ছি।
তোলপাড় করা সাগরের গর্জনকে মনে হয়ে
আমারই বুক চিড়ে বেরিয়ে আসা দীর্ঘশ্বাস।
সেই দ্বীপে আমি আর যেতে পারিনি।
অনেক ঝড়, জলোচ্ছ্বাস এর সাথে যুদ্ধ করেই
ফিরে এসেছিলাম।
ভাবছি আবার বেরিয়ে পড়বো পথে
কলম্বাসের মত ভুল করে হলেও
আবার একটা তোমাকে আবিষ্কার করতে চাই।
না তোমাকে নয়!
তোমার মত তোমাকে।
…………………………………………………………..
।। অপেক্ষা ।।
.হয়তো একদিন ঝরে যাবে বৃষ্টি মুশলধারায়
বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে চলবে আমার অপেক্ষা।
গ্রীষ্মের এক দুপুরে মেঘহীন আকাশে তেজ
দীপ্ত সূর্য এসে দাঁড়াবে ঠিক মাথার উপর
তৃষ্ণায় কাতর বুকটা হাহাকার করে উঠবে
তবুও শেষ হবে না তোমার জন্য অপেক্ষা।
শীতের ভোরে সূর্যের আলোয় ঘাসের ডগায়
শিশির বিন্দু যেমন চিকচিক করে
তেমনি করে জমবে শিশির চোখের পাতায়
তবু আমার অপেক্ষা শেষ হবেনা।
কোন এক সন্ধ্যায় কাল বৈশাখী ঝড় এসে
ভেঙ্গেচুরে সব তছনছ করে দিয়ে যাবে
ধ্বংসস্তুপের মাঝেও শুধু তোমার জন্য
অপেক্ষায় থাকবো দাঁড়িয়ে।
শরতের এক বিকালে নরম শুভ্র কাশফুলের
ছোঁয়ার মত কোমল বাতাস এসে ছুঁয়ে যাবে
ক্ষতবিক্ষত হৃদয়ে আমার
শুধু তোমার জন্য অপেক্ষা তখনো চলবেই।
এক ভরা পূর্ণিমার রাতে রূপালি চাঁদ
তার মোহনীয় রূপে পাগল করবে ঠিকই,
জ্যোৎস্নায় ভিজে মাতাল এ মন তখনো
তোমার উষ্ণতাই খুঁজবে শুধু।
অপেক্ষার এ ক্ষণ ঘুচিয়ে এসো তবে প্রিয়তমা
নিবিড় আলিঙ্গনে মেতে উঠি ভরা পূর্ণিমায়।
চুম্বনে চুম্বনে বধির এ কবি প্রাণ ফিরে পাক
শুধু তোমার ভালোবাসার উষ্ণতায়।
…………………………………………………..
।। গোলাপ কলির মহাবিস্ফোরনে ।।
সবই চলছিলো ঠিক ঠাক যেমন চলে।
আনন্দ হাসি গানে মুখর ছিলো ঘরখানা
যেন অনেক যত্নে গড়া একটা ফুল বাগান।
সংসার সমরাঙ্গনে হঠাৎ বিস্ফোরণ
নিমিষেই ভস্মিভুত সাজানো বাগান খানি।
নির্বাক নিষ্পলক চোখ চেয়ে রইল
ছাই চাপা বাস্তুভিটার দিকে।
পোষা কুকুরটা একটানা চিৎকার করলো
প্রভুর বাস্তুভিটার সামনে।
হু হু করে উঠলো বুকের ভিতর,
দীর্ঘশ্বাসে ভস্মগুলো উড়ে উঠলো
আর কিছু মনে নেই।
ওদিকে আর যাওয়া হয়নি অনেকদিন।
পরিত্যক্তই ছিলো হৃদয়ের জমিন খানা।
স্রোতস্বিনী চোখের নদীতে পলি বয়ে এলো।
আগুনে পোড়া তামাটে হৃদয়ভূমিতে
পলি পড়ে আজ ফসল ফলার মত উর্বর।
বেশি কষ্ট করতে হবে না তোমার
বীজ বপনে লকলকে সবুজ লতাপাতা
নিমিষেই ছড়িয়ে পড়বে চারিদিক।
গোলাপের পাপড়ি তোমার ঠোঁটে
রঙিন প্রজাপতি নাচতে থাকবে অবিরাম।
রণেভঙ্গ সমরাঙ্গনে আবার সাজ সাজ রব।
যুদ্ধযাত্রা শুরু হবে এবার নতুন বাগানে
গোলাপ কলির মহাবিস্ফোরণে।
সোহেল খান : কবি, সংগঠক ও নাট্যকর্মী । প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ “তন্দ্রমনি”- ২০১৮।।