হিউস্টনের রে মিলার পার্কে আজকের সন্ধ্যাটা কাটলো রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে। জীবনে এরকম সন্ধ্যা খুব বেশি আসে না। হিউস্টন আমার মেয়ের শহর। আমার মেয়ে নদী ওর বর ডেভিড আর বেড়াল ছানা কিটক্যাটকে নিয়ে এই শহরের রোজেনবার্গ এলাকায় নিবাস গেড়েছে।
কন্যা নদীর কাছে এসে এবার দেখা হয়ে গেলো রবি ঠাকুরের সঙ্গে। দেখা হয়ে গেলো বললে মনে হবে এ দেখা হঠাৎ দেখা, চলার পথে। বলা ভালো, রবির দেখা পাবো বলেই আজ গিয়েছিলাম হিউস্টনের এল্ডরিজ পার্কওয়ের রে মিলার পার্কের সবুজ অঙ্গনে।পার্কে ঢুকতেই চোখে পড়লো ডান দিকের বৃক্ষশোভিত আলো-আঁধারীর ভেতরে অন্যরকম দ্যুতি ছড়িয়ে মাথা উঁচু করে দীপ্মান, দাঁড়িয়ে আছেন রবীন্দ্রনাথ। আমার রবীন্দ্রনাথ। আমাদের রবীন্দ্রনাথ।
পেছনে দু’হাত রেখে চিরচেনা পোশাক ও ভঙ্গিতে পূর্ণশরীরের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অসাধারণ প্রাণবন্ত ব্রোঞ্জনির্মিত ভাস্কর্যটি এখানে নির্মাণ ও স্থাপন করেছে টেগোর সোসাইটি অব হিউস্টন। ২০১৩ সালে। টেগোর সোসাইটি অব হিউস্টনের এ এক গৌরবদীপ্ত অবদান। এটাই আমেরিকায় স্থাপিত প্রথম ভাস্কর্য, রবীন্দ্রনাথের।
দৃষ্টিনন্দন একটা বৃত্তের ভেতরে উঁচু বেদির ওপর যাকে বলে ফুল ফিগার বা লাইফ সাইজ স্ট্যাচু বা পূর্ণদেহ ভাস্কর্য। বৃত্তের ভেতর নিচ থেকে চোখ জুড়ানো মন ভরানো আলোর যে প্রক্ষেপণ ব্যবস্থা সেটা এতোটাই শৈল্পিক যে কিছুক্ষণের জন্যে মনে হলো–আমি যেনো বা পৌঁছে গেছি স্বপ্নলোকের দ্বারে/ যেথায় স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ডাকিছেন আমারে…।
হিউস্টনের বরাবরের চরম গরম পরিস্থিতিটা এখন অনেক ফুরফুরে। পার্কে ঢুকতেই বাংলাদেশের বসন্ত সমীরণের মতো একটা স্নিগ্ধ বাতাস এসে জাপটে ধরলো।
রবি ঠাকুরের সামনে দাঁড়ানো মুগ্ধ আমার হাস্যোজ্জ্বল ছবিটা ক্যামেরাবন্দি করেছে প্রীতিভাজন তন্দ্রা চক্রবর্তী।’নিসর্গ নীলিমা’র লেখক অমৃতের সন্তান আমাদের প্রিয় দ্বিজেন দার(দ্বিজেন শর্মা)ভাস্তি এই মেয়েটা।
সত্যি, অন্যরকম একটি আলোকোজ্জ্বল সন্ধ্যা এসেছিলো আজ আমার জীবনে।
আমার মুক্তি আলোয় আলোয়…
হিউস্টন, ১৪ অক্টোবর ২০১৮।
নোট: বাংলাদেশের খ্যাতিমান ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন’র ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া।