ফিচার

ভারতে পুরোহিত পাত্রকে বিয়ে করলে ৩ লক্ষ রুপি উপহার

নরসুন্দা ডটকম   অক্টোবর ২১, ২০১৭

দক্ষিণ ভারতের নতুন রাজ্য তেলেঙ্গানার কয়েক হাজার ব্রাহ্মণ পুরোহিত বিয়ে করতে পারছেন না। মেয়েদের নাকি পুরোহিত স্বামী পছন্দ নয়!

সে রাজ্যের সরকার খতিয়ে দেখেছে যে ব্রাহ্মণ পুরোহিতদের নিশ্চিত আর মোটা টাকা রোজগার নেই – তাই মেয়েরা পছন্দের তালিকা থেকে এদের সরিয়ে রেখে আমেরিকাবাসী বা সফটওয়্যার কোম্পানিতে কর্মরত অথবা সাধারণ কর্মচারীকেও বিয়ে করতে রাজী হয়ে যাচ্ছেন।

রাজ্যের নারীদের তাই পুরোহিত বিয়ে করতে উৎসাহ দেওয়ার জন্য তিন লক্ষ রুপি সহায়তার কথা জানিয়েছে তেলেঙ্গানার সরকার।

তেলেঙ্গানা ব্রাহ্মণ উন্নয়ন পরিষদের অন্যতম সদস্য অবধানুলা নরসিমহা শর্মা বলছিলেন সে রাজ্যের পুরোহিতদের কেন বিয়ে হচ্ছে না।

মি. নরসিমহা শর্মার কথায়, “এ যুগের নারীদের পছন্দের তালিকায় আমেরিকা, সিঙ্গাপুর বা ঘরের কাছে ব্যাঙ্গালোর, চেন্নাই বা হায়দ্রাবাদে কর্মরত ছেলেরাই থাকে। তাই বিয়ের বাজারে পুরোহিতদের এখন আর কেউ দাম দেয় না। মোটামুটি ভাল রোজগার থাকলেও পুরোহিতদের রোজগার তো আর মাস মাইনের মতো নয়!”

তিনি জানাচ্ছিলেন যে এমনও ঘটনা আছে, যেখানে ব্রাহ্মণ পুরোহিতের পরিবার বিয়ের সমস্ত খরচ বহন করতে চেয়েছে তা স্বত্ত্বেও মেয়ের পরিবার বিয়ে দিতে রাজী হয় নি।

তেলেঙ্গানা রাজ্যে ৩১টি জেলা রয়েছে। গড়ে প্রতিটি জেলায় হাজার তিরিশেক বিবাহযোগ্য ব্রাহ্মণ পুরোহিত আছেন।

মি. শর্মা নিজেও একজন পুরোহিত। তার নিজেরও দুই কন্যা আছে। নিজের মেয়েদেরও তিনি পুরোহিতের সঙ্গে বিয়ে দিতে চান না।

নরসিমহা শর্মা বলছিলেন, “দুই মেয়ের মধ্যে একজনের বিয়ে যদি তিনি আমেরিকাবাসী কোনও পাত্রের সঙ্গে দেন, আর অন্যজনকে পুরোহিতের সঙ্গে – তাহলে কি সেই মেয়ে মেনে নেবে সেটা?”

তার কথায়, এখন যা জীবনাযাত্রা, মেয়েরাও সিনেমা দেখতে যাবে, হোটেলে খেতে যাবে বা হয়ত পানশালায় যাবে – অন্য দিকে পুরোহিত পরিবার তো শাস্ত্র – বেদ এসব নিয়েই থাকে।

পুরোহিত পাত্রকে বিয়ে করার উৎসাহ দেওয়া সহ ব্রাহ্মণদের উন্নয়নের জন্য সরকার মোট একশো কোটি রুপি বাজেট বরাদ্দ করেছে।

তবে সরকারের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন সামাজিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সংগঠন ও ব্যক্তিরা। রাজ্যের সামাজিক বিকাশ পরিষদের প্রধান কল্পনা কন্নাভিরণ সরকারের এই উদ্যোগের পেছনে গ্রহণযোগ্য যুক্তি দেখছেন না।

“সরকার মনে করছে যে ব্রাহ্মণ পুরোহিতদের নিশ্চিত রোজগার নেই, তাই মেয়েরা বিয়ে করতে চাইছে না। এই যুক্তি যদি মেনেও নেওয়া যায়, তাহলে তো একটা উপায় ছিল যে পুরোহিতদের সরকারি কর্মচারী হিসাবে গণ্য করার। তাহলে তো আর একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের মধ্যে এই পেশা আবদ্ধ থাকত না,” মিজ কন্নাভিরণ বলছিলেন।

তার প্রশ্ন, এই পেশায় নিযুক্তদের জীবনযাত্রার মান না বাড়িয়ে বিয়ে করার জন্য উৎসাহ ভাতা কেন দিতে যাচ্ছে সরকার?

সরকার যদিও মুসলিম মেয়েদের বিয়েতেও উৎসাহ ভাতা দিচ্ছে, কিন্তু তবুও মিজ কন্নাভিরণ প্রশ্ন তুলছেন যে তেলেঙ্গানা সরকার কি তাহলে পুরুষতান্ত্রিক? – যারা মনে করে বিয়ে করাটাই একজন নারীর জীবনের প্রধান এবং শেষ লক্ষ্য?

About the author

নরসুন্দা ডটকম