মানুষ- সমাজ

“হৃদয়ের ক্যানভাসে সবুজ ক্যাম্পাস”

নরসুন্দা ডটকম   এপ্রিল ২৬, ২০১৮
সবুজ ক্যাম্পাস

২০০৬ সাল। জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। সূচিত হলো নব জীবনের দ্বার। সারা জীবনের স্বপ্নের ক্যাম্পাসে আমার পদচারনা। সারাজীবনের লালিত স্বপ্নের প্রিয় সাবজেক্ট ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ। ভর্তির পরপরই যে অভিজ্ঞতা ও অনুভ’তি তা বলে শেষ করা যাবেনা ।অভিজ্ঞতা যাই হোক,অনুভুতির স্মৃতিচারন ও সঞ্চারন যদি করতে যাই তবে তা হবে সাহিত্যের আরেকটি জীবন্ত উপাখ্যান।

আজ ৩৫তম ব্যাচের যৃগপূর্তিতে খানিকটা অনূভূতি তুলে ধরার ক্ষুদ্র প্রয়াস শুধু একটি কারণে তা হলো আমার ৩৫তম ব্যাচের বন্ধুরা যে যেখানেই আছো তোমরা জেনো, আমি তোমাদের কতটা ভালোবাসি।  ভর্তির পর লম্বা ছুটি সম্ভবত সামার ভ্যাকেশন, কী অদ্ভুদ ছটফট করে সময়টা কাটিয়েছি। সময় যেনো আর কাটেনা ! কখন ক্যাম্পাস খুলবে এই ব্যাকুলতায় মন ভীষন বিষন্ন ছিল।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস

এরপর ক্লাস, সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের চতুর্ভুজ স্যাতঁস্যাতেঁ বারান্দা, সামনের প্রবেশ মুখের পাশে কলাপসিবল গেটের পাশের সিড়িতে দলবেধে আড্ডা, পার্কিংলট, সামনে সুবিশাল সবুজ বাগান, বাহারি অর্কিড, গাধাফুল, সারিবদ্ধ গোলাপের গাছ দোতলায় জিওগ্রাফি আর ইকোনমিক্সেও বন্ধুপ্রতিম আড্ডা সেই সমধুর যাএা শুরু।অতপর হল লাইফ এবং বেগম খালেদা জিয়া হল, সে সময়কার সবচেয়ে নতুন হল প্রথমেই রুম পাইনি, টিভি রুমে গণরুম করে রাখা হয়েছিল ফার্ষ্ট ইয়ারের মেয়েদের প্রথমে কিছুটা মন খারাপ হলেও পরে অসম্ভব ইনজয় করেছিলাম এই গণরুমে লাইফটাকে। একে একে বিভিন্ন বিভাগের মেয়েদের সাথে বন্ধুত্ব জমে উঠলো।

তারপর একসাথে টিভি দেখা, ক্লোজআপ ওয়ানের প্রগ্রামের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়া। খেলার চ্যানেল আর গানের চ্যানেল নিয়ে কী যে কাড়াকাড়ি। রিমোট নিয়ে ছুটাছুটি, বড় আপুদের ভয়ে চুপটি করে থাকা। এই করে করে ভাল ভাবজাম উঠে অন্যান্য বিভাগের বন্ধুদেও সাথে, টিভি রুম আমাকে একঝাক বন্ধু দিয়েছে যা সত্যিই অসমান্য অর্জন। এরপর একে একে ক্যাম্পাসের সবুজ তৃনভ’মি প্রতিটা অঙ্গন আমার হৃদয়ের মানসপটে বসিয়েছে এক অনবদ্য ভাললাগার ছাপ।

আজ সেই ক্যাম্পাসের আমরা সাবেক। ক্যাম্পাস ছেড়েছি অনেক বছর হয়ে গেল। আজ আমরা একযুগ পূর্তি উৎসব করতে যাচ্ছি। আজো ভাস্বর আমার হৃদয়ের মানসপটে সোনার খাঁচার দিনগুলো। আজো আমার মনের জমিনে জীবন্ত অনুভুতি হয়ে উঁকি দেয় সেই যে আমার ফেলে আসা সতেজ দিনগুলো। এখনো ভুলতে পারিনা একটি দিনের, একটি মূহূর্তের অনুভুতি।

এই স্মৃতি কোনোদিনও ভুলতে পারবো না। এ জীবনের সাথে ওতোপ্রোতোভাবে লেপটে আছে আমার জাহাঙ্গীরনগর। আজো কল্পনার সাইরেন বেজে উঠে ক্ষনে ক্ষনে হৃদমন্দিরের গাঢ় অনুরননে। দিন যায়, কথা থাকে। সময় চলে যায় প্রবাহিত স্রোতের মতো। কিন্তু দাগ থেকে যায়। সভ্যতার দাগ, ভালো লাগার দাগ, বন্ধুত্বের দাগ, ঐক্যের দাগ, সবুজ শ্যামলে ভরা প্রিয় চারণভূমির সান্নিধ্যের দাগ, মাটির টানে শিকড়ের সাথে মিশে একাকার হয়ে জাবিয়ান ইসমের দাগ, কলিজায় ক্ষরণ করে স্থায়ী ভাবে বসানো ভ্রাতৃত্ব, বন্ধুত্ব, প্রেম আর ভালবাসাময় জীবনের ফেলে আসা স্মৃতির দাগ।
ন্ধদয়ের স্বচ্ছ ভূমি আজ ভালবাসাময় দাগে দাগে টইটুম্বুর। সেই মহিমান্বিত অস্পৃশ্য, অদেখা দাগ গুলো কল্পনার মহীরুহ হয়ে তার অস্তিত্ব প্রকাশ করছে, আর মেলে ধরছে জাবিয়ান বন্ধনের দাগ। এ দাগ থেকে চিরদিনের কালান্তরে।


