কবি সোহেল খান এর কবিতা
ওগো বন্ধু হবে কি
পথে ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত আমি
ভেবেছিলাম নিরব নিস্তব্ধ পাহাড়ের
কোলেই গড়বো আবাস।
তাই ছুটে গিয়েছিলাম পাহাড়ে
সর্বোচ্চ চুড়ায় উঠে ঊর্ধ্বাকাশে
দু হাত ছুড়ে বলেছি নীল আকাশকে
মাথার উপরে থেকো বন্ধু ছাঁদ হয়ে।
নিমিষেই ঘনকালো মেঘ এসে ঢেকে
দিয়ে গেলো আকাশের সমস্ত নীলকে।
মেঘের কান্না বৃষ্টি হয়ে ঝরতে লাগলো অবিরাম।
পাহাড় বললো নিজেকে ধরে রাখতে পারছি না প্রিয়
এখনই হয়তো আকাশের সাথে ঘটবে ব্যবচ্ছেদ।
তুমি ফিরে যাও বন্ধু লোকালয়ে
এইখানে তোমায় মানায় না যে।
বলতে পারিনি পাহাড়কে
জীর্ণ সেই কুটিরখানা আমার
কবেই ভস্মিভুত হয়েছে বিরহের অনলে।
ধ্বসে পড়লো নিমিষেই পাহাড় টা।
পাহাড়ের করুণ আর্তনাদ ছুঁয়ে গেলো
মন-প্রাণ-দেহ।
আবার বেরিয়েছি পথে মাথা গোঁজার
একটা ঠাঁই এর অন্বেষণে।
বন বাদার পেরিয়ে, শুকনো মরুভূমির
কাছে বলেছি অনুনয় করে
হবে কি বন্ধু সাড়ে তিন ভুমি?
উঠলো মরু ঝর, চারিদিক অন্ধকার
চকচকে বালি কনা ছুঁটতে ছুঁটতে বলে গেলো
পালাও বন্ধু, এই খটখটে মুরুভুমি তোমার নয়।
এইবার দাঁড়িয়েছি উত্তাল সাগরের কুলে
তবে সাগরের বুকেই হোক সলিল সমাধি
ওগো বন্ধু হবে কি?
সাড়ে তিন হাত মাটি–
………………………………………………………………………..
আজ সাগরের হাতছানি
তোমাদের ব্যস্ত নগরীতে ঘর
বাধার স্বপ্ন জেগেছিল মনে।
বুকের জমিনে মালিকানা চাইনি,
পরিত্যাক্ত জায়গা চেয়েছিলাম
চেয়েছি একটা কুড়েঘর।
সারি সারি সুউচ্চ অট্টালিকার জন্য
বরাদ্দ তোমাদের জমিনে
মাথা গোঁজার ঠাঁই হলো না আমার।
ফিরে যেতে চেয়েও ফেরা হলো না
বদল হয়েছে হৃদয়ের মালিকানা।
পাহাড় কিনতে গিয়েছি, কেনা হয়নি
হৃদয় মূল্যে আর পাহাড় কেনা যায়না।
সাগরের সাথে মিতালী ছিল বহু আগে
বুকের যন্ত্রনা গুলোকে ধুয়ে ফেলতে
নীল সাগরে গিয়েছি বারবার।
আজ সাগরের হাতছানি-
ব্যস্ত এই শহরের কোলাহল ছেড়ে
ছুটে যেতে চাই সাগরের কাছে।
কষ্টে কষ্টে তোলপাড় সাগরের বুক।
ইচ্ছা জাগে-
উত্তাল সাগরেই হোক সমাধি আমার,
অস্থিগুলো মিশে যাক সাগর জলে।
তোমার কাছে যেতে পারিনি কখনো
ছুঁয়েও দেখা হয়নি।
আজ সাগর জলে মিশে আছে অস্তি
যতবার তুমি জল ছুঁয়ে যাবে
ততবার স্পর্শ করব তোমাকে।
তুমি না জেনেই বারবার ছুঁয়ে দেখবে আমাকে
আর আমিও ছড়িয়ে যাবো তোমার সমস্ত দেহে
ছুঁয়ে যাবো তোমার চোখ, ঠোট আর বুক।
তাইতো বারবার ছুটে যাই সাগরের কাছে।
…………………………………………………………………..
