কবিতা সাহিত্য

মাহবুব রহমান’র কবিতা

মাহবুব রহমান   জুন ২৫, ২০১৭

আমার স্বপ্ন আমার ভাবনা আমার ব্যর্থতা আমার বেদনা এবং আমার সর্বক্ষনের উচ্চারনগুলো কবিতার স্বর হয়ে উঠেছে জানি। মানুষের ব্যক্ত উচ্চারণই তার নীতিবোধ তার ধর্মবোধ এবং জীবনাচার। এর মর্মার্থ অনুধাবনে চেষ্টা করেছি, পারিনি বলছিনা, পেরেছি। আত্মার অনুরনণে যা স্তব্ধতা নিংড়ে ধ্বনিত হয়েছে আমার নিভৃত জগতে।

জেনেছি, কবিতা মানুষের সভ্যতম উচ্চারণ। সেই কবিতার কাছেই আমি আশ্রীত, চিরকাল। যে প্রহরগুলো আমাদের টুকরো টুকরো করে ভেঙেছে দহন করেছে, প্রজ্জ্বলনে বাধ্য করেছে, তাদের ভুলে থাকতে পারিনি। এরাই আমার প্রাণের উচ্চারিত সংগ্রহ। একার ভিতরে বিরামহীন একাকিত্বের সহচর। নির্ভুল গ্রন্থনার স্পর্ধা কারো কারো থেকে যায়। আমি পেরেছি আমার ভাবনাগুলোকে সাজাতে, প্রাণদিতে- প্রাণের স্পর্শে নিতে। কবিতার কাছে আশ্রীত আমি খুশি এ কারনে যে আমার ভাবনারা আমাকে বিমুখ করেনি। আমার ভালোবাসা আমাকে প্রত্যাখান করেনি, ওরা সাজিয়ে দিয়েছে দহিতের প্রণোদনায়।

অলংকরণ: মাহবুব রহমান

 

উজানে নিয়ে যায়

যখন তোমাকে অবলম্বন করে ঝরে পড়ে আমার যাবতীয় দিন-রাত্রী
আমার আসন্ন মৃত্যু অথবা আমার বেঁচে থাকার গন্তব্যের নিরন্তর যাত্রাকাল।

এই অবলম্বনের সংস্পর্শে আসতে তোমার বৃক্ষগুলো অথবা তোমার সমুদ্রের ঢেউ
একখন্ড প্রস্তর, একফোটা শিশিরের জল, তোমার একবিন্দু পৃথিবীর অন্তর।

যা কিছুর ভিতরেই হোক, ধর্ম কিংবা নিয়তিবিধান
ভালোবাসা অথবা প্রত্যাখ্যান
সব কিছুর মধ্যে ঐ অবলম্বনটুকু আমার চাই
ভীষন ভাবেই চাই
স্বার্থপরের মতো হলেও চাই;
এ যেন আমাদের স্বপ্নের অভ্যুদ্বয়ের জন্য বিনীত প্রার্থনা
এ যেন হৃদয়তন্ত্রীতে এতটুকু সুরের ছোয়া বিলিয়ে দেয়ার বেদনার্ত সমর্পন।

তোমার হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা নীরব বৃক্ষগুলোকে আমি জানতে চেয়েছি
সবুজ পাতায় পাতায় বিছিয়ে দিয়েছি আমার জীবন
সমুদ্র তরঙ্গের গহীনে শুনতে চেয়েছি স্বপ্নময় উদ্ভাসনের রীতি
পৃথিবীর অন্তরে নির্ঝরিত শিশির স্বরে অবমুক্তি চেয়েছি আমার কবিতার
নিয়তিহীন অবোধ্য অবসরে দংশিত ভাবনাকে বুঝিয়েছি
কেমন করে প্রেমকে বাঁচিয়ে রাখতে হয় ;
সেই প্রেম সেই প্রার্থনা সেই সুরধ্বনি
সেই বেদনার্ত মহাক্ষণে তোমার চক্ষুদ্বয় হতে আহরন করতে চেয়েছি
তোমার হৃদয়ভুমে নিমজ্জমান যাবতীয় স্বপ্নখনিজ- ভয় ও কষ্টের রক্তাক্ত আবহ
যা আমাকে বারবার মৃত্যুরদিকে আহবান করে
যা আমাকে জীবনের উজানে ঠেলে নিয়ে যায়
যা আমার পরাস্ত বক্ষের অবোধ্য মানচিত্রে চিত্রকল্প গেঁথে দিয়েছিল।

২৩ জুন ২০১৭ খ্রি.

