শিল্প- সংস্কৃতি

বারী সিদ্দিকীর জন্মদিন আজ

নরসুন্দা ডটকম   নভেম্বর ১৫, ২০১৮
বারী সিদ্দিকীর জন্মদিন আজ

খ্যাতিমান সংগীত শিল্পী, গীতিকার ও বংশী বাদক বারী সিদ্দিকীর জন্মদিন আজ।

১৯৫৪ সালের ১৫ নভেম্বর নেত্রকোনায় জন্ম গ্রহণ করেন এই লোক ও মরমী ধারার গায়ক।

বারী সিদ্দিকীর বাবা প্রয়াত মহরম আলী ও মা প্রয়াত জহুর-উন-নিসা। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে বারী সিদ্দিকীই ছিলেন সবার ছোট। ছোটবেলায় বয়স যখন তিন কিংবা চার হবে সেই বয়সেই মা’র কাছে তার প্রথম শুনা গান ছিলো ‘শ্বাশুড়িরেও কইয়ো গিয়া’। সেই গানের সুরই বারী’র মনে গেঁথে যায় ছোটবেলায়। যদিও তার পরিবার গানের পরিবার ছিলো না। কিন্তু সৌখিন গানের পরিবার ছিলো তার।

বারীর নানা শেখ সাবির সরদ বাজাতেন। আর তার নানীর কাছ থেকেই মা গান শিখেছিলেন টুকটাক। বারীর বয়স যখন পাঁচ তখন বড় ভাইয়ের বাঁশিতে ফু দেয়া তার মধ্যে অন্যরকম আগ্রহের সৃষ্টি করে বাঁশি শেখার প্রতি। বারীর নানারা দুই ভাই ছিলেন। তার নানার একটা সঙ্গীতের দল ছিল। নব্বইয়ের দশকে ভারতের পুনে গিয়ে পণ্ডিত ভিজি কার্নাডের কাছে তালিম নেন। দেশে ফিরে এসে লোকগীতির সাথে ক্লাসিক মিউজিকের সম্মিলনে গান গাওয়া শুরু করেন।

বারীর বাবা গানের সাথে জড়িত না থাকলেও গান বাজনা তার পছন্দের ছিলো। বারী তার বাঁশি শেখা এবং গান শেখার দুটোরই উৎসাহ পেয়েছেন তার মায়ের কাছ থেকে। মার কাছ থেকে জীবনে তিনি প্রথম যে গানটির সুর বাঁশিতে তুলে নিয়েছিলেন সেই সুরটিই তিনি পরবর্তীতে হুমায়ূন আহমেদ’র ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ চলচ্চিত্রে ব্যবহার করেছিলেন। সেটি ছিলো শ্যাম বিচ্ছেদের একটি সুর। কলিটা ছিলো এরকম ‘আস্ট আঙ্গুল বাঁশের বাঁশি/মধ্যে মধ্যে ছ্যাদা/ নাম ধরিয়া ডাকে বাঁশি/ কলংকিনী রাধা/।

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………..

বারী সিদ্দিকীর ৬৪তম জন্মদিন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১৫ নভেম্বর) টেলিভিশন পর্দায় গান করবেন বারী সিদ্দিকীর মেয়ে ইলমা সিদ্দিকী ও ক্লোজআপ ওয়ান তারকা নোলক বাবু।

দু’জনই ‘মিউজিক ক্লাব’ অনুষ্ঠানের বিশেষ এই আয়োজনে বারী সিদ্দিকী’র জনপ্রিয় গানগুলো কণ্ঠে তুলবেন। সরাসরি সম্প্রচারিত এই অনুষ্ঠানে দর্শকরা ফোন করে অতিথির সাথে কথা বলার পাশাপাশি গানের অনুরোধ করতে পারবেন।

গানের পাশাপাশি তারা স্মৃতিচারণ করবেন বারী সিদ্দিকীকে নিয়ে, কথা বলবেন তাদের জীবনের নানা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, জানা-অজানা তথ্যসহ ভবিষ্যতের পরিকল্পনা নিয়েও।

নাহিদ আহমেদ বিপ্লবের প্রযোজনায় বাংলাভিশনের ফোনোলাইভ স্টুডিও কনসার্টটি সরাসরি প্রচার হবে বুধবার (১৪ নভেম্বর) রাত ১১টা ২৫মিনিটে।

……………………………………………………………………………………………………………………………………………………..