ভালোবাসার বৃক্ষ
অনেক অভাবী ছিলাম ভালোবাসার,
সব ছিল যদিও, ভালোবাসা ছিলনা শুধু।
খুঁজেছি অনেক-
নদী,পাহাড়ে, সাগরে, সবুজের সমারোহে!
নদীর তীর ধরে একা একা হেটেছি বহুদিন
পাল তোলা নৌকা দেখেছি,
ভাটিয়ালী গান শুনেছি মাঝির কন্ঠে।
গ্রামবধুর ডুব সাতার দেখেছি নদীর ঘাটে।
পাহাড়ের কোলে দাঁড়িয়ে, নির্জনতা ভেঙ্গে
চিৎকার করেছি ভালোবাসি, ভালোবাসি..
সাগর তীরে বসে সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত দেখেছি
শাড়ীর আচল উড়িয়ে এসে কেউ বলেনি
ভালোবাসি, তোমাকেই ভালোবাসি।
ভালোবাসার কাঙ্গাল হয় পথের মোড়ে
দু’হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে থেকেছি
একটু ভালোবাসার আসায়।
ভালোবাসার বদলে একদিন তুমিই এসে
দাঁড়ালে সামনে, দেবী মূর্তীর মত ভঙ্গি।
মাথায় রাখল হাত, চোখ বুজে গেলো।
কপাল-ঠোঁটে-বুকে বৃষ্টির মত অঝোরে
বর্ষিত হতে লাগল ভালোবাসা ।
ভিজতে থাকলাম ভালোবাসার বর্ষণে
তোমার দু’বাহুর আলিঙ্গনে আবদ্ধ থেকে।
বুকে মাথা রাখতেই প্রতিধ্বনিত হল
ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি।
তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিলাম তাই বুঝিনি তন্দ্রামনি!
ভালোবাসা খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত দেহে
বসে আছি আজ সু-বিশাল বৃক্ষের
ভালোবাসার সু-শীতল ছায়াতলে।
………………………………………………………………………
আর কত ভালোবাসলে
আরো কত ভালোবাসলে
শিমুল পলাশ শাখে জ্বলবে আগুন।
বসন্ত দেশে বাসন্তী ললনাদের শাড়ী,
আলতা, চুড়ির সাজে বকুলতলা হবে রঙ্গিন?
গ্রীষ্মে গাছে গাছে বাহারি পাকা ফল
আম, জাম, লিচু আর কাঠাল
ফলের গন্ধে ছেলে-বুড়ো সব মাতাল।
আর কতটুকু ভালোবাসা বুঝলে বল
শরৎ এ নদীর কূল কাশফুলে হবে সাদা
নদীর তীরে থাকবে সারি সারি নৌকা বাধা।
আবার পাল তুলে ছুটবে সাঝে
দুরদেশে সওদাগরের গন্তব্যে।
মেয়ে আর কত ভালোবাসা হলে
বৃষ্টিতে ভিজবে একসাথে খোলা মাঠে।
বারান্দায় বসে আমারই সঙ্গে
ঝাল মুড়ি খাবে তুমি বৃষ্টির ছন্দে।
হাতে থাকবে ধোয়া ওড়ানো চায়ের কাপ।
আর কতটুকু ভালোবাসলে বল
হেমন্তে ফসলের মাঠ
সোনা রঙে করবে চকচক
কিষাণ-কিষাণির ব্যস্ততা বেড়ে
ধান মাড়াই চলবে উঠানে উঠানে।
গৃহস্থের গোলাভরা ধান,
কিষান পল্লীতে খুশির বান।
আর কত বল আর কতটুকু
ভালোবাসলে-
শীতের আগমনীতে রসের হাড়ি
উঠবে খেজুর গাছে।
চুলায় দেবে আগুন পল্লী বধু খুব সকালে
পিঠা তৈরির খোশমেজাজে।
চারিদিক ঘিরে ছেলে-বুড়ো কিশোর
পিঠা খাওয়ার আমেজে।
আর কতটুকু বুঝলে বল-
বাসবে ভালো এই আমাকে
উজার করে নিজের মত।
……………………………………………………..
