কবিতা সাহিত্য

মাহবুব রহমান’র কবিতাগুচ্ছ

মাহবুব রহমান   মে ৫, ২০১৭
মাহবুব রহমানের কবিতা

কবিতার অক্ষরে প্রসবিত ভুবন

অচেনা পথে চলতে চলতে ক্লান্ত হইনি। এলোমেলো ভাবনার উড়ন্ত বাসনা কখনও চেপে রাখিনি। অবিশ্রান্ত ঝড়োচ্ছাসে উপকূলে দাঁড়িয়ে থাকা বৃক্ষদের শেকড়ে, কখনও আবার জল ভাঙ্গনের তীরে বিছিয়ে দিয়েছি পদচছাপ আমাদের। ভালোবাসা তখন উদভ্রান্ত ও পাগল করে তুলেছিল। নিত্যদিনের দুর্ভাবনা পাশে সরিয়ে দিতে সকলের কত অভিনয়। কি চেয়েছি আমরা?
সমীকরণহীন জীবনের দরজা খুলে উঠোনে পা ফেলে উম্মুক্ত পথের উপর এসে দাঁড়াবো, যে পথ টেনে নিয়ে যাবে দুরে- সুদুরে, অসম্ভব কোন মোহনায়। সমাজনীতির অবোধ্য ধারা স্পর্শ না করুক, এটাও চেয়েছি। নিস্কলুষ আকাশে উৎকর্ণ হয়ে কত কি শুনেছি, নক্ষত্রের উড়ন্ত ডানায় শব্দের সঞ্চালন ও মৃত্যুর দিকে ধাবিত পরাণ। খোলা চোখে দেখেছি নক্ষেত্রের রূপ, দেখেছি আঁধার। আঁধার নিপতিত জীবনের মুখাবয়ব। দীর্ঘশ্বাসের চিৎকারে নিভে যাওয়া পতঙ্গের নীল বুক, যার ভেতরে অন্তহীন বাসনার প্রদীপগুলো সঞ্চিত। সন্ধ্যাকাশ আরো গভীরতায় অষ্টবাহু বাড়িয়ে আলিঙ্গন করে পৃথিবীকে। যেন উৎকন্ঠার চাদরে ঢেকে যায় চর্তুদিকের বিচিত্র প্রবাহ।
সামান্য মানুষের ভাবনা পরাস্ত না হলেও দিকভ্রান্তের মত চলতে হয় বহুক্ষন, বহু ভাবনার সিংহদুয়ারে করাঘাত করে।
পথ হারাইনি যদিও। পথগুলো একে-বেকে গেছে। পথ এসে নেমেছে অন্ধকারে। সেই অন্ধকারে বসে গোঙানি শুনেছি প্রাচীনকালের কোন দিকভ্রান্ত যাত্রীর। যখন অবিশ্বাস্য ভঙ্গিত্বে সটান দাঁড়াতে চেয়েছি, পারিনি। জেনেছি অক্ষমতার কালপ্রবাহ রুস্ট করে মৌসুম, অরুণ্যগুলোকে। ঝড়োবাতাস চুরমার করে দিয়ে যায়। তখন শেকড় ওপরানো বৃক্ষের পরিণতির ভেতর স্পষ্ট হয়ে উঠে ভবিতব্যের পরিচয়। স্রোতক্লান্ত নদীদের করূনাতাও প্রত্যক্ষ করেছি। কি এক দুর্দশা প্রবাহমান জীবনধারাকে স্তব্ধ অথবা শূণ্য প্রায় করে তোলে, রৌদ্রমুখর বালুতটের দিকে তাকিয়ে তার হিসেব মেলাতে চেয়েছি। জেনেছি, পতন ও উত্থান, উত্থান ও পতন এই দুরহ যৌক্তিকতায় বিভিন্ন প্রান্তের ছবি পাল্টে যায়। রুদ্ধশ্বাসে যার কারন নির্ণিত হওয়া বাস্তবে অসম্ভব। তবু দুচোখ মেলে তাকিয়ে দেখা রুগ্ন আর অক্ষমতার পাথর চাপা উদ্ভিদের ভবিষৎ, ফ্যাকাশে আর পুষ্টিহীনতায় ডাল পালা ছড়িয়ে তবুও বাঁচার চেষ্টা, বৈচিত্রময় জীবন প্রবাহে। জীবনের স্মৃতি-বিস্মৃতি, বিষন্ন মনন কত কিছু ধারন করতে সক্ষম, সে সব অনুমান না করে পেরিয়ে আসতে চেয়েছি সেই শূন্যতা ভরা দিগন্তের আর্তনাদ, সেই উদভ্রান্ত পথা চলা, সেই নিঃসহায় সময়ের দীর্ঘ প্রচ্ছদ। তারপর?
বিবর্ণ যন্ত্রণা, হতাশা এবং প্রেমে পড়া। ধুয়ে ফেলতে চেয়েছি হৃদয়ের ক্ষত চিহ্ন। অক্ষমতাকে ঠেলে দিয়েছি দুরে। বেদনার বহুমাত্রিক ভাষা যেমন সমুদ্রের বুকে ক্রন্দন করে- জাগ্রত হয় তরঙ্গ মালায়, আবার দূরে ভেসে যায়, কষ্টগুলোকে ভাসিয়ে দিয়ে আবার ফিরে আসতে চেয়েছি। আমরা প্রণয়সিক্ত হতে চেয়েছি প্রহরের প্রতিটি ঝড়োন্মত্ত ক্ষণে কিংবা নীরব সন্দিক্ষণে। আমাদের অবয়বে গলিত জগতের ছায়ায় অদ্ভুদ বিষ্ময় বাসা বেঁধেছিল, কি সে বিষ্ময়- খুঁজে বেরিয়েছি অলিতে গলিতে, পথের বাঁকে বাঁকে। অজস্র কৌতুহলে বিকৃত করিনি অঙ্গচ্ছাপ। দৃঢ়তর ভাবনার ডানায় উড়ে গেছি অচেনা প্রান্তরে। বসেছি মাটিতে, বৃক্ষ শাখায়, ধ্বনি শুনেছি প্রাচীন পৃথিবীর। উৎকন্ঠ আঙুলে খুঁড়েছি বৃক্ষের মর্মমুল, তাদের অন্তহীন জিজ্ঞাসা। যারা বৃক্ষের দৃঢ়তায় সটান দাড়িয়ে থাকে খোলা আকাশের দিকে মুখ তুলে। অসম্ভব সুন্দরের দ্বারস্থ হয়ে, জানতে চেয়েছি- মনোলোভা এ জগতের মর্মার্থ।
ভৌগলিক আভিজাত্য সুদৃঢ়, ক্ষুধা-অসম্মান-রক্তক্ষরণ এবং বোধোদ্বয়ের ঘুর্ণিপাকে ছড়িয়েছি আত্মমূল। বির্বতিত সন্ধ্যার রাঙা পায়ে ঘুঙুর বেধে, কল্পবিলাসী কবিদের মত উৎকন্ঠ হয়েছি। মেঘের অতল থেকে চোখ তুলে যদি দেখা হয় সদ্য প্রস্ফুটিত নক্ষত্র এবং ভাবনার পানসিতে ভাসমান কষ্টগুলোকে। রুগ্ন নিসঙ্গতাকে চুর্ন-বিচুর্ন করে ঝংকৃত হয়েছি। কবিদের মতোই নিভৃতে, নীরবে। প্লাবিত উপকুলে এঁকেছি স্বপ্নের কলোধ্বনি, নিসর্গের ব্যর্থতা, আত্মার বিস্ফোরিত চিত্রপট। যখন কিছুই চিরাচরিত অভিজ্ঞানে পুড়ে ঠায় দাড়িয়ে থেকে সুর্যদ্বয়- সুর্যাস্ত কিংবা গভীর অন্ধকার দুবাহু ঝড়িয়ে আলিঙ্গন করেছে। পুর্নবার আমরা ভালাবেসেছি, প্রেমে পড়েছি। সেই প্রেম, সেই ধ্বংসলীলায়। দুরারোগ্য আসক্তির স্রোতে ভাসিয়েছি স্বপ্ন সমুহ। কুলে ভেড়েনি তরী, দুরত্ব বাড়িয়েছে, ডুবিয়ে মেরেছে। মরিনি কখনও। আমাদের অক্ষমতা চিররুগ্ন সময়কে পাথর পিষ্ট করেছে। তবু ভাবনায় তলিয়ে রেখেছে চঞ্চল পাখিদের গ্রীবায় জড়িয়ে থাকা বিস্ময়ভরা প্রহরের রঙ। ভালোবাসার প্রসঙ্গ সেখানে দীর্ঘশ্বাসের দগ্ধ প্রান্তরে নির্বাক আভিজাত্যের ম্লান উদভাসন।
