মরণের সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে শেষ পর্যন্ত রাজীব মারাই গেলেন! কাটা হাত বাসের গায়ে ঝুলিয়ে রেখে হসপিটালে গিয়েছিলেন তিনি বাঁচার জন্য। ঘরে ছোট দুই ভাইয়ের কারনে রাজীবের বেঁচে থাকাটা খুব দরকার ছিলো। কিন্তু হলোনা। মৃত্যু তাকে পৃথিবী থেকে চিরদিনের জন্য তুলে নিয়ে গেলো।
যাক, মরতেতো একদিন সবাইকে হবে। কিন্তু রাজীবের মৃত্যুতে কয়েকটি প্রশ্ন জাগে- বাসের গায়ে লেগে থাকা রাজীবের কাটা হাতের ছবি পেপার পত্রিকায় দেখে গরু ছাগল চেনা চালকরা কি লজ্জা পেয়েছেন? এই বিভসৎ দৃশ্য দেখে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী মহদয়গণ কি আঁতকে উঠেছেন? রাষ্ট্র? এমন মর্মান্তিক ঘটনার পর রাস্তায় পথচারি এবং ছোটছোট যানবাহনকে অতিষ্ঠ করে তোলা গরু চেনা বাস চালকদের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কেউ কি জোড়ালো চেষ্টা করেছেন? কই! চোখেতো পড়েনা।
সবকিছু যেমন ছিল তেমনই তো আছে। যেইকার রাস্তা সেই রাস্তায় আছে। গরু ছাগলকে সন্মান দেয়া যেই চালক সেই চালকই আছেন। জেদাজেদি করে বাস চালানর বিশৃঙ্খলা যেমন ছিল তেমনই আছে। রাস্তায় অসহায় জীবন গুলো যেমন অবহেলিত ছিল তেমনই আছে। বিভিন্ন চ্যানেলে নতুন ইস্যুতে সেট সাজিয়ে বসা টক’শো গুলো যেমন ছিল তেমনই আছে।
শুধু ঘৃণা আর অস্বাভাবিক মৃত্যু যন্ত্রণা নিয়ে চলে গেলেন রাজীব। বাঁচতে হতো বলেই মৃত্যুই যেন তাকে পঙ্গুত্ব জীবন থেকে বাঁচিয়ে দিলো। মরে এখন রাজীব নামের ছেলেটি অনেক নিরাপদ। আর তাকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঢাকার রাস্তা পার হতে হবেনা। ডিগ্রী অর্জনের লক্ষ্যে আর তাকে ঝুলেঝুলে কলেজে যেতে হবেনা। বাসের হাতল ধরে আর তাকে ঘন্টার পর ঘন্টা ঢাকার যানজটে ঘামতে হবেনা।
আর তাকে একটি চাকরীর জন্য কোটা সংস্কার আন্দোলন করতে হবেনা। তাকে আর দানবের হিংস্রতায় হাত হারিয়ে মৃত্যু যন্ত্রণায় হসপিটালের বেডে কাৎরাতে হবেনা। নিজ ভবিষ্যতের কথা ভেবে, ছোট দুই ভাইয়ের কথা ভেবে। বিনিদ্র রজনির দূস্বপ্ন তাকে আর কখনোই তাড়া করে ফিরবেনা। ঢাকার যন্ত্রণা থেকে রাজীব হয়তো মরে বেঁচে গেলেন। কিন্তু, বারবার রাষ্ট্রের চোখের সামনে কিছু উৎশৃঙ্খল চালকের দাপাদাপিতে বাংলার ভবিষ্যত রাজীবরা আর কত অকাল মৃত্যু বরণ করলে রাষ্ট্র শৃঙ্খলা ফিরাতে বাধ্য হবে জানতে ইচ্ছে করে?
সৈয়দ অহিদুজ্জামান ডায়মন্ড ( চলচ্চিত্র নির্মাতা)