ফাগুনের গান
–
কত ফাগুন এলো গেলো
আজও তোমায় রাঙানো
হল না পলাশের রঙে।
কুয়াশার চাদর জড়িয়ে
শীত চলে যায়
কোকিলের গানে গানে
বসন্ত আসে
তুমিতো আসোনি!
পলাশ শিমুল শাখে এখন
জ্বলছে আগুন।
চৈত্রের খরতাপে ফেটে চৌচির
বুকের জমিন।
কোথায় আছো বাসন্তী মেয়ে ?
ক্লান্ত পথিকের করুন চিৎকার
জল দাও, শীতল কর, প্রিয়তমা!
জীবনটা এখন এলোমেলো
আবার বুঝি ফাগুন এলো
বসন্ত দেশে বাসন্তী মেয়ে
কোকিল ডাকে তুমি এসো।।
……………………………………………………………………………
সাহস
কবিতা লিখবো তাই দাঁড়িয়েছিলাম
শান্ত সুনীল সাগরের সামনে
কিছু শব্দ সংগ্রহ করবো এ আশায়।
আমাকে দেখেই মধ্য সাগর থেকে
এক একটি জলোচ্ছ্বাস ফুঁসে উঠলো
সিডর আইলার রূপ নিয়ে তারা
ধেয়ে আসতে লাগলো উপকূলের দিকে।
পরে জেনেছি ধ্বংস নয়, সাহসী করতেই
সাগরের এই ভয়ঙ্কর রূপ
কবিদের নাকি অনেক সাহসী হতে হয়!
তোমার সামনে যখন দাঁড়িয়েছি আজ
ভালোবাসার আশায়
তোমার অগ্নিমূর্তি তখন আমাকে আর
ভীত সন্ত্রস্ত করে তোলে না।
সাগরের কাছে থেকে জেনে এসেছি
প্রেমিক হতে হলেও নাকি সাহসী হতে হয়।
আমাকে সাহসী করতেই তোমার অগ্নিমূর্তি
সে কথা জেনেছিলাম অনেক আগেই।
তাইতো আজ সোহরাওয়ার্দীর জনারণ্যে
সাহসী দুহাতে জড়িয়ে তোমায়
শত কোটি চুম্বনে জানিয়ে দিলাম
ভালোবাসি তোমায়।
…………………………………………………………….
নীল অপরাজিতা
যত নীলের সমারোহ।
নীল নিলঞ্জনার নুপুর নিক্কনে
সবার ভালবাসা ছিল।
সেই থেকে নীল আমারও
পছন্দের রঙ ছিল।
সাপের বিষের জ্বালায়
মানুষ নীল হয়ে যায় যখন জেনেছি,
তখন থেকেই নীল দেখলেই বেদনার
কথা মনে পড়ে যায়, শিউরে উঠি।
মনে হয় নীল তো বিষের পরবর্তী রূপ।
তবে আকাশ যে নীল? সমুদ্রের জল নীল?
বৃষ্টি হয়, বিষের জ্বালায় আকাশও কাদে।
সাগর গর্জন করে বেদনায়।
তাই নীল অপারাজিতা
নীলের মাঝেই থাক।
………………………………………
আরো পড়তে পারেন….
অমর একুশে গ্রন্থমেলায় কবি সোহেল খানের নতুন কাব্যগ্রন্থ “নির্বাসনে চাঁদ”
অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৯ এ ঘাসফুল প্রকাশন থেকে প্রকাশিত কবি সোহেল খানের কাব্যগ্রন্থ “নির্বাসনে চাঁদ” থেকে কবিতাগুলো প্রকাশ করা হয়েছে। কবিতাগুলো ভাল লাগলে বইটি সংগ্রহ করতে পারেন।