।। নষ্ট ।।
একজন কালোমানুষ! একজন ছায়ামানুষ!
হাঁটুমুড়ে বসে আছে পাহাড়ের শেষ খাঁজে মৃদুমন্দে পাইনের ডাল বেয়ে
আঁধার কখন তার কাঁধ ছুঁয়ে নেমে এসে
বসে তার পাশে
তার পাশে বসে
তার বিষণ্ণবেলার কথা,
তার মেঘবালিকার কথা বলে
ইস্কুলবাড়ি বকুলগাছ সানাই-সানাই
লুকোচুরি কালবেলা অযথা থমকে যাওয়া
কিছু নৃত্যভঙ্গিমা
সস্নেহে বিলি কাটে ছায়ামানুষের চুলে|
তরাই-এর কোলে শুধু পাতা ঝরার শব্দ
শোনা যায়
তরাই-এর কোলে শুধু হুটোপাটির শব্দ
শোনা যায়
কে যেন বড় হয়ে গেল এক নিমেষে
কে যেন বুড়ো হয়ে গেল এক নিমেষে
কে যেন নষ্ট হয়ে গেল, এক নিমেষে!
।। অনৃতযাপন ।।
রক্ত ধুয়ে নিলে তবু দাগ থেকে যায়
ভালবাসা ধুয়ে নিলে বাদামী বিকেল
নৈঃশব্দ্যবীজ বুনে অপেক্ষায় বাস
নির্জনতা, যেন কোনো উপন্যাসনাম
পরতে পরতে তার উথলায় রূপ
নীরববুননে আঁকে স্নেহ-মায়া-ঘুম
যেভাবে ছেড়েছো ঘর, নিজের উঠোন
সেভাবেই ফেলে যাও শেষ শ্বাসটুকু?
সেইসব বিকেলের আলোছায়া রোদ
যা কিছু ছড়িয়ে গেছে অবহেলা দোষে
ভালোবেসে তুলে রাখি, অনৃতযাপনে-
সহজিয়া জীবনের ছলনা খেলায়
হে প্রেম, নাবিক প্রেম! অতলান্ত স্রোতে
দু-হাতে ধরেছো হাল, এই অবেলায়!
।। অসংলগ্ন কথোপকথন ।।
সে এক বয়স ছিল, বুঝলে নিলয়!
শুধু হাঁটবো বলেই…
জঙ্গুলে পথে শুধু হাঁটবো বলেই
বন্ধুরা হুল্লোড়ে ছোটনাগপুরে
সেইসব মহুলদিনে, সেইসব রাতে
পাখির নরম দেহ আগুনে আগুন
ফুলমোতিয়ার চুলে বুনোফুল, কাঁটা-
ডুলুং নদীর ধারে চাঁদ গলে ছিল
শুধু হাঁটবো বলেই সেই নুড়িমোড়া পথে
শুধু হাঁটবো বলেই সেই ঘরছাড়া রাতে
সে এক বয়স ছিল! বুঝলে নিলয়!
তখন ট্রেকিং এক রোমাঞ্চ খেলা!
এখনও হাঁটছে দেখো, দেশটা আমার!
এখনও হাঁটছে ঐ শিশু ও কিশোরী
এখনও হাঁটছে দেখো ন-মাস পোয়াতী
শুধু দেশে যাবে বলে হাঁটছে স্বদেশ!
শুধু বাঁচবে বলেই আজ, বুঝলে নিলয়!
এখনও ট্রেকিং এক রোমাঞ্চ খেলা!
কবি পরিচিতি : ইন্দ্রনীল সুমন। জন্ম ১৯৬৭। কলকাতার কলোনি অঞ্চল নেতাজীনগরে আজন্ম বাস। বিজ্ঞানে স্নাতক। লিখছেন আশির দশক থেকে। লিটল ম্যাগাজিনেই লেখেন। যুগ্মভাবে প্রকাশ করেছেন ছোট পত্রিকা ‘অয়শ্চক্র’। কবিতার সংবেদনশীলতা ও ভাষা নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে ভাল লাগে। কবিতা লেখা ছাড়া নাটক দেখা ও বেড়াতে পছন্দ করেন। নিজের সম্পর্কে বলেন, “নিজেকে লাইট(আলো) মনে করিনা, লাইটপোস্ট মনে করি, অন্যের আলো ধরি, কুকুরে ঠ্যাংও তোলে নির্দ্বিধায়|”