সাদমানকে নিয়ে তার বাবা বিবিসি’কে বলেন, ‘তাকে সময় নিয়ে টেস্টের জন্য তৈরি করেছি। তাকে রানের থেকে উইকেটের মূল্য বেশি দিতে শিখিয়েছি।’ অভিষেক টেস্টে দারুণ এক ইনিংস খেলে সাদমান উইকেটের দারুণ মূল্যই দিলেন।
প্রায় দুই বছর ধরে বাংলাদেশের অন্য ওপেনারদের ব্যাটে যে রানখরা সেটি কাটালেন ২৩ বছর বয়সী সাদমান। পাক্কা টেস্ট ক্রিকেটারের মেজাজেই ব্যাট করেছেন নিজের অভিষেক ইনিংসে। গড়েছেন অভিষেক টেস্টে বাংলাদেশের ওপেনারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বল খেলার রেকর্ডও।
১৯৯ বলে ৭৬ রামের ইনিংসের অর্ধেক ৩৮ রান করেছেন সিঙ্গেলস দিয়ে, ছয় বাউন্ডারিতে এসেছে ২৪ আর সাত ডাবলস থেকে ১৪, ৫১ টি স্কোরিং শটস। বাকি ১৪৮ বলে কোনো রান করেননি। অফস্টাম্পের বাইরে ও আশপাশে কিছু বল ছেড়ে দিয়েছেন। আর ৬০ ভাগ ডেলিভারি ডিফেন্স করেছেন।
তার ব্যাটিংয়ের পুরোটা সময়জুড়েই বোঝা যাচ্ছিলো উইকেটে টিকে থাকার তীব্র ইচ্ছা ও তাড়না।
মোহাম্মদ আশরাফুল কিংবা কদিন আগে ভারতীয় তরুণ ব্যাটসম্যান পৃথ্বীর মতো অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি পাননি সাদমান। কিন্তু ৭৬ রানের যে ইনিংসটা খেলেছেন সেটা ছিল নিঁখুদ-নিটুট। ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলারদের না দিয়েছেন আউটের সুযোগ, না অভিষেক টেস্ট খেলতে নামায় তার মধ্যে ছিল কোন চাপ। খুব সাবলীলভাবে সামলেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেস-স্পিন।
………………………………………………………………………………………..
সাদমানকে নিয়ে আরো পড়তে পারেন…
সাদমান ইসলাম অনিক : কে এই নতুন টেস্ট ক্রিকেটার ?
………………………………………………………………………………………..
তবে আউট হওয়ার বলটা আর রুখতে পারলেন না। দেবেন্দ্র বিশুর লেগ স্পিনটা একটু বেশিই টার্ন করল। সাদমান ব্যাট দিলেন কিন্তু বল লাগলো তার পায়ে। আউট হয়ে ফিরলেন তিনি। ঠিক তার আগের বলেই দারুণ এক ফ্লাইট মারেন বিশু। সাদমান দারুণ দক্ষতায় ফেরার তার সেই বল।
দলের হয়ে ৭৬ রানে ফিরলেও সাদমান তার প্রতিভার দারুণ পরিচয় দিয়েছেন। টেস্টে ক্রিকেটে তিনি লম্বা দৌড়ের ঘোড়া হতে এসেছেন জানান দিয়েছেন সেটি। তার ব্যাটিংয়ের ধরণ যেন তামিমের থেকে পাওয়া। কাভার ড্রাইভ, কাট শট কিংবা পুল। তামিমের মতো করেই খেলেন তিনি। তবে তামিমের শুরুর দিনকার মতো আগ্রাসন নেই তার ব্যাটে। পরিণত দিনকার তামিম হয়েই যেন ম্যাচ খেলতে নেমেছেন সাদমান।
বাঁ-হাতি এই ব্যাটসম্যান তার ক্যারিয়ার কতদুর নিয়ে যেতে পারবেন তা বলার জো নেই। আগে থেকে মাতামাতিরও নেই খুব সুযোগ। কিন্তু তামিমের সঙ্গী হিসেবে এ পর্যন্ত যাদের দেখা হয়েছে তাদের মধ্যে সাদমানের একটা পার্থক্য আছে। বুঝে, দেখে-শুনে খেলেন তিনি। ভালো বলকে সম্মান দিয়ে রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে সামলান। বাজে বল দিলে শট খেলেন।
দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে সাদমান বলেন, ‘সেঞ্চুরি মিস করেছি বলে তেমন কোনো হতাশা নেই। তবে একটু তো সবারই হয় আসলে। ডেব্যু ম্যাচে সেঞ্চুরির চাওয়া তো সবারই থাকে। তবে ওরকম কোনো হতাশা নেই। চেষ্টা করেছি দলের জন্য। যতটুকু দেওয়ার দরকার ছিল আমি সেরকম ব্যাটিং করার চেষ্টা করেছি। হয়তো পুরোটা করতে পারিনি। দলের যেরকম দরকার ছিল শেষ করতে পারিনি। আমার মনে হয় আরেকটু দিতে পারতাম দলকে।’