কবিতা সাহিত্য

এ প্রজন্মের কবি কাজল এর খন্ড কবিতা “জাগো নারী জাগো”

Md. Sohel Ahmed Khan   এপ্রিল ২২, ২০১৮

সাহিত্য ডেস্কঃ

“জাগো নারী জাগো”

(প্রথম খন্ড)

-কাজল

 

নারী কি শুধু ভোগের সামগ্রী,
তার নেই কোন চাওয়া পাওয়া?
নারী মানেই কি পুরুষের প্রভূত্বকে,
মুখ বুঝে মানা?

নারী মানেই কি সকল অন্যায়-অবিচার,
নিরবে সহ্য করা?
নারী কি সস্তা কাঁচের জিনিস?
সহজে যায় যা ভেঙে চুড়ে ফেলা!

নারী কি বহমান নদীর মত?
যার স্বভাব শুধু বয়ে চলা!
নারী কি কোন কাঠের পুতুল?
তারে নিয়ে করবে খেলা!

চোখ থাকতে অন্ধ যারা;
আলোর এইনা দুনিয়ায়!
সিন্ধু সেচে বিষ পায় তারা,
কোনদিন অমৃত খুঁজে না পায়।।

হায়রে নির্বোধ নারী!
নিজেকে অবলা ভাবো তুমি।
চোখ থাকতেও তুমি অন্ধ!
তাইতো সকল দরজা হয়ে গেছে বন্ধ।

নারী পুরুষ উভয় সমান,
কেহ নয় ছোট।
একই রক্তে রঞ্জিত,
সকল মানুষের দেহ।।

ওগো নারী,কেন তুমি
ভোগের সামগ্রী হয়ে আছো?
সকল অন্যায়-অবিচার-অত্যাচার,
কেন নিরবে সহ্য কর?

পুরুষের প্রভুত্বকে মুখ বুঝে,
কেন স্বীকার কর?
তুমি তো নয় সস্তা কাচের জিনিস!
তবে কেন অল্প আঘাতে ভেঙে পড়?

তুমি যে তোমার ব্যক্তিত্বকে,
করেছো পুজার ফুল।
সারা জনম নদীর মত,
করছো একই ভূল।।

বাসী ফুল ঝরে যায়।
সে ফুলে পুজা না হয়!
এক ফুলে পুজা হয় মাত্র একবার।
হোক সে ফুল যতই সুন্দর।

কেন তুমি চোখ থাকতে ও
অন্ধ সেজে আছো?
সামনে অমৃত ভান্ডার জেনেও
কেন বিষ পান কর?

“জাগো নারী জাগো”

(২য় খন্ড)
-কাজল

 

ওগো নারী সর্বদা নিজেকে কেন,
হেয় প্রতিপন্ন করে রাখ?
কেন নদীর মত বারবার তুমি ও,
একই ভূল করছো?

অদৃষ্টের দোহাই দিয়ে,
গেছো তুমি চিরকাল।
কখনও পাওনি বুঝে
তোমার ন্যায্য অধিকার।

নিজের অস্তিত্ব জলাঞ্জলি দিয়ে,
দাসত্ব মনোভাব নিয়ে থাকো পড়ে।
খেয়াল খুশিমত সব ভুলে গিয়ে
সর্বদা রেখেছো নিজেকে গুটিয়ে।

নারী জাত মায়ের জাত, যার জন্য
দেখেছি সবাই এই পৃথিবীর আলো।
আমার প্রশ্ন সমাজের কাছে কেন,
নারীকে সর্বদা অপদস্ত হতে হয় বল?

নারীকে পায়ের দাসী করে,
তোমরা গেছো কর্তৃত্ব করে।
ন্যায্য অধিকার থেকে,
রেখেছ বঞ্চিত করে।

নারীর চোখে অশ্রু ঝরে।
বুক ফাটে তো মুখ না ফোটে!
এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে,
তোমরা নাও উদ্দেশ্য হাছিল করে।

আমাদের এই সমাজ সংসারে!
নারীরা চিরকাল অবহেলিত বটে।
কোনদিনও দাওনি তাদেরকে,
সমাজে মাথা উচু করে দাড়াতে।

নারী ছাড়া কখন ও কি?
চলতে পার একলা!
তবে কেন নারীর প্রতি,
তোমাদের এত অবহেলা?

পাহাড় সমান অপরাধ করে,
তোমরা যাও পার পেয়ে।
নারী কোন অপরাধ করলে,
তার মাসুল দিতে হয় জনম ভরে।

নারী ঘরের বাহির হলে পরে’
শত কৈফত দিতে হয় তাকে।
পান থেকে চুন খসে না পড়তে
কলঙ্ক দাও মাথায় রটে।।

পুরুষ ঘরের বাহির হলে,
কোন কৈফত লাগেনা তাতে।
শত খারাপ কাজ করলে,
দোষ হয়না একটুও তাতে!

আমাদের এই সমাজ ব্যবস্হা,
এ জন্য দায়ী বটে।
নারী পুরুষের এই বৈষম্য,
অনাদিকাল থেকে চলে আসছে।

“জাগো নারী জাগো”

(৩য় খন্ড)
-কাজল

 

 

পরাধীনতার শৃঙ্গলে বন্দী করে,
নারীদের রেখেছ এতকাল।
আঁধারে জীবন ঢাকা পড়েছে,
পাওনি খুঁজে আলোর সন্ধান।

আর কত যুগ রইবে
অন্ধ হয়ে বন্ধ ঘরে।
মেনে নিবে মুখ বুঝে
সকল অন্যায় অনিয়মকে।

হে নারী নিজের অস্তিত্বকে,
কেন বিলিন করছো?
বিবেক বুদ্ধি ভূলে গিয়ে,
কেন অন্যের পুতুল হয়ে চলছো?

