নরসুন্দা ডটকম ডেস্ক:
গৌতম চক্রবর্তী
অর্কেস্ট্রার পাশাপাশি ছৌ নাচ। লোকশিল্পীদের ধামসা-মাদলে শোলে। সপ্তপদীর ‘এই পথ যদি না শেষ হয়।’
এ সব অবশ্য গত দু’তিন বছর ধরেই কমবেশি ছিল। ছিল গত কয়েক বছরের মতো অমিতাভ বচ্চন, জয়া বচ্চন, শাহরুখ খানদের উপস্থিতি। কিন্ত শুক্রবার এ সবের শেষে উদ্বোধনে দেখানো হল সুদেষ্ণা রায়, অভিজিৎ গুহ পরিচালিত বাংলা ছবি ‘বেঁচে থাকার গান’। বাংলা ছবি দিয়ে চলচ্চিত্র উৎসবের সূচনা বাইশ বছরে এই প্রথম।
এই পরিকল্পনা খোদ মুখ্যমন্ত্রীর। কারণ, তাঁর আমলে গত কয়েক বছর ধরে ‘সর্বজনীন’ হয়ে ওঠা চলচ্চিত্র উৎসবের শুরুতে বাংলা ছবি দেখিয়ে গ্যালারি-ভরা দর্শকের মন ছোঁয়ার কথা কিছু দিন ধরেই মাথায় ঘুরছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তিনি ঘনিষ্ঠ মহলে বারবার বলেছেন, যে অনুষ্ঠানে সাধারণ মানুষ এসে গ্যালারি ভরিয়ে দেন, সেখানে সকলে উপভোগ করতে পারেন এমন ছবি দেখানোই ভাল। অনেকটা সেই সুরেই মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন স্বাগত ভাষণে বলেন, ‘‘আগে এই অনুষ্ঠান মুষ্টিমেয় ফিল্ম- বোদ্ধার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকত। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী চান যত বেশি সম্ভব লোকের মধ্যে সিনেমাকে ছড়িয়ে দিতে।’’ এ বারের স্লোগানও ‘সিনেমা ফর অল’!
ঘটনা হল, তিরুঅনন্তপুরম, পুণে থেকে বেঙ্গালুরু, অন্য নানা শহরই ফেস্টিভ্যালে তাদের নিজস্ব আঞ্চলিক ছবিকে গুরুত্ব দেয়। কয়েক মাস আগে কেরল ফেস্টিভ্যালে জুরি ছিলেন ‘মহুলবনীর সেরেঞ’ খ্যাত পরিচালক শেখর দাস। তিনি বলছিলেন, ‘‘ওখানে কম্পিটিশনের নিয়ম, মালয়ালম ছবি থাকতেই হবে। বাছাই হলে ২০/২৫ লাখ টাকার পুরস্কার দেওয়া হয়। মালয়ালম, মরাঠি বা কন্নড় ছবি এই ভাবেই ফেস্টিভ্যাল সার্কিটে উঠে আসছে।’’ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবনা বাস্তব করে তাই এ বার বাংলার চলচ্চিত্র উৎসবেও ৪৫টি ভারতীয় ছবির মধ্যে ১৭টাই বাংলা ভাষায়।
দ্বিতীয় আকর্ষণটা প্রত্যাশিতই ছিল। অমিতাভ বচ্চনের বক্তৃতা। যিনি গত বার মজা করে বলেছিলেন, ‘আমাকে আর ডাকবেন না, নতুন আর কী বা বলব!’ এ বার তাঁর ব্যারিটোন কণ্ঠে শোনা গেল এই রাজ্যের কন্যাশ্রী প্রকল্প, উড়ালপুলের ‘মা’ নামকরণের কথা। ভারতীয় ছবিতে মেয়েদের সামাজিক অবস্থান, প্রতিবাদ কী ভাবে যুগের সঙ্গে বদলে গিয়েছে বক্তৃতায় তার সবটাই উঠে এল। তাঁর গত কয়েক বছরের বক্তৃতার সম্ভার নিয়ে এ বার বেরোল এক বই: ‘ব্যারিটোন’। সেই বই মমতা তুলে দিলেন
অমিতাভের হাতে।
শাহরুখ আগের প্রতিশ্রুতিমাফিক সচেষ্ট, ভাঙা বাংলায় বক্তৃতা গিয়েছেন। কাজল, সঞ্জয় দত্ত, পরিণীতি চোপড়ারাও তাঁদের মতো করে কলকাতার উৎসবকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। সঞ্জয়ের মনে পড়েছে, তাঁর দিদিমা জদ্দনবাই একদা এ শহরেরই বাসিন্দা ছিলেন।
এ ভাবেই ইন্ডোর স্টেডিয়াম ভেসেছে সে কালের, এ কালের নানা নারীর কথায়। উদ্বোধনী বাংলা ছবিতেও তো নারীর ক্ষমতায়ন। অসুস্থ এক তরুণী স্বেচ্ছায় বৃদ্ধাবাসে এসে বদলে দেন সেখানকার কড়া ডাক্তারের নিয়মকানুন। ডাক্তার বুঝতে পারেন নিজের ভুল।
কী হবে নারী-পুরুষ ভেদে? ইন্ডোরের অডিও ভিস্যুয়ালে সারাক্ষণ ফেস্টিভ্যালের বটমলাইন: সিনেমা সকলের। সিনেমা ফর দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল, অব
দ্য পিপল।
কথাটা আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কনের, সকলের জানা। কিন্তু লিঙ্কনের দেশে আজ, ১১ নভেম্বর, প্রবীণ দিবস উপলক্ষে ছুটি। সেই ভেটেরান্স ডে-তে
কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল নিরুচ্চারে শোনাল নিঃসঙ্গ বার্ধক্য, নারীর ক্ষমতায়ন, আঞ্চলিক ভাষার সম্মানের কথা। আজকের ‘ট্রাম্পড’ দুনিয়াকে আর কী ভাবেই বা জবাব দিত সে? সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা।