হলুদ!
কি?
ফুল।
বাহ্! হলুদ ফুল, খুব সুন্দর তাই না?
তা তো অবশ্যই। তার চেয়ে আরো বেশি ভালো লাগার বিষয় হলো- মৌমাছির গুন গুন আওয়াজ।
আচ্ছা বন্ধু সেটা কোথায়?
সেটা! সেটা একটা মজার গল্প। শুনবি?
শুনব না মানে? একশবার শুনব।
দুই বন্ধু অনু আর দিপু। দুজনের মধ্যে খুব ভাব। স্কুলে টিফিনের ফাঁকে দুজন বসে শুধু গল্প করবে। মজার মজার গল্প। নিজেদের গল্প। সত্যি গল্প। মিথ্যে গল্প। ঠিক গল্প। ভুল গল্প। স্কুল ছুটিতে বাবা-মায়ের সঙ্গে বেড়ানোর গল্প। আজও অনু তার বাবার সঙ্গে নানাবাড়িতে যাওয়ার পথে দেখা প্রাকৃতিক কিছু সুন্দর দৃশ্য ও ভালো লাগার কথা বলছে।
কি হলো বল।
ওহ্! বলছি। যখন আমাদের স্কুল বন্ধ ছিল। তখন আমরা কোথায় গিয়েছিলাম জানিস?
না জানালে কী করে জানব?
বলছি তবে শোন। আমি, মা, বাবা ও আমার ছোট বোন ইতি গিয়েছিলাম নানাবাড়ি বেড়াতে। খুব মজা করেছি। আমরা সবাই নদীর পাড়ঘেঁষে যাচ্ছিলাম হেঁটে হেঁটে। হঠাৎ আমার চোখে পড়ল চারদিকে কেমন হলুদে ভরে গেছে। তখন প্রায় দুপুর। শীতের দিন। তাই সূর্যমামা উঠতে দেরি করবে। এজন্য আমরাও একটু দেরিতে রওনা হয়েছিলাম। আর তাই হয়তো সৌন্দর্যের বিষয়টা আরো বেশি হলো।
দুপুরে হলুদ হলুদ ফুলের সঙ্গে হলুদ হলুদ রোদ। সেই হলুদের ছোঁয়ায় আমাদের সবার রংও হলুদ হয়ে গিয়েছিল। হঠাৎ আমার মনটা নেচে উঠল। দেখি মৌমাছির গুন গুন আওয়াজ। আমি দৌড়ে চলে গেলাম সেই ফুলের কাছে। মৌমাছির কাছে।
ইতিও আমার পেছন পেছন চলল আর বলল, ভাইয়া এগুলো কি ফুল?
আমি তো জানি না এই ফুলের নাম। আর জানব কেমন করে। এর আগে কখনো কি দেখেছি এত সুন্দর ফুল। তাই ইতির কথার কোনো উত্তর না দিয়ে দৌড়ে চলে গেলাম বাবার কাছে। বাবা আমাকে দেখেই বলতে লাগল, কিরে অনু এভাবে দৌড়াচ্ছিস কেন! কী হয়েছে?
আমি হাঁপাচ্ছিলাম কিন্তু আমার মনে যে আনন্দের দোলা লেগেছিল তার একটুও কমেনি তখনো। বাবা আবার জানতে চাইলেন, কিরে কী হয়েছে বলবি তো?
এবার আমি জানতে চাইলাম, আচ্ছা আব্বু ওই হলুদ ফুলগুলোর নাম কী?
আব্বু আমার দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বলল, ওগুলো! ওগুলো হলো সরষে ফুল।
আমি এই প্রথম নানাবাড়ি যাচ্ছিলাম। শহর থেকে গ্রামের প্রাকৃতিক দৃশ্য যে এত সুন্দর এর আগে আমি কোনো দিন দেখেনি। তাই মনের আনন্দে নেচে গেয়ে ছুটে চলেছি। এত দিন জানতাম গাড়ি ছাড়া মানুষ চলতে পারে না বুঝলি! কিন্তু ওখানে গিয়ে দেখলাম। সেখানকার বেশির ভাগ মানুষ হেঁটে চলাচল করে। আর যেখানে হেঁটে যাওয়ার রাস্তা নেই। সেখানকার মানুষ নৌকা দিয়ে চলাচল করে। এতখানি বলে একটু থামল অনু।
দিপু তাই বলে উঠল, কিরে অনু! তারপর কী হলো?
তারপর আবার দৌড়ে গিয়ে ইতিকে বললাম, ওগুলো সরষে ফুল।
ইতি আবার জানতে চাইল, আচ্ছা ভাইয়া ওই পোকাগুলো এত সুন্দর ফুল নষ্ট করে ফেলছে কেন?
আমি ইতিকে বোঝালাম, আরে না বোকা, ওগুলো পোকা নয়। ওগুলো হলো মৌমাছি। আর মৌমাছি হলো উপকারী পোকা। ওরা শুধু মধু সংগ্রহ করে।
বাহ্ বন্ধু খুব ভালো বলেছো তো! আমিও শুনেছি মৌমাছিরা উপকারী পোকা। ওদের কারণে অনেক উপকার হয়ে থাকে ফল ও ফুলের গাছের। বলল দিপু।
দিপুর কথা শেষ হতে না হতেই স্কুলের ঘণ্টা বেজে উঠল। তার মানে টিফিন শেষ। এবার উঠতে হবে বন্ধু। অনু আর দিপু তাই গল্প ফেলে ছুটে চলল ক্লাসরুমের দিকে। দিপুর মাথায় তখনো গুন গুন করছিল রঙিন রঙিন মৌমাছি…
মৌমাছি ও হলুদ ফুল।। আহমেদ রউফ
নরসুন্দা ডটকম নভেম্বর ৬, ২০২৫