অলংকরণ: মাহবুব রহমান

ভূল-নির্ভূল সকল প্রহরে

যখন তোমাকে পড়ি
পড়তে পড়তে মনে হয় অনেক জেনেছি
চিনেছি কতভাবে- হাড়িয়ে যাবার পর
পুর্নপাঠে খুঁজে পাচ্ছি না দেয়াল ঘেরা তোমার পৃথিবীকে।

পৃথিবীর অচিন প্রান্তে কিছু ছায়া পড়েছিল রহস্যময়
যেখানে শশ্মানের আর্তধ্বনিতে নীরবে জ্বলছিলো
কিছু অবিনাসী কথা- মর্মরিত বৃক্ষপাতা জিজ্ঞাসার চোখে জানতে চেয়েছিল
অতলান্ত খুঁজে পাইনি সে সব কথার,
বুঝিনি সেখানে ছিলো কি তোমার ভালোবাসা অথবা অবজ্ঞা।

তোমাকে পড়তে পড়তে আমার ক্লান্তি এসেছিল?
দেখতে দেখতে যেভাবে চেনা মুখগুলো খুব অচেনাই রয়ে যায়।
বিরামহীন বৃষ্টির ভিতরে দাড়িয়ে মনে হয় এ আকাশের অশ্রুবিন্দু নয়,
অঙ্গ ভিজিয়ে দেয়া এ হলো নৈমিত্তিক পরিণাম, ভালোবাসা নয়।

তোমাকে পড়েছি অব্যক্ত উচ্চরণে
ভূল-নির্ভূল সকল প্রহরে, সকল অভিধানে।
মনে হয় তোমাকে চিনেছি-আবার অচেনাই রয়ে গেছে সব
করোতলে ধরে রাখা অঙ্গার কতটা দহন করে রক্তে রক্তে প্রণতি ঝরায়
সেটা বুঝতে পারিনি, বুঝিনি- এই এক দায়।

১৯ জুন ২০১৭ খ্রি.

অলংকরণ: মাহবুব রহমান

আমি ভালোবাসি

যা কিছু নিয়ে আমি স্বপ্ন দেখেছি
স্বপ্ন দেখতে অভ্যস্থ হয়ে উঠেছি
তার মধ্যে কেবল
তোমাকে নিয়ে গ্রন্থিত
কোমল মধুময় স্বপ্নগুলোকেই
পৃথিবীর অঙ্গ ভেবে তৃনলতার মতো
সারা জীবন আকড়ে থাকতে চেয়েছি।

তোমার বিরামহীন অগ্রাহ্যগুলোকে
তোমার স্পষ্ট অবজ্ঞাগুলোকে
তোমার দ্বিধা ও অনিচ্ছাগুলোকেও আমি ভালোবাসি।

আমি যেভাবে বেঁচে থাকি
যেভাবে মৃত্যুকে আহবান করি
যেভাবে পুনরুত্থানের স্বপ্নও দেখি
সে তোমার আলস্য ও দুর্ভাবনাকে আলিঙ্গন করে করে
তোমার সাহায্য নিযে বেঁচে থাকার চেষ্টা।
১১ জুন ২০১৭ খ্রি.

কল্পনার প্রতিফলন

মানুষ যা কিছু খুঁজে বেড়ায়
সে হলো তার কল্পনার প্রতিফলন
সমুদ্রে পেতেছি শয্যা অতলান্তকে হৃদয়ে কুড়িয়ে নেবো ভেবে
যখন মাথার উপরের ছাতাটাও সরিয়ে নিয়ে যায় কেউ
দেখি খোলা আকাশ ভেঙ্গে পড়ছে বজ্রপাতের স্বরে
অন্য আকাশে হাত বাড়িয়ে জলকণা এনে দু’চোখ সাজাই।

তুচ্ছ অট্টহাসির আলোর ফোয়ারা ঝরছে চর্তুদিকে
আঁধারবিদ্ধ পৃথিবীর অজানা প্রাপ্তিতে
দু’হাত বাড়িয়ে, অভিশপ্ত ভেবে ভেঙ্গে দেই
সাজানো বাগান, যদিও অরণ্যে সবুজ এসেছে
দীর্ঘশ্বাসের আগুনে ওর কপাল পুঁড়ে ছাই।

