পুরো নাম: হাইনরিশ টেওডর ব্যোল
জন্ম: ২১শে ডিসেম্বর, ১৯১৭, কোলোন, জার্মানি।। মৃত্যু: ১৬ই জুলাই, কোলোন, ১৯৮৫
পেশা: লেখক, অনুবাদক
বাবা: ভিক্টর ব্যোল ।। মা: মারিয়া
স্ত্রী: আনেমারি ( ১৯৪২ – ৮৫) ।। সন্তান: তিন ছেলে
খুব উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম: দ্য ক্লাউন, গ্রুপ পোর্ট্রেট উইথ লেডি, দ্য লস্ট অনার অফ কাটারিনা ব্লুম
ব্যোলের সাহিত্যে সাধারণ মানুষের উপর নাৎসি শাসনের প্রভাব, যুদ্ধ ও তার ফলাফল, বাস্তব ও মানসিক পীড়া প্রকাশ পেয়েছে গভীরভাবে৷ সাধারণ মানুষই তাঁর উপন্যাসের নায়ক৷ খল চরিত্ররা মূলত সরকারি কর্তৃপক্ষ, ব্যবসা এবং গির্জার প্রতিনিধি৷ তাঁদের প্রথানুবর্তিতা, সাহসিকতার অভাব, আত্মতৃপ্ত মনোভাব এবং ক্ষমতার অপব্যবহার, এ সব তিনি কখনো কৌতুকপূর্ণভাবে, কখনো বা বিদ্রুপাত্মকভাবে প্রকাশ করেছেন৷ তাঁর দক্ষ অথচ সহজ ভাষাশৈলি জার্মানির বাইরেও তাঁকে জনপ্রিয় করেছে৷ জার্মানিতে এখনো জনপ্রিয় তাঁর লেখা৷
জন্মস্থান কোলোনেই বড় হয়েছেন ব্যোল৷ বাবা-মা ছিলেন ধর্মপ্রাণ, কিন্তু উদার রোমান ক্যাথলিক৷ ছোটবেলা থেকেই মানবতাবাদী আদর্শের শিক্ষা পেয়েছেন তিনি৷ স্কুল জীবনে হিটলারের যুবদলে যোগ দিতে অস্বীকার করেন৷ কোলোন বিশ্ববিদ্যালয়ে জার্মান বিভাগে পড়াশোনা শুরু করার আগে বন শহরে একটি বইয়ের দোকানে শিক্ষানবীশ হিসেবে কাজ করেছেন৷ এ সময়ই লেখার প্রতি তাঁর আগ্রহ দেখা দেয়৷ ১৯৩৯ সালে জার্মান সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে বাধ্য হন ব্যোল৷ যুদ্ধ চলাকালে চারবার আহত হয়েছেন তিনি৷ যুদ্ধ শেষে ১৯৪৫ সালে প্রচণ্ড যুদ্ধবিরোধী মনোভাব নিয়ে ফিরে আসেন কোলোনে৷ তারপরই সাহিত্যে জীবন উৎসর্গ করেন তিনি৷ ১৯৪৭ সালে প্রকাশ পায় তাঁর প্রথম একটি ছোটগল্প৷ দু বছর পর প্রকাশিত হয় প্রথম উপন্যাস ‘ডেয়ার সুগ ভার প্যুংক্টলিশ’ বা ‘দ্য ট্রেন ওয়াজ অন টাইম’৷ পূর্ব সীমান্তে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন একজন সৈনিক৷ নিজের মৃত্যুর হাতছানি দেখতে পাচ্ছেন তিনি৷ এই উপন্যাসের পর থেকেই সমালোচকদের প্রশংসা ও জনপ্রিয়তা দ্রুত অনুসরণ করে ব্যোলের সাহিত্য জীবনকে৷
পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের সামাজিক ও রাজনৈতিক সচেতনতা প্রতিফলিত হয়েছে তাঁর কাজে৷ যুদ্ধোত্তর জার্মানির উৎপাদন ভিত্তিক সমাজ, মানুষের মূল্যবোধ, নৈতিক অন্ধত্ব ও ভোগবাদ – এ সবকিছুই খুব সহজভাবে প্রকাশ পেয়েছে তাঁর সাহিত্যকর্মে৷ ফেডারেল জার্মান প্রজাতন্ত্রের একজন লেখক হিসাবে ১৯৭২ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান ব্যোল৷ ১৯৭৪ সালে তাঁর সাড়া জাগানো ও বিতর্কিত উপন্যাস ‘ডি ফ্যারলোরেনে এয়ারে ডেয়ার কাটারিনা ব্লুম’ বা ‘দ্য লস্ট অনার অফ কাটারিনা ব্লুম’ আন্তর্জাতিক খ্যাতি পায়৷ এই উপন্যাস বাংলায় ভাষান্তর করেছেন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক আবুল মোমেন৷
৩০টিরও বেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে তাঁর সাহিত্যকর্ম৷ একাধিক উপন্যাস নিয়ে চলচ্চিত্র হয়েছে৷ কোলোনের অদূরে লাঙেনব্রয়েশ–এর সুন্দর ছায়াঢাকা একটি বাড়িতে ছুটি কাটাতেন ব্যোল৷ বিভিন্ন দেশের শিল্পী-সাহিত্যিক, বিশেষ করে স্বদেশে রাজনৈতিক হয়রানির শিকার যারা, তাঁরা আশ্রয় পেতেন এই বাড়িতে৷ ৬৭ বছর বয়সে এ বাড়িতেই মৃত্যুবরণ করেন হাইনরিশ ব্যোল৷ তাঁর মৃত্যুর পর এই বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ‘হাইনরিশ ব্যোল ফাউন্ডেশন’, যা সবুজ দলের সঙ্গে যুক্ত৷ এখনো বৃত্তি নিয়ে এলে সেখানে ওঠেন শিল্পী, সাহিত্যিকরা৷সূত্র: ডয়চে ভেলে।