আমি আমার প্রত্যেকটা বন্ধুকে ভীষন ভাবে মিস করি। ৩৫ ক্যাম্পাসের সেরা ব্যাচ। যে যাই বলুক একথা অনস্বীকার্য যে ৩৫ আমার দেখা শ্রেষ্ঠতম ব্যাচ। ৩৫ এর প্রতিটা ছেলেমেয়ে আমার বন্ধু। জীবন খাতার সব শূন্যতা পরিপূর্ণ করে দিয়েছে আমার জাহাঙ্গীরনগর ও আমার পয়ত্রিশ।  কখনো ভাই, কখনো বোন, কখনো বন্ধু-তোরা সবসময়ই জাবিয়ান রত্ন। তোরা সূর্য সন্তান। কালের স্রোতে অনেকটা হারিয়ে গেলেও জাবিয়ানের ডাকে, পয়ত্রিশের ডাকে বৈতরনীর বৈঠা শক্ত করে ধরে নাও ভাসাতে এই মাঝি কভু হেলা করেনি, করেনা এবং করবেওনা। জাহাঙ্গীরনগর আজ আমার হৃদয়ের কুড়ানো হাসি,যেখানে শান্তি খুজতে,শান্তির বাতাস খুজতে যাই। ঢাকায় বিচরনের বাঁকে বাঁকে কোথাও সবুজ বাসটি দেখলে ঘাড় ঘুরিয়ে একটু ফিরে দেখি একটু হেটে গিয়েও বাসটার কাছে যাই, একটু ধরে দেখি। একটু ছোঁয়া আমার মনকে পুনরায় সতেজ অনুভুতি ফিরিয়ে দেয়।

২০০৬ সাল থেকে আজো অবধি আমার কম্পিউটারের ডেস্কটপ ব্যাকগ্রাউন্ড, স্ক্রীন, ডিসপ্লে, ওয়ালপেপার হিসেবে সমহিমায় ভাস¦র হয়ে আছে জাহাঙ্গীর নগরের মুক্ত মঞ্চ, শহীদ মিনার, কেন্দ্রীয় ক্যাফেটরিয়া, অমর একুশ কিংবা প্রিয় লেকের ছবি। এই সব চিরচেনা পথ গুলো আজ অন্যের। আমরা হারিয়ে গেছি তবুও নষ্টালজিয়া হয়ে স্মৃতি গুলো মনে করিয়ে দেয় আমাদেও দিনগুলোর কথা। একদিন হয়তো এই জীবনও শেষ হয়ে যাবে কিন্তু আমৃত্যু শ্রদ্ধাভবে চিত্ত মাঝে পুত: পবিত্র অনুভুতি গুলো শিহরণ জাগাবে।

জীবন সংসারে কর্ম জীবনের ব্যস্ততার মাঝে কোথাও একটা জাহাঙ্গীর নগরের ছেলে বা মেয়ে পেলে মনে হয় যেন বাপের বাড়ি থেকে আমার ভাই বা বোন এসেছে। বিবাহের পর মেয়েদের শশুর বাড়িতে যদি বাপের বাড়ির কেউ আসে, যে আনন্দ ও শান্তিটুকু কাজ করে আমি একটা জাবিয়ান পেলে আমার মাঝে এইরকমই এক অনুভুতি কাজ করে।
জাবিয়ান অনুভুতিকাতর এই আমি চিরদিনই আমার মন মন্দিরে জাবিয়ানের পূজা করে যাবো। আমার বন্ধুরা আমার কাছে গ্রেট। পয়ত্রিশ আপন সুতোয় গাথা একটি ব্যাচ। প্রাণের টানে, স্রোতের জোয়ারে ভেসে যাবো আমরা সারাজীবন-শুধুই হৃদয়ে জাহাঙ্গীরনগর চেতনাকে উজ্জীবিত রেখে। পয়ত্রিশ ব্যাচের প্রতিটা বন্ধুর সুস্বাস্থ্য দীর্ঘায়ু, ও উন্নত জীবন কামনা করছি।

পয়ত্রিশ ব্যাচ জিন্দাবাদ।
জাহাঙ্গীরনগর জিন্দাবাদ ।
-আইরিন রুবিনা হক লিয়া
৩৫তম ব্যাচ,
ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ।
বেগম খালেদা জিয়া হল।

About the author

নরসুন্দা ডটকম