আজ রোববার আওয়ামী লীগের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত হচ্ছে। দিনটিকে স্মরণীয় করে তুলতে আজ থেকে দেশজুড়ে মাসব্যাপী বর্ণাঢ্য কর্মসূচি পালিত হবে। উৎসবমুখর পরিবেশে নেতাকর্মী-সমর্থকরা প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আনন্দে যোগ দেবেন- এমনটাই প্রত্যাশা দলের নীতিনির্ধারকদের।প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল শনিবার এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাঙালি জাতির প্রতিটি মহৎ, শুভ ও কল্যাণকর অর্জনে আওয়ামী লীগের ভূমিকা রয়েছে। জনগণই আওয়ামী লীগের শক্তি। ভবিষ্যতেও আওয়ামী লীগ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, সুখী-সমৃদ্ধ, উন্নত ও আধুনিক সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করবে। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার উন্নয়ন, গণতন্ত্র ও দেশবিরোধী অপশক্তির মূলোৎপাটন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমি বিশ্বাস করি, এ দেশের শান্তিপ্রিয় জনগণ উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রতিষ্ঠিত করবে।’
১৯৪৯ সালের ২৩-২৪ জুন পুরান ঢাকার কেএম দাস লেনে খান বাহাদুর মৌলভী কাজী আবদুর রশীদের রোজ গার্ডেনের বাসভবনে প্রগতিশীল এবং তরুণ মুসলিম লীগ নেতাদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় রাজনৈতিক কর্মী সম্মেলন। এতে গঠিত হয় পাকিস্তানের প্রথম বিরোধী দল পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় ১৯৫৫ সালে কাউন্সিলের মাধ্যমে দলের নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দ বাদ দিয়ে নতুন নামকরণ হয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ। স্বাধীনতার পর নামকরণ হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।প্রতিষ্ঠাকালে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সভাপতি, শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক ও কারাবন্দি অবস্থায় শেখ মুজিবুর রহমান দলের অন্যতম যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৬৬ সালে শেখ মুজিব দলের সভাপতি ও তাজউদ্দীন আহমদ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রামে সামনের কাতারে থেকে তরুণ মুজিব নিজেকে জনপ্রিয় নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে ১৯৭১ সালে ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে দেশের স্বাধীনতা লাভ। এ ছাড়া বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, চুয়ান্নর নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয় ও সরকার গঠন, বাঙালির মুক্তির সনদ হিসেবে বিবেচিত ছেষট্টির ছয় দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাবিরোধী ১১ দফা আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থান এবং সত্তরের নির্বাচনে বাঙালির নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভসহ গণতন্ত্র ও স্বায়ত্তশাসন অর্জনের সব আন্দোলন-সংগ্রামেও দলটি ছিল সম্মুখ সারিতে।১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে নৃশংস হত্যার পর তারই কন্যা শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র এবং মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলন শুরু করেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪ ও সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে ঐতিহাসিক বিজয়ের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ এখন পর্যন্ত চার দফায় ক্ষমতায় এসেছে।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাকে ইতিমধ্যে বর্ণাঢ্য সাজে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। জাতীয় ও দলীয় পতাকার পাশাপাশি রঙবেরঙের ব্যানার-ফেস্টুন আর নৌকা প্রতিকৃতি দিয়ে সেজেছে বিভিন্ন সড়ক ও সড়কদ্বীপগুলো। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয়, নবাবপুর রোডের পুরনো কার্যালয়সহ ঐতিহাসিক রোজ গার্ডেনকে বর্ণাঢ্য আলোকসজ্জায় রাঙিয়ে তোলা হয়েছে। দিনটি উপলক্ষে ঢাকায় তিন দিনব্যাপী এবং সারাদেশে মাসব্যাপী কর্মসূচিও পালন করবে আওয়ামী লীগ।