ঘুমুতে পারিনি আমি, কতকাল। দগ্ধ খরায় পুরে খাক হয়ে গেছে বুক। উতালা হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়েছি যন্ত্রণার শুকনো পাতা, মর্মরিত কষ্টের অগ্নিপিন্ড এনে স্থাপন করেছি হৃদয়ে। জ্বালিয়ে দিয়েছি স্মৃতির সোপান। অশ্রুজলে ভেসেছি তেপান্তরে। আসন্ন বর্ষার মেঘে ছড়িয়ে কোমলতা দু’চোখের পাপড়ি ছুয়েছে। কেঁদেছি, শিশুদের মত। কেঁদেছি, নির্ঝর বৃষ্টির সঙ্গী হয়ে । সকল প্রান্তরে আমার কান্নার ভাষা জলে- কাদায় মুদ্রিত হয়ে আছে।
ভালোবাসলে মানুষের চোখে নামে ঝর্ণাধারা। পাহাড়ের গভীর ছায়া যে চিত্তের পাশে এসে পড়শি হয়। তখনও জানিনি মুঠোভরা স্বপ্নের মুক্তদানা ছড়িয়ে দিয়েছি সমুদ্রের বুকে, গহন সঙ্গমে বিচিত্র অহংকারে প্রসবিত হয় উপকুলে।  জোৎস্না ও চাঁদ অবিরত চুম্বনে রাঙিয়ে দেয় ঐশ্বর্য্যময়ীর বক্ষতট। অকস্মাৎ প্রণয়ের আকুতি সুদীর্ঘ আকাশের ওপার থেকে উড়িয়ে আনে বর্ণীল প্রজাপতি। পতঙ্গের গান, সে যেন ওরাই প্রিয়তম আমার, সতীর্থ আমার। কালপ্রবাহের খোজে দুঃখ ও দুরারোগ্য নেশার ঘোরে অরণ্য পাহাড় জঙ্গল পেরিয়ে পিছু পিছু ছুটেছি সেই ধ্বনিটি স্পর্শ করতে। বহুকাল ধরে নির্ঝরিত বাতাসের কানে কানে যা শুনেছিল উদভ্রান্ত কবিদের দল। আমিও নাগাল পেতে চেয়েছি সেই অতিন্দ্রীয় ধ্বনির উৎসস্থল। কেউ বলেন, মহাশূন্যের বিস্তৃীর্ন প্রান্তর হতে এ ধ্বনিটি উচ্চকিত হয়েছিল। কারো মতে, নীরব প্রার্থনায় মগ্ন মানুষের ইন্দ্রিয় হতে হঠাৎ সে উদভাসিত। কেউ বলেন, নিঃসঙ্গ মানুষের অমরত্ব প্রিয় আত্মায় কখনো কখনো যে শব্দটি প্রস্ফুটিত হয় গোলাপের রঙে, তার বিচিত্রতায় মুগ্ধ মানুষ। যদি তিনি কবি হন কলমের নিব বেয়ে শব্দের অক্ষরে অক্ষরে প্রসবিত হয় এই ভূবন। ভেবেছি, শূন্যতার গভীর গহনে যে রেখেছে নিজস্ব কন্ঠস্বর, মাতৃভাষার প্রতিটি বর্ণমালায় যে রেখেছে কোমল স্পর্শ, ভালোবাসার আরক্ত ভাবনাগুলো যে উড়িয়ে দিয়েছে সেই ঠিকানায়, যেখানে অন্তহীন জিজ্ঞাসা- জিজ্ঞাসার সদুত্তর আপন মনে ঝংকৃত হয়। বাতাসেরা যা বহন করে আনে কোন কবি চিত্তে- প্রেমের নিষিক্ত সুবাসে। সে ধ্বনিটি প্রিয়জন শোনে, শোনোনি তা-কি শত্রু-মিত্র আমার।

