ভারতের কলকাতায় অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী বীণা মজুমদারের মৃত্যু হয়েছিল তিন বছর আগে। কিন্তু শেষকৃত্য না করে তার মৃতদেহ বাড়িতে একটি ফ্রিজের ভেতর রেখে দিয়েছিলেন তার ছেলে শুভব্রত মজুমদার। গত তিনবছর মৃত মায়ের পেনশনও তোলা হয়েছে।
কলকাতার পুলিশ জানিয়েছে, তারা মি: মজুমদারের বাড়ির একটা বড় ফ্রিজের ভেতরে নানা রকম রাসায়নিকে ডোবানো অবস্থায় মৃতদেহটি পেয়েছেন। শুভব্রত মজুমদারকে আটক করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, বাড়িতে থাকেন ছেলে আর তার বাবা। ঐ এলাকার কয়েকজন পুলিশকে জানিয়েছেন, ওই ভদ্রমহিলা যে মারা গেছেন সেটা তারা জানতেন, তবে কেন যে শেষকৃত্য হয় নি, তা বলতে পারবেন না।
বুধবার রাত প্রায় আড়াইটে নাগাদ পুলিশ যখন ওই বাড়িতে পৌঁছায়, তখনই ধীরে ধীরে ক্রাইম থ্রিলারের মত বিরল এই ঘটনার পর্দা উঠতে থাকে। পুলিশ বলছে, তারা গোপন সূত্রে খবর পেয়ে বেহালার জেমস লং সরণীর ওই বাড়িতে পৌঁছায় বুধবার ভোর রাতে। সেখানেই মজুমদার পরিবারের বাড়ির নীচতলায় একটি ফ্রিজার থেকে এক নারীর মৃতদেহ খুঁজে পায় তারা। শরীর থেকে বার করে নেওয়া হয়েছে যকৃৎ, পাকস্থলী সহ নানা অংশ।
পুলিশের দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের ডেপুটি কমিশনার নীলাঞ্জন বিশ্বাস বলছেন, “আমাদের কাছে বুধবার রাতে খবর আসে যে ওই বাড়িতে একটি মৃতদেহ সংরক্ষিত রয়েছে। সেখানে তল্লাশি চালিয়ে আমরা ফ্রিজে রাখা এক নারীর মৃতদেহ পাই। নানা ধরণের তরল রাসায়নিকে ডোবানো ছিল সেটি।”
ভদ্রমহিলার মৃত্যু হয় ২০১৫ সালে কলকাতার একটি হাসপাতালে। কিন্তু সৎকার না করে দেহটি বাড়িতেই রেখে দেওয়া হয়েছিল। ছেলেকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মি. মজুমদার লেদার টেকনোলজি (চামড়া প্রযুক্তি) নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন বলে স্থানীয় সূত্রগুলি থেকে জানতে পেরেছে পুলিশ। সেই বিদ্যাই মায়ের দেহ সংরক্ষণে কাজে লাগিয়েছেন কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চামড়া কীভাবে সংরক্ষণ করতে হয়, তা লেদার টেকনোলজিতে পড়ানো হয়। এটা খুবই সম্ভব যে ওই বিদ্যাই হাতে-কলমে মৃতদেহ সংরক্ষণের কাজে লাগানো হয়েছে।
তবে তদন্ত করতে গিয়ে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সামনে এসেছে। সরকারী চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পরে মি: মজুমদারের মা যে পেনশন পেতেন, সেটি তিনি মারা যাওয়ার পরেও নিয়মিতই তোলা হয়েছে টিপসই দিয়ে।
মি: নীলাঞ্জন বিশ্বাস বলছিলেন, “পেনশন তোলা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু সেটা ঠিক কীভাবে কে তুলেছে, তা জানতে ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।” কিন্তু পুলিশকে যেটা ভাবাচ্ছে, তা হল, ওই একই বাড়িতে থাকতেন শুভব্রত মজুমদারের বাবাও। তিনি কেন সব জেনেও চুপ করে থাকলেন তিন বছর ধরে! আর মায়ের দেহই বা কী উদ্দেশ্যে সংরক্ষণ করে রেখেছিলেন ওই ব্যক্তি, সেটাও এখনও পুলিশের কাছে পরিষ্কার নয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে ওই ব্যক্তি অসংলগ্ন কথাবার্তা বলেছেন।