নিজের সাথে কথা বলা…..
১৯৭৮ সাল, বাপীকে গ্রেফতারের পরে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে আমরা জানি না। মায়ের চাকরী চলে গেছে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকের স্ত্রী হওয়ার কারনে। বাড়ীর সামনের দোকানগুলো নিয়মিত ভাড়া দেয় না- পেছনের পুকুরটা দখল হয়ে গেছে। প্রতিবছরের পুজোতে নতুন জামা একটা আর দুটো হাফপ্যান্ট। জুতোর বদলে ইস্কুলে পড়ার কেডস। এটা ডিম মাঝে দিয়ে দুভাগ করে দুই ভাইবোনের খাওয়া। মার ভাগে ঝোল আর আলু।
সেই সময়ের একটা পুজোর কথা মনে পড়ছে- আমরা কেউ সেবারের পুজোতে নতুন কাপড় পাইনি, মায়ের হাতে টাকা নাই। পুজোর দুদিন আগে মা কোথা থেকে ৫০০ টাকা যোগার করলেন। আমরা পাবনার নিউমার্কেটে গেলাম। আমার আর দিভিইয়ের জামা কেডস হলো। মায়ের হাতে আর দুইশো টাকা, তাড়া দিচ্ছেন দর্জির দোকনে যাবার।
আমি আর দিদিভাই মায়ের দুহাত ধরে কাদছি- মা তুমি একটা শাড়ী কেনো। মা রাজী নন। শেষে আমরা তাকে ছেড়েই প্রায় লাকী কর্ণার দোকনের দিকে ছুটলাম। পেছনে মা। একটা সুতির শাড়ী, ১৫০ টাকা দাম। মা কিনলেন। পুরো শাঢ়ী জুড়ে গোল গোল বিস্কুট আকৃতির প্রিন্ট। দুই ভাইবোনে শাড়ীটার নাম দিলাম বিস্কুট শাড়ী। পুজোর দিন সকালে সুভাষ দা আমাদের পোষাক ডেলিভারী দিলেন। আমরা জয়কালী বাড়ীতে প্রতিমা দেখতে গেলাম।
অনেক বছর কেটে গেছে, আজ সেই সময়ের দিকে তাকাই, মা নেই- বাপীরও নাই। আমি বসে আছি আমার নিজের সামনে- মা তোমার ছেলেটা এখন চলতি বাজারের হিসাবে মোটামুটি বেতন পায়। কোথায় তুমি? তোমকে কি একটা শাড়ী কিনে দিতে ইচ্ছা হয় না আমার?
হে আমার বিষন্ন কৈশর কোথায় হারিয়ে গেলে হারানো মার্বেলের মতোন?
অঞ্জন রায় : সাংবাদিক।
নোট: লেখকের ফেসবুক পেজ থেকে।