কবিতা

ছায়াহীন দূরগম্য পথ

চলতে চলতে পথ ফুরিয়ে যায়
ফিরে দেখি পেছনে পড়েনি ছায়া
আলো আধাঁরীর নৈঃশব্দে- কন্ঠ উধাও
সংগতিহীন চারিদিকে দগ্ধ শশ্মানের মায়া।

বসে থাকি একাকিত্বের সাগর তীরে
নোনাজল- হৃদয়ে ভাসে অবোধ্য সাম্পান
বহুদূর যেতে হবে, বহুপথ?
তরঙ্গধ্বনিতে অশরীরী কবিতার স্বর- নিভন্ত শপথ।

শূন্যভূমে গড়ে উঠে স্বপ্নের ঘর
মহালোক বিছিয়েছে করুন উঠোন
অরণ্য জলে সবুজ ছায়াহীন মৃত্তিকা-নির্দয় কঙ্কর
পায়ে পায়ে রক্তঝরে, চঞ্চল অবিনাসী অক্ষর।

ফিরতে পারিনি- ফিরবো না ঘরে
বাসনার সন্ধিস্থলে অবিরাম অব্যক্ত শব্দঝরে
পায়ের চিহ্ন মুছে যায়- তবু দুরগম্য পথে
হাতছানী দিয়ে ডাকে বেনামী শপথ।

অমীমাংসিত কাব্য

প্রশ্নবিদ্ধ নয় কোনকিছু
কোনকিছু প্রশ্নাতীতও নয়।
প্রতিটি প্রহর হামাগুড়ি দিয়ে বেঁচে থাকা
অবোধ্য যন্ত্রণার কালস্রোত পেরিয়ে বেঁচে থাকার চরাচর, বহুদুর।

প্রেমে পরলে স্পর্শ করে যন্ত্রণাময় পাপ
প্রেমে না পরেও দূরবর্তী নয় বেদনার্ত আধাঁর।
পাপীদের যন্ত্রণা
পাপ না করেও যন্ত্রণা
বেঁচে থাকলে যন্ত্রণা
জীবনের পরেও নরক যন্ত্রণা।

বাঁচিয়ে রাখার জন্য অথবা বেঁচে থাকার জন্য
মানুষের কোন মানচিত্র নেই
বিধান নেই
প্রেম নেই?
চারিদিক নিরুত্তর, নিরুত্তর।

পাখীরা বলেনি ফুলেরা বলেনি

পাখীর সাথে সখ্যতা
গড়ে উঠতে উঠতে কেটে যায় কত কাল
ফুলের সাথে ফুলের বন্ধনারীতি
শিখতে শিখতে ঝরে যায় হাজার প্রহর
স্বপ্নস্রোত বহমান অঙ্গীকার
প্রনয়বদ্ধ হয় কোন মহাকালে
পাখীরা বলেনি
ফুলেরা বলেনি
বলেনি কোন নির্ভূল প্রাণ।

তোমার ফেরা

তোমার ঘরে ফিরতে পারো
ঘরগুলো যে ফাঁকা
শূন্যউঠোন-শূন্যছায়া
তোমার ফেরার পথে পথে ছবিগুলো আকাঁ।

রাত্রী হলে মনে পরে
রাত্রীগুলো একা
তোমার ঘরে তুমিহীনা
শয্যাগুলো ফাঁকা।

নদীর দীর্ঘশ্বাসে

সভ্যতার অবসর হলো এবং ভালবাসার
ধ্বনিত কাষ্টগুলো অমলিন, ঝড়োক্রান্ত মেঘ-বৃষ্টির।
নিরর্থক প্রহর ঘিরে উড়ন্ত স্বপ্নের সর্বনাস
অমৃত যন্ত্রনায় শৃঙ্খলিত হৃদয়
ভুবনের অক্ষম বিলাসী পর্যটক
কবি- পাখী- নীলজল- সমুদ্র তরঙ্গ
গৃহহীন করেছে যাদের- কবিতার অবসর।

ফিরছি সেই তল্লাটে
জন্মভূমির ম্লান রোদ্দুরে-বৃক্ষ জলে
দায়হীন ভালবাসাহীন ভাবনার জিবাস্মে
জড়িয়ে থাকে যাবতীয় আত্মচরিত।

সারাংশ নিংড়ে বুঝেছি উভচর মতাদর্শের ভীরে
মেষ নেই জল নেই নদীদের দীর্ঘশ্বাসে ঝরাপালকের গান
হাড়িয়ে ফেলেছি ভালবাসা-জিজ্ঞাসার বিজ্ঞান।

