ক্রিকইনফোর ম্যাচ প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল: ‘সাবেক নাইট রাইডার সাকিবের নেতৃত্বে কলকাতায় সানরাইজার্সের প্রথম জয়’। এরপরই যেন সাকিবকে নিয়ে ঘুম ভেঙেছে কলকাতার পত্রপত্রিকার। আনন্দবাজারের শিরোনাম ‘কেকেআরের কাঁটা প্রাক্তন তিন নাইট’।
অসম্মানজনক ছিল না, কিন্তু কলকাতা নাইট রাইডার্স (কেকেআর) থেকে সাকিব আল হাসান বিদায়ের সময় প্রাপ্য সম্মানটুকুও পাননি। সেই সাকিব কাল যখন প্রথমবারের মতো পুরনো দলের বিপক্ষে খেললেন, ব্যাটে-বলে-ফিল্ডিংয়ে ঝলসে উঠলেন ইডেন গার্ডেনে, কলকাতায় দেখা দিয়েছে হাহাকার। এই অলরাউন্ডারকে কেকেআরের যোগ্য ভাবেনি টিম ম্যানেজমেন্ট! তাই মুণ্ডুপাত চলছে ওই বাংলার পত্রপত্রিকায়।
২০১৭ আইপিএলে মাত্র একটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাওয়া সাকিবকে নিলামের আগে রেখে দেয়নি কলকাতা। নিলামে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ তাঁকে কিনলেও কেকেআরের সামনে সুযোগ ছিল রাইট টু ম্যাচ পদ্ধতি ব্যবহার করে ওই দামেই সাকিবকে নিজ দলে টানা। সেটিও কেকেআর করেনি।
কেকেআর যেমন তাদের দুবারের আইপিএল জয়ী অধিনায়ককেও রাখেনি। কিন্তু কেকেআর থেকে সাকিবের বিদায় যতটা নীরবে হয়েছে, তা তাঁর প্রাপ্য ছিল কি না, এ প্রশ্ন তখন উঠেছে। টানা সাত বছর কেকেআরের হয়ে খেলেছেন। আইপিএলের বাঙালি প্রতিনিধিত্ব দলের একাদশে একমাত্র বাঙালি খেলোয়াড়ও হয়ে গিয়েছিলেন একসময়। কলকাতা থেকে সেই সাকিবের বিদায়ে কেকেআরের যেন একটি টুইটও করতেও কার্পণ্য ছিল!
কলকাতার পত্রপত্রিকাও যে খুব একটা লক্ষ্য করেছিল ব্যাপারটা, তাও এমন নয়। ইউরোপের ফুটবলে মাঝারি একটি ক্লাবেও সাত বছর খেলে দল পাল্টালে আলোচনা হয়। সা-ত বছর, কম সময় তো নয়। একটা সম্পর্ক তো তৈরি হয়ই। আনুগত্য আর ভালোবাসাও। পেশাদার খেলোয়াড় বলে কি আর তাঁদের আবেগ নেই!
সাকিব এ নিয়ে মুখে কোনো কিছু বলেননি। এমনকি কেকেআর ম্যাচের আগে ভারতীয় বার্তা সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইডেনে খেলছেন বলে এ ম্যাচ নিয়ে বাড়তি কোনো উচ্ছ্বাস বা জবাব দেওয়ার প্রসঙ্গও এড়িয়ে গেছেন। কিন্তু নিকট অতীতে আইপিএল সাকিবের সেরাটা বেরিয়ে এল কালই। বাংলা নববর্ষে, বাংলার পরিচিত ভেন্যুতে বৃষ্টিস্নাত রাতে ঝলসে উঠল সাকিব-বারুদ।
বল হাতে ক্রিস লিন আর সুনীল নারাইনের গুরুত্বপূর্ণ উইকেট দুটি নিয়েছেন। নিয়েছেন দুটি ক্যাচ। এরপর ব্যাট হাতে ২১ বলে ২৭ করেছেন, অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের সঙ্গে গড়েছেন ৫৯ রানের জুটি। ব্যাটে-বলে-ফিল্ডিংয়ে আক্ষরিক অর্থেই অলরাউন্ডার সাকিব জয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন কাল। ক্রিকইনফোর ম্যাচ প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল: ‘সাবেক নাইট রাইডার সাকিবের নেতৃত্বে কলকাতায় সানরাইজার্সের প্রথম জয়’।
এরপরই যেন সাকিবকে নিয়ে ঘুম ভেঙেছে কলকাতার পত্রপত্রিকারও।
আনন্দবাজার তাদের ‘কেকেআরের কাঁটা প্রাক্তন তিন নাইট’ শিরোনামের বিশেষ প্রতিবেদনে লিখেছে, ‘নাইটদের কাঁটা হয়ে বিঁধলেন তিন প্রাক্তন নাইট। সাকিব চার ওভারে ২১ রান দিয়ে দুই উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি ব্যাট হাতেও ম্যাচ জেতানো জুটি গড়লেন উইলিয়ামসনের সঙ্গে। আন্দ্রে রাসেলকে স্কোয়ারকাটে পয়েন্টের ওপর দিয়ে হেলায় ছক্কা মারলেন সাকিব। শটটা যেন চাবুকের মতো সেই সব কেকেআর কর্তার ওপর আছড়ে পড়ল, যাঁরা তাঁকে ঢাকার প্রতিবেশী শহর থেকে চলে যেতে দিয়েছেন হায়দরাবাদে।’
‘ঋদ্ধির মতো না হলেও সাকিব আল হাসানও ব্যাট হাতে ছিলেন বিধ্বংসী মেজাজে। বল হাতেও ফেরান বিপক্ষের দুই নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান ক্রিস লিন ও সুনীল নারাইনকে। জয়ের হাসিও শেষে তাঁরাই হাসেন। ইডেনে আসার আগে শনিবার দুপুরে শহরের এক বাঙালি রেস্তোরাঁয় বন্ধুদের সঙ্গে বাঙালি খাবার খেয়ে আগাম নববর্ষ পালন করেন সাকিব। রাতেও আর এক দফা পালন করলেন বাংলার নতুন বছর আসার আনন্দ।’
কলকাতার আরেকটি পত্রিকা এবেলা শিরোনাম করেছে: ‘বৃষ্টিবিঘ্নিত লড়াইয়ে নাইট শিবিরে ধাক্কা দিলেন সেই সাকিবরা’। আর ‘এই সময়’-এর শিরোনাম তো আরও ঝাঁজালো: ‘বাতিল বাঙালির নববর্ষের প্রতিশোধ’। প্রতিবেদনটা তারা শুরুই করেছে এভাবে: সুযোগ ছিল। কিন্তু নিলামে তাঁকে ব্রাত্যই করে রেখেছিল কেকেআর। সাকিব আল হাসান সেসব নিয়ে ভাবেননি। তবে নববর্ষের প্রাক্কালে পুরোনো টিমকে কাঁদিয়ে ছাড়ার পেছনে বড় ভূমিকা রেখে গেলেন তিনি।’