১৯৬১ সালের ২৪ নভেম্বর ভারতের শিলঙ-এ জন্ম অরুন্ধতির৷ শৈশব কেটেছে কেরালার অয়মানামে৷ পড়েছেন স্থাপত্য শিল্প নিয়ে৷ তবে নিজেকে গড়ে তুলেছেন সমাজ কর্মী, লেখক, সমালোচক, প্রাবন্ধিক হিসেবে৷
নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা এবং পারিপার্শ্বিক পর্যবেক্ষণ থেকে দেহ-কাঠামো গড়ে উঠেছে তাঁর প্রথম এবং একমাত্র উপন্যাস ‘দ্য গড অফ স্মল থিংস’ এর৷
বইটি প্রকাশের পরপরই বেশ সাড়া পড়ে যায় প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যেও৷ ১৯৯৭ সালে অর্জন করে বুকার পুরস্কার৷ পাশ্চাত্যের প্রকাশনা সংস্থাগুলো একযোগে এগিয়ে আসে উপন্যাসটির বাজার ধরতে৷ লেখিকা অরুন্ধতী অগ্রিম পান পাঁচ লাখ পাউন্ড৷ এস্টোনিয়ান, ড্যানিশ, ফিনিশসহ নানা ভাষায় অনূদিত হয়ে পৌঁছে যায় বিশ্বের নানা প্রান্তের পাঠকের হাতে৷ আছে এই বেস্ট-সেলার গ্রন্থের বাংলা ভাষান্তর৷
এখন পর্যন্ত বিশ্বের ২১টি দেশে প্রকাশিত হয়েছে অরুন্ধতী রায়ের এই বিখ্যাত উপন্যাসটি৷
স্বাভাবিকভাবেই হলিউড প্রযোজকরা এগিয়ে এসেছিলেন ‘দ্য গড অফ স্মল থিংস’ এর উপর ভিত্তি করে ছবি তৈরির প্রস্তাব নিয়ে৷ কিন্তু তাঁদের এসব প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন লেখিকা অরুন্ধতী৷ তাঁর মতে, এটিকে চলচ্চিত্রে রূপ দেওয়া হলে অগণিত পাঠকের মানসপটে এর যে প্রতিচ্ছবি তৈরি হয়েছে তা বিকৃত হতে পারে৷
সে সময় তিনি বলেছিলেন, ‘‘প্রত্যেক পাঠকের মনে এই উপন্যাসের একটি নিজস্ব ছবি তৈরি হয়৷ আমি পাঠকের মনে গড়ে ওঠা সেই ছবিকে একটি চলচ্চিত্রের সীমারেখায় বেঁধে ফেলতে চাই না৷ আমি চাই না যে, একটি মাত্র কল্পনার সাম্রাজ্যে আটকা পড়ুক উপন্যাসটি৷ উপন্যাসটির মালিকানা আমি দাবি করতে পারি না৷ কারণ একটি বই যখন বাজারে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠে, তখন সেটির মালিকানা পাঠকের৷ বেশ কয়েক বছর আগে বইটি প্রকাশিত হলেও এখন পর্যন্ত সেটির প্রতি মানুষের আগ্রহ সত্যি প্রশংসনীয়৷”
তাঁর প্রথম উপন্যাস দ্য গড অব স্মল থিংস প্রকাশিত হওয়ার পর ২০ বছর কেটে গেছে।
অরুন্ধতী জানিয়েছিলেন, তিনি আর ‘ফিকশন’ লিখবেন না, যা বলার এক বইতে বলে ফেলেছেন। সেই বইটি ছিল একটি নিষিদ্ধ প্রেমের অপূর্ব মন্থন। অভাবিত কাব্যময় ভাষায় একটি পারিবারিক ট্র্যাজেডির সংগোপন প্রকাশ। পরবর্তী ২০ বছর অরুন্ধতী যে নীরব ছিলেন, তা নয়। এই সময় সাহিত্য ছেড়ে তিনি বেছে নেন ‘প্রতিবাদ রাজনীতি’, জড়িয়ে পড়েন ভারত সরকারের নিগ্রহ নীতির বিরোধিতায়। যুক্ত হন মাওবাদীদের সঙ্গে। ভূমিহীন-দলিতদের সঙ্গে। এমনকি ভারতীয় সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধরত কাশ্মীরি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পক্ষেও কথা বলেছেন তিনি।
ভারতের পরিবেশবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে একদিকে সরকার, অন্যদিকে বৃহৎ পুঁজির কোপানলে পড়েন অরুন্ধতী। ইরাক যুদ্ধ এবং বিশ্বজুড়ে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধেও তিনি হয়ে ওঠেন এক প্রধান সমালোচক। ইরাক যুদ্ধ শুরুর আগে নিউইয়র্কের কুপার ইউনিয়নে তাঁকে দেখেছি কয়েক হাজার মানুষের সামনে ওই যুদ্ধের সাম্রাজ্যবাদী ও নয়া উপনিবেশবাদী চরিত্র তুলে ধরতে।
“দ্য মিনিস্ট্রি অব আটমোস্ট হ্যাপিনেস”- এক দশকের বেশি সময় ধরে অরুন্ধতী রায় তাঁর এই দ্বিতীয় উপন্যাসটি নিয়ে ভেবেছেন, অল্প অল্প করে লিখেছেন। বস্তুত, তাঁর কথায়, ‘৩৭ বছর ধরেই বইটি আমি লিখছি।’
অরুন্ধতী বর্তমান ভারতের বিরুদ্ধে এবং এক ভিন্ন ভারতের জন্য লড়াই করছেন গত আড়াই দশক। এ জন্য তাঁকে পুলিশি জুলুম সহ্য করতে হয়েছে, জেলের ঘানি টানতে হয়েছে। বলা যায় দ্য মিনিস্ট্রি অব আটমোস্ট হ্যাপিনেস তাঁর সে লড়াইয়েরই গল্প। সূত্র: প্রথম আলো, ডয়চে ভেলে।