হার্টের ডাক্তারের চেম্বারে বসে থেকে দেখেছি, শতকরা ৯৫ জনই হার্টের রোগী নয়। কিডনি স্পেশালিস্টের চেম্বারে দেখেছি, অন্ডকোষে ব্যথা নিয়ে রোগী এসেছে কিডনির চিকিৎসা নিতে। মোটামুটি সব স্পেশালিস্টের কাছেই এই একই অবস্থা। যারা আসে, তাদের সিংহভাগই সেই বিভাগের রোগী নয়।
অথচ এই রোগীরা জিপি-র কাছে গেলে অনেক হয়রানি থেকে মুক্তি পেত। এদের শতকরা ৯০ জন জিপি-র চিকিৎসাতেই সুস্থ হয়ে যেত। আর জিপি-রা সঠিক রোগীকে সঠিক বিভাগের ডাক্তারের কাছে রেফার্ড করতে পারত। ফলে স্পেশালিস্ট ডাক্তারদের ওপর চাপও কম হতো।
কানাডায় দেখেছি জিপি রেফার না করলে কোনো রোগী স্পেশালিস্ট ডাক্তারের কাছে যেতে পারে না। ইংল্যান্ডসহ আরো অনেক দেশেই এই রেফারেল সিস্টেম আছে। স্পেশালিস্টরা রেফার্ড না হলে সেই রোগীকে চিকিৎসা দিতে পারবেন না। কিন্তু আমাদের দেশে এই সিস্টেম না থাকার ফলে স্পেশালিস্ট চিকিৎসকদের ওপর ব্যাপক চাপ তৈরি হয়। তারাও ঘরে হেঁটে আসা টাকা ফেরত পাঠান না দরজা থেকে। ফলে অন্য অসুবিধার পাশাপাশি রোগীরা ডাক্তারের প্রয়োজনীয় মনোযোগ থেকে বঞ্চিত হন অনেক ক্ষেত্রেই।
তখন চলো ইন্ডিয়া! সেখানকার ডাক্তাররা ধন্বন্তরি। তাদের ব্যবহার মধুর। তারা খুব উচ্চমানের ডাক্তার। সেখানে চিকিৎসা খরচ অনেক কম। গত ১০ দিন কলকাতায় থাকার সুবাদে সেখানকার খবরের কাগজ পড়ার সুযোগ হয়েছে। প্রতিদিনের পত্রিকায় অন্তত তিন-চারটি করে খবর দেখেছি যেগুলোর শিরোনাম ’ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু’, ’ক্লিনিক ভাংচুর’, ’অগ্রিম টাকা জমা দিতে না পারায় নার্সিং হোমে অপারেশন হলো না রোগীর’।
সেই ইন্ডিয়াতে এই দেশের রোগীরা যায় দলে দলে। গিয়ে মুরগি হয় শতকরা ৯৯ জন। যে লোক নাটোরে বউয়ের হিস্টারেকটমি(ইউটেরাস অপসারণ) অপারেশনে ২০ হাজার টাকা খরচ করতে রাজি নয়, সে মুকুন্দপুরে একমাস থেকে দুই লাখ রুপি খরচ করে বউয়ের একই অপারেশন করিয়ে এল। এটা আমার নিজের চোখে দেখা। আর পরীক্ষা-নিরীক্ষা?
সেখানকার ডাক্তাররা কত যে অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা করায়, সাতদিনের সমীক্ষা করলে তা স্পষ্ট ধরা পড়বে যে কোনো সচেতন ব্যক্তির চোখে। হ্যাঁ, সুপার স্পেশালিস্টের কাছে জটিল রোগীদের যেতেই হয়। তার পরিমাণ খুব সামান্য হবারই কথা।
কিন্তু দলে দলে রোগীদের ইন্ডিয়া যাওয়ার পেছনে ছড়ানো রয়েছে মিথ্যা অসংখ্য মিথ। সেইসাথে এখানে অতিরিক্ত চাপ এবং লোভজনিত ব্যাপারগুলিও আছে। প্রাইভেট প্র্যাকটিসে রেফারেল সিস্টেম চালু করুন। দেখবেন পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করবে দ্রুত।
সূত্র : কথাসাহিত্যিক জাকির তালুকদার এর ফেসবুক ওয়াল থেকে।