কবিতা সাহিত্য

কবিতাগুচ্ছ : গৌতম অধিকারী

নরসুন্দা ডটকম   অক্টোবর ১৪, ২০১৮

ছাব্বিশের প্রলাপ
||||||||||||||||||||||||||
আপনি এসে গেছেন ?
এখনও তো প্রায় একমাস বাকি!
ঠিক আছে, এসেই যখন পড়েছেন
চুপচাপ দাঁড়ান ঐখানে।
এই আলোবৃত্তে আপনার প্রবেশ নিষেধ।
এখানে এখনও আমরা বেহুলাভাসানে বাঁচি
তাম্রপাতে লিখে রাখি বর্ণাশ্রম-লিপি,
আমাদের জঠর জুড়ে মধ‍্যযুগীয় ক্ষুধা
এবং কণ্ঠে বিষাক্ত বর্ণপরিচয়।
“গোপাল বড়ো সুবোধ বালক” নয়।

দক্ষিণ দিগন্ত থেকে ঈশ্বরের পুত্ররা
এখনও দাক্ষিণ‍্য বিলোয়,
মা,মা চীৎকারে চলে অন্ধ মাধুকরী।
সন্ন‍্যাসীর ছদ্মবেশে ভোগী মহাপুরুষেরা
এখনও গড়ে তোলে কর্পোরেট ধর্মের ফাঁদ।

অতএব
পৃথিবীতে নির্দিষ্ট সময়ের দুশো বছর আগে এসে
যে ভুলের বৃত্তে স্বেচ্ছানির্বাসন বেছে নিয়েছিলেন,
সেই বৃত্তটাকে কঠিন গরাদে ঘিরেছি আমরা।
আপনার ভুলকে অমলিন রেখে স্মৃতিযাপন চলে।
প্রতিটি সেপ্টেম্বরের ছাব্বিশে
আপনার মর্মর মূর্তিকে মালা পরিয়ে
আপনার নির্বাসনকে মহিমান্বিত করে তুলি।
আশীর্বাদ করুন পিতা।

আগুন ও স্বপ্নের কবিতা
||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জীবন ঘষে আগুন পাবি আগুন মানে কী?
সেই আগুনটা চিনিয়ে দিল সায়বেনেদের ঝি।

জীবন জুড়ে মেঘের মিছিল,মেঘ মানে কি জল?
জলের শরীর ফসলবতী, কান্নাতে টলমল।

জীবন মানে যন্ত্রনা সে কালীদহে কোন ঝড় ?
নারীর বিষে স্বর্গ কাঁপে কার ভাঙে যে ঘর !

তবুও, ও মেয়ে তুই নাচ,
কালনাগিনীর ছোবল জিতে বাঁচার মতো বাঁচ।
নীল হয়ে যাক তোর ঐ শরীর আগুন পোড়া খাক,
জীবন জুড়ে মৃত্যু ঘিরুক স্বপ্ন বেঁচে থাক।

প্রেমিক
|||||||||||||||||||||||||||||||
তাহলে তাই হোক,
তুমি ও আমি মুখোমুখি দুজন,
নিতান্ত নির্জন; কোথাও কিছু নেই
আমরা আমাদের মতো করে পাবো
দুজন দুজনকেই।

জিগ্যেস করলাম,
থাকবে না মাথার উপর অনন্ত আকাশ ?
ফসলবতী মাঠে সবুজ বিছানা?
ধানপূর্ণিমার রাত জুড়ে বাতাসের শীৎকার?
নদীময় প্রসারিত গতি?
কিংবা অনামিকা রোদ্দুরে দু-একটা ডুমুর
খসে পড়ার টুপটাপ শব্দ ?

কেন থাকবে না!
তার চোখে বিস্ময়।
আমি জানি, আসলে সে বলতে চেয়েছিল,
থাকবে সমস্তই,
শুধু মানুষ চাই না, মানুষ।

আমাকে চলে আসতেই হয় মানুষের কাছে।
আমার মাথার উপরে মেঘবতী আকাশ,
আমার পেছনে শস‍্যবতী মাঠ,
আমার পায়ের শব্দে ম্লান হাসে বিষাদ বাতাস,
টুপটাপ ঝরে পড়া ডুমুরের শোকে
আমার সময় বড়ো বিষন্ন প্রেমিক।

তবুও লেনিন
|||||||||||||||||||||||||||
শরত আকাশ দেখো চপল কিশোরী,
মেঘ ছুঁড়ে খেলা করে নদীর মতন।
এপাশ ওপাশ মেপে খোঁজেন ঈশ্বরী
অথবা ঈশ্বর এক আ-মোদী রতন।

টুটে গেছে কেন্দ্রিকতা গণতন্ত্র মেষ,
সময়ের যাত্রী হয় দ্বান্দ্বিক দর্শন।
শ্রেণি-চেনা সচেতন ব্রহ্মচারী বেশ,
এখন খোঁজেন শুধু আত্ম-উন্নয়ন।

তবুও শরত গাবে আগমণী গান
সুবর্ণনগরে রাত যতই মলিন
ধান্দার বান্দা নয় শামুকের প্রাণ,
অনার্য আকাশ জুড়ে শুধুই লেনিন।

তারপর
|||||||||||||||||||||||||||||||
তারপর…
তারপর তৈরি হয় এক একটা গল্প,
গল্পটা বয়ে নেয় বাক‍্য,শব্দ আর ধ্বনির
অনন্ত মিছিল।
আসলে জীবন, যেখানে লুকিয়ে থাকে
সব গল্পেরই প্রত্নপ্রতিমা।

তারপর…
তারপর তৈরি হয় এক একটা জীবন,
জীবনকে বয়ে নেয় সুখ, দুঃখ আর বেদনার শোভাযাত্রা।
আসলে গল্প, যেখানে ছদ্মবেশে থাকে
সব মানুষের কথা।

তারপর…
তারপর তৈরি হয় এক একটা কথা,
কথাকে বাঙ্ময় করে বাক‍্য ,শব্দ আর ধ্বনির
প্রবাহ।
আসলে তো ব্রহ্ম, যেখানে মহাকাশ জুড়ে
অনন্তের আবাস।

জীবন বা গল্প ,যার কথাটি আপাতত ফুরোয় বটে,
কিন্তু ‘নটে গাছটি মুড়োয় না।’

কবিরা
|||||||||||||||||||||||||||||||||
এইসব সুনীল মানুষের মুখ সে শব্দে গেঁথে যায়।
ভাঙা-পোড়া কাঠ আর মৃতবৎসা নগরীর বুকে কবিরা দুরন্ত তাপস।
ভেঙে ফেলে নিয়মের বাঁধ অনিয়ম উচ্ছ্বাসে
ক্রমাগত হেরে যেতে যেতে
একদিন জয়ী হয়ে
কঠিন পাথরজঠরে ফোটায় ফুল।
দুর্বোধ্য সঙ্কেতে হানে কালের ইশারা
ভুলে থাকে ইহলোক পরলোক স্মৃতি
ঈশ্বরহীন পৃথিবীতে সে একক ঈশ্বর।
শৃঙ্খল ভেঙে যায় বৈদিকসময়ের
বৌদ্ধিক সারণী ছেড়ে পথের কুয়াশায়
কবিরাই পথ খোঁজা নিঃসঙ্গ বাউল ।।

                                                          কবি: গৌতম অধিকারী, কলকাতা, ভারত।

About the author

নরসুন্দা ডটকম