নদী, পরিবেশ ও সমাজ নিয়ে গভীর ভাবনা তার। বর্তমানে করোনা ভাইরাসের মোকাবিলায় লক ডাউনের আগে সচেতনতা অভিযানে নেমেছেন তিনি।লকডাউনের পর খুলেছেন করোনা হেল্পলাইন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ। বর্তমানএ সমগ্র বিশ্বের কি পরিস্থিতি? স্থানীয় পরিস্থিতিই বা কি? এই সব নিয়ে নরসুন্দা ডট কমের জন্য পশ্চিমবঙ্গ (ভারত) থেকে লিখছেন- লেখক, সাংবাদিক, তুহিন শুভ্র মন্ডল। চোখ রাখুন www.narashunda.com নরসুন্দা ডট কম এ। আজ পড়ুন চতুর্থ পর্ব।
কি এক সময় এলো!!মানুষ দিন ভুলে যাচ্ছে, তারিখ। আজ যে চড়ক অথবা গাজন।সে কথাই ভুলে গিয়েছে অনেকে। ফোন আসছে বেশ কিছু আজই চড়ক কিনা জানতে।কালই বাঙালির জীবনের প্রিয় দিন। নতুন বছর শুরুর দিন।
খুব ছোটবেলায় পড়েছি –
নতুন বছর নতুন দিন
খোকা নাচে তাধিন তাধিন’।
এ বছর আর সেটা হবার নয়।নতুন বছরের আনন্দ তো আর মানুষের মনে নেই। কারণ একটাই করোনা ভাইরাস বা COVID-19। শুধু বাঙালি কেন সমগ্র পৃথিবীর আনন্দই শেষের পথে।শুধু,আমেরিকা, ইতালি, স্পেন, চীন অবস্থা সঙ্গীন। ফিরে আসি নববর্ষের কথায়।মনে পড়ছে ছোটবেলার কথা।নববর্ষের আগের দিন চড়কের মেলায় বন্ধুরা মিলে আনন্দ করে পরের দিন ভোরবেলা সবাই উঠে যেতাম। কীর্তন বেরোবো সকালবেলায়।বিকেলে নতুন জামা প্যান্ট পরে বাবা মায়ের সাথে দোকানে দোকানে হালখাতা করতে যাওয়া। নতুন বছরের ক্যালেন্ডার, মিষ্টি এসবের আকর্ষণ ছিল অনন্য।এখনও মনে আছে সেসব। বড় হয়ে নববর্ষের সকালে প্রভাতী আড্ডা কথায় কবিতায় রসিকতা ঠাট্টায় জমে ওঠে। নাট্যশিল্পী পিউ সরকার কলেজে পড়ান।
এই বিষয়টা নিয়ে ফেসবুকের পোস্টে পিউ লিখেছেন’- খুব খারাপ লাগছে। নববর্ষের সকালে প্রভাতী আড্ডা খুব মিস করবো।তবে এই মুহুর্তে নিজেদের আর দেশের জন্য বাড়িতে থাকাটাই সবচেয়ে জরুরী।আশা করি সামনে ভাল দিন আসবে’।
ঠিক তাই ভাল দিনের অপেক্ষায় সবাই। করোনা পৃথিবীর সময়কে অন্ধকারময়তায় ঘিরে রেখেছে।কোথাও যেন আলো নেই।এই সময়ে সবার সুস্থ থাকা ভাল থাকা সর্বাগ্রে দরকার করোনা মহামারি পেরিয়ে অতিমারির মোকাবিলায়। অন্বেষা চক্রবর্তী নদিয়ার কল্যাণীতে একটি বেসরকারী স্কুলের শিক্ষিকা। সমাজ ও পরিবেশ নিয়ে সুচিন্তিত মতামত আছে তার।সেই অন্বেষাও এই মুহুর্তে সুস্থতার কথা বলছেন। বলছেন সবার আগে বেঁচে থাকার কথা।তার কথায় ‘ বেঁচে থাকলে সব হবে।
