কিউবার পার্লামেন্ট রাউল কাস্ত্রোর ঘনিষ্ট বা ডান হাত হিসেবে পরিচিত মিগুয়েল দিয়াজ কানেলকে নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে মনোনীত করেছে। কাস্ত্রো পরিবারের বাইরের নেতৃত্বের কিউবা কিভাবে এগুবে, তা নিয়ে এখন অনেক আলোচনা রয়েছে।
৮৬ বছর বয়সী রাউল কাস্ত্রো অবসরে যাচ্ছেন। তিনি ২০০৮ সালে তার ভাই ফিদেল কাস্ত্রোর স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন। রাউল কাস্ত্রো প্রেসিডেন্ট হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কিউবার সম্পর্ক গড়ে তা এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছিলেন।
তিনি দেশের ভিতরেও বেশ কিছু সংস্কার কর্যক্রম শুরু করেছিলেন। এখন রাউল কাস্ত্রোর জায়গায় কিউবার নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল দিয়াজ কানেল মনোনীত হলেন দেশটির পার্লমেন্ট থেকে।
কিউবায় বিপ্লবের সময়ের প্রজন্ম এখন তাঁর হাতে নেতৃত্ব দিয়ে নিশ্চিন্ত হতে চাইছেন। বৃহস্পতিবার কিউবার পার্লামেন্ট আনুষ্ঠানিকভাবে ভোটের ফল বা নতুন প্র্রেসিডেন্টের নাম ঘোষণা করবে। রাউল কাস্ত্রো প্রেসিডেন্টের পদ ছাড়লেও কিউবার ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টিতে তাদের প্রভাব আগের মতই বহাল থাকবে।
কে এই দিয়াজ কানেল?
মিগুয়েল দিয়াজ কানেল কিউবার ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ২০১৩ সালে। তার আগে পর্যন্ত তিনি ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির রাজনীতিতে থাকলেও নিজেকে সেভাবে প্রকাশ করতেন না। তবে তিনি প্রেসিডেন্ট রাউল কাস্ত্রোর খুবই কাছের মানুষ। ৫৭ বছর বয়স্ক মিগুয়েল দিয়াজ কানেল উদারপন্থী হিসেবেও পরিচিত। তাঁর জন্ম ১৯৬০ সালে। এর এক বছর আগে কিউবায় ফিদেল কাস্ত্রো প্রথমে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করেন। কিউবার নতুন নেতা মিগুয়েল দিয়াজ ইলেকট্রিক্যাল ইনজিনিয়ারিং এ লেখাপড়া করেছেন। বিশ বছর আগে ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির যুব সংগঠনের মাধ্যমে রাজনীতিতে এসেছিলেন।
কিউবার অতীত কেমন ছিল?
১৯৫২ সা ফুলগেন্সিও বাতিস্তা একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট কার্লোস প্রিয়র সরকারকে উচ্ছেদ করেন। বাতিস্তার সরকারের নীতি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের মতই, যা ছিল কাস্ত্রোর বিশ্বাসের পরিপন্থী। ফলে বাতিস্তা সরকারকে উৎখাতের জন্য তিনি একটি গোপন সংগঠন গড়ে তোলেন যার নাম ‘দ্য মুভমেন্ট’।
এসময় কিউবা পরিণত হয়েছিল উচ্ছৃঙ্খল ধনীদের স্বর্গরাজ্যে। যৌন ব্যবসা, জুয়া এবং মাদক চোরাচালান চরম আকার ধারণ করেছিল। সশস্ত্র বিপ্লবের জন্য অস্ত্র সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ১৯৫৩-র জুলাই মাসে সান্টিয়াগোর কাছে মোনাকাডা সেনা ছাউনিতে একটি আক্রমণের পরিকল্পনা করেন কাস্ত্রো।
আক্রমণটি ব্যর্থ হয় এবং বহু বিপ্লবী হয় নিহত হয় নয়তো ধরা পড়ে। বন্দীদের মধ্যে কাস্ত্রোও ছিলেন। ১৯৫৩ সালে তার বিচার শুরু হয়। বিচারের শুনানিগুলো কাস্ত্রো ব্যবহার করতেন সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের ঘটনাবলী ফাঁস করে দেয়ার মঞ্চ হিসেবে।
এসময় শুনানিগুলোতে বিদেশী সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার ছিল, ফলে কাস্ত্রোর জনপ্রিয়তা এসময় বেড়ে যায়। কাস্ত্রোকে অবশ্য ১৫ বছরের কারাদণ্ড দেয় আদালত।
কাস্ত্রো পরিবারের পরে নতুন নেতৃত্বে কিউবা কেমন হতে পারে?
ক্যারিবীয় দেশটি নতুন নেতৃত্বে একদলীয় শাসন থেকে বেরিয়ে আসবে, এমনটা ভাবতে চাননা বিশ্লেষকরা। ফলে বড় ধরণের কোন পরিবর্তন আসবে না বলে বিশ্লেষকরা বলছেন।
ফিদেল কাস্ত্রো এখন অতীত। আর রাউল কাস্ত্রো অবসরে গেলেন।
এই পরিবারের বাইরে নতুন নেতৃত্ব নিয়ে অনেকের শঙ্কা আছে। তবে নতুন নেতৃত্বের উপর রাউল কাস্ত্রোর প্রভাব যে থাকবে, সেই আলোচনাও রয়েছে। আর নতুন নেতৃত্বকে প্রথমে দেশটির অর্থনীতির দিকে নজর দিতে হবে।