১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ১০০ তম জন্মদিনে আমি আমার কন্যার শহর হিউস্টনে। তখন বিকেল সাড়ে ৩টা বেজে গেছে। নদী ড্রাইভ করছে, আমি ওর পাশের আসনে। পূর্ব নির্ধারিত একটি থিয়েটার হলের দিকে যাচ্ছি। এমন সময় ফোন বেজে উঠলো নদীর। ফিরোজ নামের এক তরুণের ফোন–নদী তোমার বাবা নাকি হিউস্টনে? নদী বললো, হ্যাঁ।
ফিরোজ বললো, আজ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন। টেক্সাস আওয়ামী লীগ তাঁর জন্মদিন উপলক্ষ্যে বিকেল পাঁচটায় একটা অনুষ্ঠান করবে মহারাজা রেস্টুরেন্টে। তোমার বাবাকে পেলে আমরা খুবই খুশি হবো। তিনি কি আসতে পারবেন এতো শর্ট নোটিসে?
নদী বললো, বাবা আমার পাশেই আছেন। আপনি বাবার সঙ্গে কথা বলেন।
ফিরোজ নামের তরুণ বন্ধুটি খুবই বিনয়ের সঙ্গে বললো, আপনি হিউস্টনে আছেন একটু আগেই জেনেছি। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের অনুষ্ঠান। খুবই ঘরোয়া পরিবেশে। টেক্সাস ও হিউস্টন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আর তাঁদের পরিবারের সদস্যরাই থাকবেন কেবল। আপনাকে পেলে খুবই খুশি হবো। যদিও এটা কোনো পাবলিক ফাংসান নয়। শুধুই আমরা আমরা। আপনি যদি আসেন রিটন ভাই, আমাদের সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদক আপনাকে ফোন করলে কি আসবেন?
আমি বললাম, আরে নাহ্। সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদককে ফোন করতে হবে না। তোমার ফোনই যথেষ্ট। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন বলে কথা। আমি আসবো। একটু দেরি হবে। কিন্তু আসবোই।
ফিরোজ বললো, আপনি যখন সুবিধে আসুন।
আমাদের নির্ধারিত পরিকল্পনা বাতিল হলো। ডেভিড আর নদী আমাকে সন্ধ্যে সাড়ে ছ’টায় মহারাজা রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেলো। গিয়ে দেখি হলরুম ভর্তি মানুষ। মঞ্চ আছে। আছে মাইকের ব্যবস্থাও।
বঙ্গবন্ধুপ্রেমী নানান বয়েসী নারী-পুরুষ শিশু-কিশোরদের উজ্জ্বল প্রাণবন্ত উপস্থিতিতে উদযাপিত হলো বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন। বক্তৃতা-নাচ-গান-আবৃত্তি সবই হলো। প্রবাসে জন্ম নেয়া নতুন প্রজন্মের ছোট্ট বন্ধুরা আমাদের সঙ্গে নিয়ে জন্মদিনের কেকও কাটলো। সবুজ রঙ্গের কেক। তাতে লাল বৃত্তের ভেতরে বঙ্গবন্ধুর ছবি।
অনাড়ম্বর কিন্তু হিউস্টনের বঙ্গবন্ধুপ্রেমীদের আন্তরিক উচ্চারণে সন্ধ্যেটা হয়ে উঠেছিলো মনোরম–শোনো একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি প্রতিধ্বনি আকাশে বাতাসে ওঠে রণি…।
বাংলাদেশের মানচিত্র পেরিয়ে বঙ্গবন্ধু দীপ্যমান আজ বিশ্বব্যাপি। যেখানেই বাংলাদেশের বাঙালি, সেখানেই বঙ্গবন্ধু। তিনি অবিনাশী। অবিনশ্বর। জয় বাংলা।
হিউস্টন ১৮ মার্চ ২০১৯ [আলোকচিত্র/ সাবরিনা নদী।]
লুৎফর রহমান রিটন : বাংলাদেশের খ্যাতিমান ছড়াকার। নোট: লেখাটি লেখকের ফেসবুক ওয়াল থেকে নেয়া।