রুগ্ন পথে মৈত্রী

ঘরদোর রোদ্দুর
জীবন সমান
আধাঁর দীপালী
হৃদয়হীন জ্বলন্ত শশ্মান।

দু’ধারে ছড়ানো আহবান
কাকে বুকে নেবে- পরাবে শিরস্ত্রান
একনদী দুই তীর- অভিন্নস্রোত
দু’কুলে অশ্রুপাত- দু’ধারে ভাঙ্গঁন

ভাল আছি- ভাল নেই
রগ্নে পথে মৈত্রী- সখ্যহীন গহীন ছায়া
উঠোন বাড়ীঘর- ধুলোজল ব্যথিত স্বপ্ন
ব্যর্থ প্রহর তবু আলপনা, অধিশ্বর ।

নির্ভূল পাঠ, সর্বসময়

নি:সঙ্গের আবশ্যপাঠ, কবিতা ;
কবিতার অন্তরে নীলভ জ্যোৎস্না ঝরে
প্রাণপনে সমর্পিত দু’চোখেরছায়া
নৈ:শব্দে প্রথিত গহিন আধাঁরকাল।

সারল্যের উজান ঠেলে দূরগন্তব্যের পাড়ে
ভিড়বো বলে বৈঠা চালাই
বুকে পোড়ামাটি- ভাঙ্গাঁ নদী-থৈ থৈ তরঙ্গ বিলাপ
উদাস আকাশ নক্ষত্রহীন বিভ্রম কুয়াশা ফাটলে
উকিঁদেয় দ্বীধার বালুচর
বুঝিনি তখন- যখন চতুর্ভেদী কোলাহলে
চৌচির আপন ভূবন। জ্বলন্ত সভায় নিরুত্তর মৌনতা
প্রমদমত্ত প্রহরে প্রসবিত নয় কিছু, সদুত্তর মেলেনি যার।

অজন আরশীতে ক্লান্ত দৃষ্টিপাত
খুজেছি আপন ছায়া-ছায়ালোকের আঁধার
ধুসর দিগন্তে হৃদয়হীন গুঞ্জন
শিশির ধ্বনিতে জাগ্রত অন্তর, অজস্র শপথ।

ভালবাসা, অশৃঙ্খলিত উচ্চারণে
নিভৃতে সীমাহীন অশ্রু তরঙ্গ আঁকে
খুজে ফিরি কবিতার কাছে শর্তহীন আশ্রয়, তখনও নিঃসঙ্গতার নির্ভূল পাঠ, সর্বসময়।

নতুন নামের আবাহনে

বদলে নিলে নদীদের নাম, এমনকি ঐ আকাশেরও ।
হলদে সবুজ তৃণলতা- কৃঞ্চচূড়া-বাবুই পাখি
নতুন নামের আবাহনে সাজবে সবাই।

খোলা চুলে দাড়াও যখন উঠোন জুড়ে
কি নাম হবে বউ কথা কও- ঝড়োহাওয়ার?
সমুদ্র আর পাহাড় ছোয়া ঝর্ণাগুলোর কি নাম দেবে।
দুর্বাঘাসে লুকিয়ে থাকা অব্যক্ত সব শিশির কণা
তোমার রাঙা চরণ ছুয়ে নামিয়ে আনে
দিনরাত্রির অভিবাদন।
বৃক্ষবনে হৈ হুল্লোর তোমার নামে
ঘাটের কুলে ঘুমিয়ে পড়া দুঃখী নদীর
জল গুলো যে উছলে উঠে
যেন ভরা নদীর তরঙ্গস্বর চর্তুদিকে, তোমার মতন।
মেঘের ভেলায় ভেসে আসে আকাশ পরী
কি নাম হবে বদলে যাওয়া নতুন রীতির।
ধুলো কাদায় স্বপ্নে আঁকা চিত্রকল্প
স্বপ্ন ভরা দু’চোখ যখন তাকিয়ে থাকে দূর ভূবনে
কি নাম দেবে চর্তুদিকে ছড়িয়ে থাকা রৌদ্রগুলোর
রাত্রিগুলোর?

মাহবুব রহমান: কবি ও কলাম লেখক।

About the author

মাহবুব রহমান

Leave a Comment