দেশ-বিদেশ

কৃষি মজুর থেকে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী একজন রাষ্ট্রনেতা, কে জানেন?

নরসুন্দা ডটকম   অক্টোবর ১৮, ২০১৭

এই সময়ের বিশ্বনেতাদের মধ্যে এমনকি কেউ আছেন যিনি ক্ষেতে কৃষি মজুর হিসেবে কাজ করেছেন কিংবা গুহায় থেকেছেন? চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সম্ভবত এক্ষেত্রে একমাত্র ব্যতিক্রম।

পাঁচ দশক আগে চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের তুমুল হট্টগোলের সময় পনের বছর বয়সী শি জিনপিং এক প্রত্যন্ত গ্রামে কঠিন জীবন যাপন করতেন। তিনি চীনের যে অঞ্চলটিতে তখন কৃষি খামারে কাজ করেছেন, সেটি ছিল গৃহযুদ্ধের সময় কমিউনিস্টদের শক্ত ঘাঁটি। ইয়ানানকে তখন বলা হয় চীনা বিপ্লবের ‘পবিত্র ভূমি‘।

শি জিনপিং-কে ঘিরে এখন চীনে যে ‘মিথ’ বা লোকগাঁথা তৈরি করা হচ্ছে, সেখানে তাঁর অতীতের এই কষ্টের জীবনের নানা গল্প গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হচ্ছে।

কিন্তু শি জিনপিং কি আসলেই এরকম অতি সাধারণ পটভূমি থেকে উঠে এসেছেন?

সমালোচকরা বলছেন, মোটেই নয়। তিনি হচ্ছেন চীনের ‘প্রিন্সলিং’ প্রজন্মের একজন। কমিউনিস্ট পার্টির উচ্চপদে আসীন ছিলেন এমন নেতাদের সুবিধাভোগী সন্তানদের ‘প্রিন্সলিং’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়।

কোদাল হাতে মাঠে কাজ করতে চলেছেন তরুণ শি জিনপিং। ছবি: বিবিসি বাংলা।

শি জিনপিং যে চীনের প্রভাবশালী এক কমিউনিস্ট নেতার সন্তান হিসেবে এক সময় অনেক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছেন, সেটাকে আড়াল করে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় তাঁর কষ্টসাধ্য জীবনের ছবিকেই তুলে ধরার সযত্ন চেষ্টা দেখা যায় চীনে।

১৯৬৮ সালে চীনের নেতা মাও জেদং ঘোষণা করেন যে হাজার হাজার তরুণকে গ্রামে গিয়ে কৃষকদের কষ্টসাধ্য জীবনের অভিজ্ঞতা নিতে হবে।

সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সেই উত্তাল সময়ে সব কিছুই চলছিল চেয়ারম্যান মাও এর ‘লাল বই’ অনুযায়ী।

শি জিনপিং এর বাবা ছিলেন চীনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম প্রজন্মের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের একজন। কমিউনিস্ট বিপ্লবের পর তিনি বেড়ে উঠেছেন বেইজিং এ কমিউনিস্ট নেতাদের জন্য তৈরি সুরক্ষিত আবাসিক কমপ্লেক্সে।

কিন্তু ষাটের দশকে চেয়ারম্যান মাও যখন দলের মধ্যে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন, তার শিকার হন শি জিনপিং এর বাবা। তাঁকে জেলে পাঠানো হয়, তাঁর পরিবারকে নানাভাবে হেনস্তা করা হয়।১৩ বছর বয়সে শি জিনপিং এর স্কুল শিক্ষায় ছেদ পড়লো। বেইজিং এর রাস্তায় তখন রেড গার্ডদের দাপট। তারা রাস্তা-ঘাটেই যে কাউকে ধরে এনে বিচার বসাচ্ছে, সাজা দিচ্ছে। এই রেডগার্ডদের কবল থেকে শি জিনপিং-কে রক্ষার কেউ নেই। সেটা ছিল তার জন্য দুঃসময়।

কিন্তু শি জিনপিং এর জন্য আবার সুসময় ফিরে এসেছিল, যখন তাঁর বাবা আবার কমিউনিস্ট পার্টিতে পুনর্বাসিত হন। হংকং এর উল্টো পাশেই গুয়াংডং প্রদেশে বিরাট দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয় তাকে। শি জিন পিং এর বয়স তখন ২৫।

বাবার সুবাদে শি জিন পিং পার্টিতে খুব দ্রুত উন্নতি করতে থাকেন। এক সময় গড়ে তোলেন নিজের ক্ষমতা বলয়।সত্তরের দশকের শেষার্ধে তিনি ছিলেন পিপলস লিবারেশন আর্মির একজন অফিসার।

তারপর বিভিন্ন প্রদেশে পার্টির বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। ধীরে ধীরে পার্টির উপরের দিকে উঠতে থাকেন তিনি। তার প্রথম স্ত্রী ছিলেন একজন কূটনীতিকের কন্যা। কিন্তু সেই বিয়ে টেকেনি।

এরপর তিনি যখন চীনের সুপরিচিত এক সঙ্গীত শিল্পীকে বিয়ে করেন, সেটি বেশ প্রচার পেয়েছিল। তখন অবশ্য শি জিনপিং কে কেউ চিনতো না। একটি মজার রসিকতাও ছড়িয়ে পড়েছিল সে সময়।

শি জিনপিং কে? উত্তর: তিনি পেং লিউয়ানের স্বামী।”

পেং লিউয়ান এখনো শি জিনপিং এর স্ত্রী। তার নাম চীনের বাইরে খুব কম মানুষই জানেন।

কিন্তু শি জিন পিং এর নাম জানে এখন গোটা বিশ্ব। বলা হচ্ছে, তিনি এই মূহুর্তে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী একজন রাষ্ট্রনেতা। সূত্র: বিবিসি বাংলা।

 

About the author

নরসুন্দা ডটকম