ফিচার

করোনা ভাইরাসঃ যাদের ঘরে থাকারও কোনো উপায় নেই

নরসুন্দা ডটকম   এপ্রিল ১০, ২০২০
করোনা ভাইরাসঃ যাদের ঘরে থাকারও কোনো উপায় নেই
করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় বারবার বলা হচ্ছে ঘরে থাকতে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে। কেননা সেটাই করোনা মহামারিকে মোকাবিলার একমাত্র উপায়।সমগ্র পৃথিবী জুড়েই এর প্রতিষেধক খোঁজার পালা চলছে।
কিন্ত এখনও তার খোঁজ মেলেনি। কিন্ত সবাই কি বাড়িতে থাকতে পারছে? ঘরে পারছে থাকতে? পারছে না। না আমি চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ, ব্যাঙ্ককর্মী, সাংবাদিক তাদের নিয়ে বলছি না। তারা এই যুদ্ধে একেবারে সম্মুখ সমরে। বলছি নানান সামাজিক ও মানবিক সংগঠন গুলির কথা।প্রশাসন, সরকার, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশ তবুও তারা ঘরে থাকতে পারছেন না।কিন্ত কেন? আসুন দেখে নেওয়া যাক।
কবির কথায় ‘
মানুষ বড় কাঁদছে
তুমি মানুষের পাশে এসে দাঁড়াও
এসে দাঁড়াও ভেসে দাঁড়াও
এবং ভালবেসে দাঁড়াও।
এই সময় যারা ভবঘুরে, সহায়সম্বলহীন।চাল চুলো নেই। খাবার ঠিক নেই। অথচ দেখা যেত বালুরঘাট শহরেরই আশেপাশে।থানা মোড়ে, বিশ্বাস পাড়ায়, বাসস্ট্যান্ড, বেসরকারী ব্যাঙ্কের জেনারেটরের পিছনে এবং আরও অনেক জায়গায়।এদের কাছে দুপুরের ও রাতের খাবার পৌঁছে দেওয়ার গুরুত্বপূর্ণ কাজ দীর্ঘদিন ধরে করছিল অণ্ণপূর্ণার হেঁসেল এবং স্ব।কিন্ত এই ভয়ংকর লকডাউনের বিশেষ অবস্থায় কি হবে ওদের? কিভাবেই বা খাবে ওরা।যখন রাস্তায় বের হওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আছে। কে পৌছাবে ওদের কাছে দুপুর ও রাতের খাবার।থাকবে কোথায় ওরা?
এই ভয়ংকর পরিস্থিতিতে সহৃদয় হয়ে এগিয়ে এল বালুরঘাট পৌরসভা, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পুলিশ এবং দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা প্রশাসন।বালুরঘাট বাসস্ট্যান্ডের কাছে পৌরসভা সুবর্ণা ভবনে শহরের সমস্ত ভবঘুরে অসহায়দের থাকা এবং দুপুর ও রাতের খাবারের ব্যবস্থা করলো তারা।সঙ্গে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল মানুষ হয়ে পাশে দাঁড়াও, অন্নপূর্ণার হেঁসেল, স্ব।
আশরাফ, বাসন্তী, মদন, লম্বু দা( টফি), পাগলি মাসি, মোটা মাসি, ব্যাঙ্গা- বেঙ্গি এইসব নামেই চিনতো অনেকে।হয়তো ওদের অন্য কোন নাম ছিল।পরিবার ছিল। আজ ওরা একা।পরিবার-পরিজন ছেড়ে চলে গিয়েছে বা দেখে না।ওদের সেই অর্থে কেউ নেই। কে বলেছে কেউ নেই? তাইতো যারা মানসিক বৈকল্যের জন্য সুবর্ণা ভবনে সরকারী ব্যবস্থাপনায় আসতে অপারগ তাদের কাছে দুবেলা খাবার পৌছে দিচ্ছে রীতেশ, দেবাঞ্জন, নেপাল, মিষ্টু,বিমান, ললিত, রাহুল,নীলাদ্রি,দুই সঞ্জয় সহ প্রমুখেরা আগের মতোই।কোন ক্লান্তি নেই।কষ্ট নেই।এইসময় মানুষ বড় কাঁদছে।তাই মানুষ হয়ে পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা।
কোনদিন ডিম ভাত, কোনদিন খিচুড়ি, কোনওদিন সয়াবিনের তরকারী সহ দুপুর ও রাতের কাবার। বালুরঘাটের পাশে মামনা থেকে আসে মৃণাল ঠিক দুপুর বারটা ও আটটায়। তৃপ্তি করে খায় প্রতিদিন।রাতে আবার আসবে তো? জিজ্ঞেস করলেই মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলে।
একত্রিশ মার্চ রাত থেকে শুরু হওয়া এই মানবিক উদ্যোগে উপস্থিত ছিলেন বালুরঘাট পৌরসভার প্রশাসক তথা সদর মহকুমাশাসক বিশ্বরঞ্জন মূখার্জী এবং ডি এস পি( হেড কোয়ার্টার) ধীমান মৈত্র।শুরুর দিনেই পরিষ্কার করে এই ভাবনা ও কিভাবে তার বাস্তবায়ন হবে তা নিয়ে ইতিবাচক চিন্তাভাবনা ব্যক্ত করেছিলেন তারা। করোনা ভাইরাসের মৌকাবিলাতেও বারবার দেখা গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রীর মানবিক রূপের কথা। বালুরঘাটেও পৌরসভা, প্রশাসনের সাথে মানুষের জন্য অক্লান্ত স্ব, অন্নপূর্ণার হেঁসেল, মানুষ হয়ে পাশে দাঁড়াও, মানুষ বড় কাঁদছের সদস্য, সদস্যরা।
বালুরঘাটের অদূরেই রয়েছে পতিরাম নাগরিক ও যুব সমাজ।বছরের বিভিন্ন সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়ায় তারা। এই করোনার সময়তেও ঘরে বসে নেই তারা। কারণ উপায় নেই। অভুক্ত মানুষ, অসহায় পথপশু তাদের সবার কাছে খাবার পৌছাচ্ছেন তারা- জানালেন কনভেনর বিশ্বজিত প্রামাণিক।
এই করোনা ভাইরাসের কঠিন সময়ে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে বয়স্ক ও বয়স্কাদের ওষুধের। তাদের বাড়ি বাড়ি ওষুধ পৌছে দিচ্ছেন স্বর্নায়ু মৈত্র, রুপকার্থ মজুমদার প্রমুখরা। উপরোক্ত সবাই কাজ করছে প্রশাসনিক ও স্বাস্থ্য নির্দেশিকা নিয়ে। এইসময় মানুষ বড় কাঁদছে। তাই মানুষের পাশে এসে ভালবেসে দাঁড়ানো বড় প্রয়োজন।এটাই এখন সবচাইতে আগে প্রয়োজন।
আরো পড়ুন…

About the author

নরসুন্দা ডটকম