চলচ্চিত্রের গানে আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা পাবার পরপরই বাজারে তার দুটি একক অ্যালবাম আসে। একটি ‘দুঃখ রইলো মনে’ এবং অন্যটি ‘অপরাধী হইলেও আমি তোর’। দুটি অ্যালবাই লুফে নেয় শ্রোতারা।

তিনি একজন বংশীবাদক হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাঁশি বাজিয়ে শ্রোতা দর্শককে মুগ্ধ করেছেন। ১৯৮০ সালে বারী সিদ্দিকী পেশাগতভাবে বাঁশি বাজানো শুরু করেন। ১৯৮৬ সালে প্রথম বিটিভিতে ‘সৃজন’ অনুষ্ঠানে বাঁশি বাজান। বারী সিদ্দিকী ‘মাটির পিঞ্জিরা’ নামের একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন। এটি নির্মাণ করেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ফেরারি অমিতের নির্দেশনায় ‘পাগলা ঘোড়া’ নাটকেও অভিনয় করেছিলেন। তবে অভিনয় করতেন নিতান্তই অনুরোধে এবং শখের বশে।

বিখ্যাত গান- শুয়া চান পাখি, ‘আমার গায়ে যত দুঃখ সয়’, ‘সাড়ে তিন হাত কবর’, ‘পুবালি বাতাসে’, ‘তুমি থাকো কারাগারে’, ‘রজনী’, ‘আমার গায়ে যত দুঃখ সয়’, ‘ওলো ভাবিজান নাউ বাওয়া’, ‘মানুষ ধরো মানুষ ভজো প্রভৃতি গানের জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত।

জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদ হাসন রাজার গান নিয়ে কাজ করছেন। রাজধানীর সাসটেইন স্টুডিওতে রেকর্ডিং হচ্ছে। এখানে বাঁশি বাজাচ্ছেন বারী সিদ্দিকী। হঠাৎ বিদ্যুৎ বিভ্রাট। সব কাজ বন্ধ। সহশিল্পীরা বারী সিদ্দিকীকে গান গাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। পরপর কয়েকটি বিচ্ছেদ গান গেয়েছিলেন তিনি। সেদিন বারী সিদ্দিকীর গান শুনে মুগ্ধ হন হুমায়ূন আহমেদ।

হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনে আমন্ত্রণ জানানো হয় তাঁকে। বারী সিদ্দিকীকে দু-একটা বিচ্ছেদ গান গাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। সেই রাতে ধানমন্ডিতে হুমায়ূন আহমেদের বাসায় বসার ঘরে ৩৫টা গান গেয়েছিলেন তিনি। সবাই মুগ্ধ হয়ে শুনেছিলেন নতুন এক মেধাবী শিল্পীর গান। অন্য রকম কণ্ঠ। কণ্ঠ দিয়ে তিনি সবাইকে পুরোটা সময় আবিষ্ট করে রেখেছিলেন। ১৯৯৮ সালে হুমায়ূন আহমেদ ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ছবির কাজ করেন। তখন এই ছবিতে গান গাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ পান বারী সিদ্দিকী। এই ছবির ‘শুয়া চান পাখি আমি ডাকিতাছি তুমি ঘুমাইছ নাকি’, ‘পুবালি বাতাসে’, ‘আমার গায়ে যত দুঃখ সয়’, ‘ওলো ভাবিজান নাউ বাওয়া’, ‘মানুষ ধরো মানুষ ভজো’ গানগুলো বারী সিদ্দিকীকে পৌঁছে দেয় সারা দেশের মানুষের কাছে।

বারী সিদ্দিকী ১৬০টি গান গেয়েছেন। মৃত্যুর আগে তিনি একটি অ্যালবামের কাজ করেছেন। ১০টি গানের কথা লিখেছেন দেলোয়ার আরজুদা শরফ, সুর ও সংগীত পরিচালনা করেছেন এবং গানগুলোতে কণ্ঠ দিয়েছেন বারী সিদ্দিকী।

বারী সিদ্দিকী ছিলেন মূলত গ্রামীণ লোকসঙ্গীত ও আধ্যাত্মিক ধারার শিল্পী। সঙ্গীতকে ভালোবেসে জীবনভর গানের সঙ্গেই ছিলেন। ২০১৭ সালের ২৪ নভেম্বর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

আরো পড়ুন…..

মধ্যবিত্ত বাঙালির প্রিয় কথক হুমায়ূন আহমেদ : লুৎফর রহমান রিটন

দীপাবলির ছবি পোস্ট করায় সমালোচিত দিশা পাটানি

About the author

নরসুন্দা ডটকম