তুমি ও যে মানুষ।
নও কোন কাঠের পুতুল।
মানুষ হল সৃষ্টির সেরা,
এ কথা কি জান না?

নারী তুমি অনন্যা,
নারী হল অপরুপা,
তোমার জন্য আলোকিত ধরা।
বুঝেও কেন তা বুঝনা?

স্বামীর পায়ের তলে স্ত্রীর বেহেশতো,
এ মিথ্যা গুজব ছাড়ো।
মায়ের পায়ের তলে সন্তানের বেহেশতো,
এ চিরন্তন কথাটি জেনে রাখো।

সৃষ্টি জগতের মালিক যিনি,
তোমায় দিয়েছেন এ অধিকার।
বুঝিয়ে দাও সবাইকে তুমি,
তুমি হীনা জগৎ সংসার অচল।

আত্মসন্মান বোধটুকু ভূলে,
কুসংস্কারের মধ্যে আছো ডুবে।
পবিত্র কুরআনে নারীর সন্মান বাড়াতে,
সুরা নিসা নাযিল করা হয়েছে।

পুরুষ শাসিত এই সমাজে,
টিকে তোমায় থাকতে হবে।
তোমার অধিকার তোমাকে,
আদায় করে নিতে হবে।

দাসত্ব মনোভাব ছাড়ো,
আলোর পথে বেরিয়ে আস।
স্বাধীনভাবে বাঁচতে শিখ,
জীবনকে নতুন করে উপভোগ কর।

সবাকে আজ দাও বলে,
নারী নয় অবলা।
পুরুষের মত তোমার আছে,
ব্যক্তিত্ব, মান,মর্যাদা।

নারী হল সবার জন্মদাত্রী
কারো বোন কারো বা জননী
কখনও সহধর্মীনী,সহযাত্রী
কারো বা আবার প্রেম পিয়াসী।

সকল কাজের উৎস নারী।
জেনে নাও সকল বিশ্ববাসী।
নারী উদর মমতাময়ী।
তোমার তুলনা শুধুই তুমি।

“জাগো নারী জাগো”

(৪র্থ খন্ড)
-কাজল

 

নিজ গুনে তুমি মহীয়সী।
তোমার তরে এই ধরাতে,
যুগে যুগে আবির্ভাব হয়েছে
কত না মহাজ্ঞানী, গুনী।

দশ মাস দশ দিন গর্ভে রেখে,
কত বেদনা সয়েছ নিরবে-নিভৃতে।
প্রসব বেদনা সইতে না পেরে,
কত জননী প্রাণ হারাইছে।

অনেক দু:খ কষ্ট সয়ে,
মা সন্তানকে আগলে রাখে।
মায়ের মত নি:স্বার্থবাদী,
কেউ হবে না এ জগতে।

লালন করেছ, আদর দিয়েছ;
দিয়েছ অফুরন্ত ভালবাসা!
তোমার ঋীন শোধ করার মত
নাই কারো ক্ষমতা।।

নারী ধন্য।
নারী পূন্য।
নারী স্বর্গ।
নারী বেহেশতো।

নারী সুন্দর, নারী সত্য,
শিশির ভেজা ফুলের মত পবিত্র।
তোমরা কর নারীকে অপবিত্র,
জীবনকে করে তুলো অতিষ্ট।

হে নারী,তোমার মনের দুয়ার
বন্ধ করে রেখ না আর।
নিজের হেয় মানুষিকতা ত্যাগ কর।
মনুষ্যত্ব বোধকে জাগিয়ে তোল।

সৃষ্টির মূল সত্ত্বা নারী
তোমাকে তাই নমস্যা করি
নারী তুমি আত্মত্যাগী
করতে পারো জীবন বাজি

নারী তুমি বিরঙ্গনা
আকাশের মত তোমার বিশলতা
সাগরের চেয়ে বেশি গভীরতা
মোমের মত হয় জীবনটা

জেগে ওঠো নারী
ঘুমিয়ে তুমি থেকোনা।
পথ চল নারী
পিছিয়ে কভূ পড়না।।

সাহস যোগাও নারী,
ভয় তুমি পেওনা।
শক্তি যোগাও নারী,
থেমে থাকলে চলবে না।

স্বাধীন দেশে স্বাধীনভাবে
তোমাকেও চলতে হবে
বাধা যদি নেমে আসে
শক্ত হাতে রুখতে হবে।।

গর্জে ওঠো;সিংহের মত
খাচার পাখি হয়ে থেকোনা।
নিজেকে যদি গুটিয়ে রাখো,
মুক্তি কোনদিন পাবেনা।

রুখে দাড়াও,
নিজেকে সাজাও।
মূর্খতা ঘুচাও।
জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হও।

জীবন নদীতে এসেছে জোয়ার
বাইতে হবে তরী তোমার।
মুক্ত বিহঙ্গে মেলে দাও ডানা
তোমারও আছে স্বাধীনতা।

চার দেয়ালের বেড়াজালে,
রেখনা আর আড়াল করে।
নিজেকে অনন্য করে,
প্রতিষ্ঠিত কর বিশ্বের মাঝে।

About the author

Md. Sohel Ahmed Khan