অবশেষে আবারও ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ উৎক্ষেপণের চূড়ান্ত দিনক্ষণ ঠিক হয়েছে। দেশের বহুল আলোচিত ও প্রতীক্ষিত প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ মহাকাশে উড়ছে আগামী ১০ মে (বৃহস্পতিবার)।এদিন বিকেল নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা থেকে স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ করবে স্পেস এক্স।প্রকল্পটির পরিচালক মোহাম্মদ মেসবাহুজ্জামান সোমবার আরটিভি অনলাইনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।তিনি বলেন, স্পেস এক্স থেকে আমরা এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পেয়েছি।
যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে এই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হবে।এর আগে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার জানিয়েছিলেন ৭ মে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট মহাকাশে উৎক্ষেপিত হবে।তারও আগে কয়েক দফা সময় পরিবর্তন করা হয়।তবে মন্ত্রী এটাও জানিয়েছিলেন, স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ নির্ভর করে আবহাওয়ার ওপর। তাই দিনক্ষণ পরিবর্তন হওয়া স্বাভাবিক।
এদিকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নিয়ে মহাকাশে যে রকেটটি উড়াল দেবে তার ফায়ার টেস্ট সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি মহাকাশ গবেষণা সংস্থা স্পেস এক্স।মহাকাশে বঙ্গবন্ধু ১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপিত হলে নিজস্ব স্যাটেলাইটের অধিকারী বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ ঘটবে।বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ হলে বাংলাদেশের ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াগুলো নিজস্ব স্যাটেলাইট ব্যবহারের সুবিধা পাবে।
এ ছাড়া এই স্যাটেলাইট স্থাপনের মাধ্যমে অন্য দেশের ওপর বাংলাদেশের যেমন নির্ভরতা কমবে, তেমনি দেশের অভ্যন্তরীণ টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে।ফ্লোরিডার কেইপ কেনাভেরালের লঞ্চ প্যাড থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি মহাকাশ অনুসন্ধান ও প্রযুক্তি কোম্পানি ‘স্পেসএক্স’ এর ফ্যালকন-৯ রকেটের মাধ্যমে এই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হবে। তবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এটি উৎক্ষেপিত হলেও এর সব কাজ পরিচালিত হবে দেশ থেকে।
মোস্তাফা জব্বার এই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ দেশবাসীকে দেখার সুযোগ করে দিতে মিডিয়ার প্রতি আহ্বান জানান।কীভাবে উৎক্ষেপণ হবে?প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, ফ্যালকন-৯ রকেটে চারটি অংশ রয়েছে। ওপরের অংশে থাকবে স্যাটেলাইট, তারপর অ্যাডাপটর। এরপর স্টেজ-২ এবং সবচেয়ে নিচে থাকে স্টেজ-১। একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর রকেটের স্টেজ-১ খুলে নিচের দিকে নামতে থাকে, এরপর চালু হয় স্টেজ-২। পুনরায় ব্যবহারযোগ্য স্টেজ-১ পৃথিবীতে এলেও স্টেজ-২ একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত স্যাটেলাইটকে নিয়ে গিয়ে মহাকাশেই থেকে যায়।
উৎক্ষেপণ স্থান থেকে ৩৬ হাজার কিলোমিটার দূরে যাবে এই স্যাটেলাইট। ৩৫ হাজার ৭০০ কিলোমিটার যাওয়ার পর রকেটের স্টেজ-২ খুলে যাবে। এরপর স্যাটেলাইট উন্মুক্ত হওয়ার পরপর এর নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি এবং কোরিয়ার তিনটি গ্রাউন্ড স্টেশনে চলে যাবে। এরপর স্যাটেলাইটটি সম্পূর্ণ চালু হওয়ার পর এর নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের গ্রাউন্ড স্টেশনে হস্তান্তর করা হবে।কত টাকা ব্যয় হচ্ছে?প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এই স্যাটেলাইট প্রকল্পের বাস্তবায়ন হচ্ছে।
এই স্যাটেলাইটে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার থাকবে, যার ২০টি বাংলাদেশের ব্যবহারের জন্য রাখা হবে এবং বাকিগুলো ভাড়া দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে।এর মাধ্যমে স্যাটেলাইট নির্ভর বাণিজ্য সম্ভাবনা দেখছে বাংলাদেশ সরকার। আশা করা হচ্ছে এ উপগ্রহ উৎক্ষেপণের পর বিদেশি স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ বছরে ১৪ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হবে বাংলাদেশের।