কারা পাচ্ছেন ২০১৭ সালের ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার। রীতি অনুযায়ী, ঘোষণার আগ পর্যন্ত অজানাই ছিল বিজয়ীদের নাম। অবশেষে ঘোষণা এলো। দর্শকদের তুমুল হর্ষধ্বনির মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত তালিকায় নাম উঠল অধ্যাপক যতীন সরকার, অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও পিয়াস মজিদের।
যতীন সরকার তার ‘মুক্তবুদ্ধির চড়াই-উতরাই’ বইটির জন্য প্রবন্ধ, আত্মজীবনী, ভ্রমণ ও অনুবাদ শ্রেণিতে, কবিতা ও কথাসাহিত্য শ্রেণিতে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম তার ‘একাত্তর ও অন্যান্য গল্প’ বইয়ের জন্য এবং পিয়াস মজিদ তার ‘মনীষার মুখরেখা’ বইয়ের জন্য ‘হুমায়ূন আহমেদ তরুণ সাহিত্য পুরস্কার’ বিজয়ী হয়েছেন। ‘মুক্তবুদ্ধির চড়াই-উতরাই’ বইটি কথাপ্রকাশ, ‘একাত্তর ও অন্যান্য গল্প’ অন্যপ্রকাশ এবং ‘মনীষার মুখরেখা’ মাওলা ব্রাদার্স প্রকাশ করেছে।
দেশের বরেণ্য সাহিত্যিকদের সম্মাননা জানানো এবং তরুণ লেখকদের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার প্রবর্তিত হয়েছে সাত বছর আগে। এরই মধ্যে দেশের সাহিত্যাঙ্গনের অন্যতম সেরা পুরস্কার হয়ে উঠেছে এটি।
এবারের পুরস্কারে প্রথম দুটি শাখার প্রত্যেক বিজয়ী পুরস্কার হিসেবে পেয়েছেন দুই লাখ টাকা, ক্রেস্ট ও সম্মাননা। তরুণ লেখক পেয়েছেন এক লাখ টাকা, ক্রেস্ট ও সম্মাননা।
শুক্রবার ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে এক হয়েছিলেন দেশসেরা সাহিত্যিক, কবি, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, শিল্পী, সংস্কৃতিসেবীসহ সাহিত্যমনস্ক বিজ্ঞজন। গুণীজন ও বিশিষ্টজনের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছিল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের কার্নিভাল হল।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।
উত্তরীয় পরানোর পর বিজয়ীদের হাতে পুরস্কারের সম্মাননা স্মারকসহ চেক তুলে দেন বিচারকমণ্ডলীর তিন সদস্য হাসান আজিজুল হক, হেলাল হাফিজ, আনোয়ারা সৈয়দ হক এবং সমকালের প্রকাশক এ. কে. আজাদ, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি, ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম আর এফ হোসেন।
শুরুতেই অনুষ্ঠানের সঞ্চালক সমকালের ফিচার সম্পাদক মাহবুব আজীজ সবাইকে স্বাগত জানান। সেই সঙ্গে স্মৃতিচিত্রের মধ্য দিয়ে সমকালের প্রয়াত সম্পাদক ও ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কারের স্বপ্নদ্রষ্টা গোলাম সারওয়ারকে স্মরণ করা হয়। এর পর নৃত্যের ছন্দে অতিথিদের স্বাগত জানায় পূজা সেনগুপ্ত ও তার নাচের দল তুরঙ্গমী রেপার্টরি ড্যান্স থিয়েটার। দলটি জীবনানন্দ দাশের ‘বনলতা সেন’ কবিতার সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে।
পুরস্কার পাওয়ার প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে যতীন সরকার বলেন, অনুভূতি জানানোর ভাষা নেই। শুধু বলতে চাই, আমি অভিভূত। আমি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। বসে থাকতে পারি না, কলম চালাতে পারি না। আপনাদের আশীর্বাদ নিয়ে সুকান্তের মতো বলতে চাই- ‘যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল’।
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম শুরুতেই রসিকতা করে বলেন, বন্ধু হেলাল হাফিজ পক্ষপাত করে তাকে এ পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত করেছেন! কারণ, এ পুরস্কার পাবেন, এটা কখনও ভাবেননি তিনি। কারণ, তার চেয়ে অনেকে ভালো লেখেন। সে হিসেবে এ পুরস্কার পাওয়ায় তিনি কৃতজ্ঞ। তিনি তার বক্তব্যে গোলাম সারওয়ারকে স্মরণ করে বলেন, তিনি থাকলে আজকের এ আয়োজন পরিপূর্ণ হতো।
হুমায়ূন আহমেদ তরুণ সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ী লেখক পিয়াস মজিদ বলেন, হৃদয়ের ভেতরের গুঞ্জরিত অনুভূতিগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করি। তা যে কোনো শিল্পমাধ্যমেই হতে পারে। সব মাধ্যমকে একসঙ্গে উদযাপন করছি।
এর আগে ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার পান ২০১১ সালে সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক, হাসান আজিজুল হক ও দ্রাবিড় সৈকত, ২০১২ সালে জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, বুলবুল চৌধুরী ও শুভাশিস সিনহা, ২০১৩ সালে মঈনুল আহসান সাবের, মাসরুর আরেফিন ও বদরুন নাহার, ২০১৪ সালে হরিশংকর জলদাস, সুস্মিতা ইসলাম ও মুজিব ইরম, ২০১৫ সালে নির্মলেন্দু গুণ, রাজকুমার সিংহ ও স্বকৃত নোমান এবং ২০১৬ সালে ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক, জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত ও মাজহার সরকার।