এখন সবাই যেন সুস্থ থাকে সেটাই একমাত্র কাম্য’। সত্যিই তাই মানুষের বেঁচে থাকাই এখন মূল বিষয়।বাঁচাটাই প্রশ্নচিহ্নের সামনে।তেমনটাই বলছেন একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নন্দিতা দাস(রায়)।গতবছর অসুস্থতাজনিত পারিবারিক বিপর্যয় কাটিয়ে এবারের নববর্ষের আনন্দ সুদে আসলে দ্বিগুন করে নিয়ে চেয়েছিলেন। করোনা ভাইরাস বাদ সাধলো।নন্দিতা দাসের কথায় ‘বেঁচে থাকাটাই এখন প্রশ্নচিহ্নের মুখে।’ করোনা ভাইরাসের আক্রমন জনিত মৃত্যু মিছিল ঠেকাতেই তো আগ্রহী এখন সব দেশ। বেঁচে থাকাই যখন প্রশ্নের মুখে তখন মনে আনন্দ আসবে কোথা থেকে! তাই করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগের মধ্যেই মৌমিতা চক্রবর্তী সমাদ্দার,অতনু ব্যানার্জি,উৎপল রায়, সংহিতা সরকার, অর্পিতা হালদার, প্রসূন সমাজদার, প্রগতি সাহা প্রমুখরা জানালেন আশাবাদের কথা। তারা আশা রাখছেন সব ভালোয় ভালোয় মিটে যাক।
সামনে বছরের নববর্ষের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন তারা। মন ভাল নেই তাই এবার নিজের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে নববর্ষের হালখাতার অনুষ্ঠান বন্ধ রেখেছেন রুপকার্থ মজুমদার। যিনি নিয়ম করে লকডাউনের এই সময় বয়স্ক মানুষদের কাছে সেবামূলক কাজের মধ্যে দিয়ে ওষুধ পৌছে দিচ্ছেন তিনি। এই সময় সমগ্র মানবজাতির কাছেই একটা কঠিন সময়।তাই বাঙালির দায়িত্ব ও কর্তব্যের কথাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী বিশ্বনাথ মহন্ত । তাঁর কথায়-‘ এই কঠিন সময়ে বাঙালি কি করে সময়ের দাবী কে ভুলে যেতে পারে” এই সময় সামাজিক বিচ্ছিন্নতা সবচাইতে আগে প্রয়োজন।প্রয়োজন লকডাউনে বাড়ি থাকা।সেই কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছেন পরিবেশ চিন্তক অরুপ গুহ, মান্না শুভ্র প্রকাশরা।
করোনা ভাইরাসের মোকাবিলাতেও যিনি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলার মানসিকতা রাখেন সেই সঙ্গীতশিল্পী প্রাপ্তি চৌধুরী জানান শুভ বাঙালি কেন সমগ্র পৃথিবীকেই তো গিলে খাচ্ছে করোনা ভাইরাস। ঠিক তাই। এর থেকে মুক্তি কবে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে গোটা দুনিয়া।প্রকৃতি কি তাহলে প্রতিশোধ নিচ্ছে? এই ভাবনা সামনে এসেছে।আর এসবের মধ্যে বাঙালির পয়লা বৈশাখ আরও বেশি যেন একলা হয়ে গিয়েছে এবার।আমরা ছোটবেলায় ভুল করে পয়লা বৈশাখকে একলা বৈশাখ বলতাম।এবার বোধহয় সেটাই হয়ে গেল।আশায় আছি নতুন সকাল আসবে দ্রুত আমাদের জীবনে।আর সেটা আসবে আগামী নববর্ষের আগেই।যাতে কিনা উদাত্ত কন্ঠে বাঙালি গাইতে পারে বাঙলা বর্ষবরণে রবিঠাকুরের চিরকালীন গান ‘ এসো হে বৈশাখ।এসো এসো….’।
আরও পড়তে পারেন….