শিল্প- সংস্কৃতি

আজ বিশ্ব নাট্য দিবস

Md. Sohel Ahmed Khan   মার্চ ২৭, ২০১৮

সংস্কৃতি ডেস্কঃ প্রতি বছর ২৭ মার্চ ‘বিশ্ব নাট্য দিবস’ পালিত হয় ১৯৬২ সালে হেলসিংকিতে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউটের আন্তর্জাতিক কংগ্রেসে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী । বিশ্বের সব দেশের নাট্যকর্মীদের মধ্যে ঐক্য স্থাপন, সম্প্র্রীতি, উদ্দীপনা সৃষ্টি এবং এর মাধ্যমে নাটকের উন্নয়ন সাধন করাই এই দিবস পালনের মূল লক্ষ্য  । বিভিন্ন দেশে বিদ্যমান ইন্টারন্যাশন্যাল থিয়েটার ইনস্টিটিউটের (আইটিআই) স্থানীয় কেন্দ্রগুলো প্রধানত এই দিবস পালনে কর্মসূচি গ্রহণ করে। আইটিআই কেন্দ্রের উদ্যোগে ১৯৮০ সাল থেকে বাংলাদেশে ‘বিশ্ব নাট্য দিবস’ পালন শুরু হয়।

১৯৮৬ সালে বাংলাদেশে আইটিআই ও গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের যৌথ উদ্যোগে ‘বিশ্ব নাট্য দিবস’ পালনের ব্যপক কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ঢাকার ৫টি স্থানে পথনাটক, একই সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ এবং র‌্যালিতে অংশ নেয়। তাদের প্রত্যেকের পরিহিত পোশাক থাকত নাট্যকেন্দ্রিক। এ ধরনের র‌্যালি আনন্দ উৎসবের সঙ্গে ঢাকার বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করত। ১৯৮৯ থেকে এই দিবসটি পালনের বিষয়টিতে পুনরায় উৎসাহ লক্ষ্য করা গেছে। এ সময় উদ্যোক্তা হিসেবে যুক্ত হয় সম্পৃক্ত নাট্যদল। ১৯৯১ সাল থেকে আবার জমে উঠতে শুরু করে বিশ্ব নাট্য দিবসের আয়োজন। রাজধানী ঢাকায় নাট্যকর্মীদের সমাবেশ, আড্ডা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানাবিধ কর্মসূচির মাধ্যমে দৃষ্টি আকর্ষণ করে ‘বিশ্ব নাট্য দিবস’। এভাবেই প্রতি বছর এ দেশে পালিত হয়ে আসছে দিবসটি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে নাটক অনেকটাই প্রসারতা লাভ করেছে এ কথা সত্যি। কিন্তু পাদপ্রদীপের আলোয় আসতে পারেনি এ দেশের নাট্যধারা।

চর্যাপদ থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত নানা আঙ্গিকের নাটক নিয়ে কাজ করে চলেছেন এ দেশের লোকশিল্পীরা। দেশের গ্রামগঞ্জে এখনও ঐতিহ্যবাহী ধারায় নাটকের মঞ্চায়ন হয়। নিভৃত গ্রামে এখনও রামায়ণ, মহাভারত, কারবালার মর্মান্তিক উপাখ্যান, পীরপাঁচালির নাট্য মঞ্চায়ন হয়। সংযাত্রা, কিচ্ছাগান, ভাসান যাত্রা, রূপকথা, আলকাপ, গম্ভীরার মতো অসংখ্য আঙ্গিকে নাটক অভিনীত হয় এখনও। এসবের সঙ্গে রয়েছে আদিবাসীদের নিজস্ব নাট্যআঙ্গিক। অবহেলা আর অনাদরে অনেক আঙ্গিক হারিয়ে যাচ্ছে চিরতরে। পাল্টে যাচ্ছে এসবের মূলধারার ঐতিহ্য। এসব আঙ্গিক সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ অদ্যাবধি সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি। বিলুপ্তির পথে পড়ছে এক সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় নাট্যআঙ্গিক যাত্রা। আমাদের ঐতিহ্যবাহী নাটকের ইতিহাস রক্ষা করতে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন নাট্যকার ও অধ্যাপক সেলিম আল দীন। ঐতিহ্যবাহী নাটক নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কোনো কাজ এখন বলতে গেলে হচ্ছেই না। কাজ করার সুযোগও পর্যাপ্ত নয়। কিছু একাডেমিক গবেষণা যা হয়েছে বা হচ্ছে, তা একেবারেই গ্রন্থাগারকেন্দ্রিক। স্বাধীন বাংলাদেশে নাটক যতটা এগিয়েছে, ততটাই শিকার হয়েছে অবহেলার। প্রশাসনিক জটিলতায় যাত্রাশিল্প এখন বিলুপ্তপ্রায়। মানবেতর জীবনযাপন করছেন এ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রায় ১০ লাখ মানুষ। বিশ্ব নাট্য দিবসকে কেন্দ্র করে থিয়েটার ফেডারেশান ও ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটউট (আইটিআই) বাংলাদেশ কেন্দ্র যৌথভাবে বিভিন্ন কর্মসূচির পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। মঞ্চনাটকের কর্ণধার অনেকেই বর্তমান নাটক সম্পর্কিত মানুষের চিন্তা-চেতনায় যথেষ্ট হতাশ। তারপরও তাদের আশা, ইলেকট্রনিক মিডিয়ার পাশাপাশি মঞ্চনাটকের প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ সৃষ্টিতে সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টাকে কাজে লাগাতে হবে।

About the author

Md. Sohel Ahmed Khan