সফলতা সোনার হরিন। প্রতিনিয়ত এই সোনার হরিনের পিছনে ছুটছি আমরা। সফলতার সংজ্ঞা এক এক জনের কাছে এক এক রকম হলেও সবাই এক বাক্যে স্বীকার করেন, ব্যর্থতাই সফলতার পেছনের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আর তাইতো সুন্দর পিচাই এর মতে ব্যর্থতাই হলো সফলতার চাবিকাঠি।
বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান গুগলের সিইও সুন্দর পিচাইয়ের গল্প অনেকটা সিনেমার মতোই। সাফল্য আর ব্যর্থতাকে নিজ হাতে ছুঁয়েছেন, ভারতের একটি সাধারণ পরিবারের সন্তান তিনি। ব্যর্থতাকে তিনি কিভাবে দেখছেন? সিলিকন ভ্যালিতে দেওয়া এমন এক বক্তব্যে তিনি বলেন, ব্যর্থতা হচ্ছে সফলতার মতোই জীবনের একটি অংশ। সফলতাকে স্বাভাবিকভাবে নেওয়ার মধ্য দিয়েই একটি ভালো কম্পানি আরো সেরা হয়ে ওঠে। যদি আপনি সব ক্ষেত্রেই সফল হয়ে থাকেন তাহলে হয় আপনি একজন অবিশ্বাস্য রকমের মানুষ (যা অনেকটা অসম্ভব) নতুবা আপনি জীবনে খুব বড় কোনো লক্ষ্য স্থির করতে পারেননি।
তিনি বলেন, ‘আমরা সব সময় উচ্চাকাঙ্ক্ষা সামনে রেখেই কাজ করি এবং যৌক্তিকভাবে সব সময় সফল হই না। যদি সফল হতাম তবে আমরা সব সময় যথেষ্ট উচ্চাকাঙ্ক্ষী হতাম না।’ তিনি বলেন, ‘যদি আমরা লক্ষ্যের ৭০ শতাংশেও পৌঁছাতে পারি সেটিকে অবশ্যই সফলতা হিসেবে মেনে নেব।’
তাঁর মতে, যেকোনো উদ্যোগের ক্ষেত্রে ব্যর্থতা একটি অপরিহার্য অংশ। অবশ্যই ব্যর্থতাকে উদ্যাপন করবেন, কারণ এখান থেকে যে শিক্ষা আসবে সেটাই সাফল্যের পথ দেখাবে। তিনি বলেন, ব্যর্থতা ও ঝুঁকির শিক্ষা স্কুলেই দেওয়া উচিত। কারণ শিক্ষালয়ে এটি না জানলে বয়স হলে মানুষ যেকোনো উদ্যোগের ক্ষেত্রে ব্যর্থতা ও ঝুঁকির ভয়ে থাকে। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি প্রত্যেক শিক্ষা ব্যবস্থাতেই সৃজনশীলতা থাকা দরকার। যেখানে প্রকল্পভিত্তিক বাস্তব জ্ঞান শেখানো হবে। এ ক্ষেত্রে আমরা শিশুদের ঝুঁকি নেওয়া শেখাব, ব্যর্থতার জন্য তাদের শাস্তি দেব না।’ ভারতের তামিলনাড়ুতে খুব সাধারণ একটি পরিবারে জন্ম সুন্দর পিচাইয়ের, শৈশব কেটেছে চেন্নাইয়ে। জন্মের আগে তাঁর মা স্ট্যানোগ্রাফার হিসেবে কাজ করতেন। বাবা রঘুনাথ পিচাই ছিলেন একটি কারখানার বিদ্যুৎ মিস্ত্রি।
সুন্দরের ছেলেবেলার কথা স্মরণ করে রঘুনাথ বলেন, ‘অফিস থেকে এসে আমি ওর সঙ্গে গল্প করতাম। অফিসের নানা ঘটনার কথা বলতাম। ও যখন একটু বড় হলো, আমার কাজ সম্পর্কে তার আগ্রহ বাড়তে থাকল। আমার মনে হয়, এখান থেকে ওর প্রযুক্তির প্রতি ঝোঁক তৈরি হয়েছে।’
ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় ভালো ছিলেন সুন্দর। আইআইটি খড়গপুরে স্নাতকে ভালো ফলাফল করেন। স্ট্যানফোর্ডে ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স অ্যান্ড সেমি কন্ডাক্টর ফিজিকস নিয়ে পড়ার জন্য বৃত্তি পান। তাঁর স্কুলের এক শিক্ষক বলেন, ‘প্রতিটি নম্বরের জন্য যুদ্ধ করেছে সুন্দর। বিশেষ করে গণিত ও পদার্থবিদ্যায়। কখনো ভুল করলে তা শুধরে বারবার করার চেষ্টা করেছে।’
স্ট্যানফোর্ডে পিএইচডি সম্পন্ন করে অ্যাকাডেমিক ক্যারিয়ার গড়ার চিন্তা করেছিলেন সুন্দর পিচাই। তবে পরে সে চিন্তা থেকে সরে গিয়ে সিলিকন ভ্যালির সেমিকন্ডাক্টর নির্মাতা অ্যাপ্লাইড ম্যাটেরিয়ালসে চাকরি নেন। এরপর ২০০২ সালে পেনসিলভানিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ করার পরিকল্পনা করেন। ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল গুগলে চাকরির জন্য সাক্ষাৎকার দিতে আসেন। ওই দিন গুগল বিনা মূল্যের মেইল সেবা জিমেইল চালু করে।
গুগলে চাকরি হয়ে যায় সুন্দরের। এরপর ধীরে ধীরে পরিচিত হন গুগলের করপোরেট সংস্কৃতির সঙ্গে। নতুন নতুন ধারণা দিয়ে গুগলের প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজের আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন। মারিসা মেয়ার, অ্যান্ডি রুবিন, কামাংগার, হুগো বাররা, ভিক গানডোটরার মতো সহকর্মীদের পেছনে ফেলে তিনি উঠতে থাকেন ওপরে। গুগল ক্রোম ও ওস বিভাগের পণ্য ব্যবস্থাপনা দলের নেতৃত্ব দেন তিনি। এ ছাড়া গুগল ড্রাইভ, জিমেইল ও ম্যাপস সেবা তাঁর দায়িত্বে ছিল। ২০১৫ সালের আগস্টে এসে তিনি শ্রেষ্ঠত্বের গুণে গুগলের সিইও হন।
উদ্যোক্তার খোঁজে ডটকম।