নিজস্ব আঙিনায় খুঁজে বেড়াই লতাপাতা ও কাঁটার
দেয়ালের অন্তরালে অদৃশ্য হয়ে থাকা হৃদয়বোধ
প্রতিফলিত স্বপ্ন কিংবা দুঃস্বপ্নের মধ্যখানে দাড়িয়ে
সমঝোতাহীন চাইছি এই সামান্য প্রশ্রয়।

বিশ্বাসহীনতা আজকাল প্রলয় তরঙ্গে দিশেহারা
জেনেছি সেখানে সহযাত্রী অনেকেই
মাথার উপরের ছাতা, নির্মল দেয়ালের ছবি, আয়নাচুঁড়ি
খোপার ক্লিপ আড়াল করে দিয়েছে অদৃশ্য নিয়তি।

খুঁজে বেড়াই সঞ্চিত কথাগুলো নিরন্তর
দুরারোগ্য নিঃসঙ্গতার প্রতিফলিত শব্দকোষ
উগরে দিয়ে যায় সমুদ্রতীরে, আমাকেই। কুড়িয়ে নিই
ভাবনার বিজ্ঞান, তার সাথে সখ্যতা গড়ি

১১ জুন ২০১৭ খ্রি.

একটা মানুষ ছিলো

বুকের খুব কাছে
একটা মানুষ ছিলো, এ কথা
বিরহকালে খুব মনে থাকে
আনন্দে থাকে না।

অশ্রু ঝরা নীরব ক্ষণে
আনন্দে কাঁদে না বুক
বেদনা তা জানে।

একজন মানুষ ছিলো পাশে, এই ঘরে-শয্যায়,
সে কষ্টেও ছিলো- ছিলো তিরস্কারে- এখন সে নেই
অশ্রু কনায় তার দিনলিপি, দীর্ঘশ্বাসের পাতায় পাতায়
রক্তের অক্ষরে ঝরে হীমবাহ ঢেকে দেয় উঠোন-প্রাঙ্গনের মরুচরাচর।

এত তুচ্ছ এতটা ক্ষুদ্র কেন জীবন ?
এক সমুদ্র দুঃখের কাল, সহসা ভাসিয়ে নিয়ে যায়
ডুবন্ত পরাণ কাঁদে, আমৃত্যু। প্রিয় মানুষেরাই শুধু থেকে যায় পর-

০৮ জুন ২০১৭ খ্রি.

সেই ভুলের ছায়ায়

ভূল করে ফিরে যাই
ভুলের ছায়ায়
ভুলের আঙুলেই আঁকি ভুল ছবি
জলের বুক ভেঙ্গে সে জলছবি ভেসে যায়।
চারিদিকে অপেক্ষার অশ্রুজল
উল্টো নগরের উল্টো সড়ক
মেঠো পথে ফিরে যায় নগর ভুষন
মুখোশআটা যতোসব দৈত্য দানব।

ভুল পথগুলো নিয়ে যায় দুরত্বে
দেয়ালে টাঙ্গানো ছবি কুয়াশায় মিলিয়ে যায়
সংশয়হীন সংকল্পের পাশে ভাঙ্গা সাঁকো
পারাপারহীন রয়েছি দাড়িয়ে
দ্বিধার সৈকত ছড়িয়ে থাকে গন্তব্যের ছায়ায়
জলহীন তবুও অশ্রুজলের করুনায়
ভুলগুলো দিয়ে জলচিত্র আঁকি
খোপার কাঁটায় রক্তাক্ত হৃতপিন্ডের শ্বাস
শূন্য শয্যায় ক্যাকটাস্- মূমূর্ষ প্রণয়ের অধিকার।

০৫ জুন ২০১৭ খ্রি.

ভেঙ্গে ফেলতে পারো

ইচ্ছে করলে মরতে পারো
আবার নাও মরতে পারো
ইচ্ছে করলে সারারাত নির্জন বারান্দায় ঠায় দাড়িয়ে থাকতে পারো
কাঁদতে পারো-কাঁদতে নাও পারো
বিদ্রুপে ভাসিয়ে দিতে পারো পুরো তল্লাট
অবজ্ঞায় বিদ্ধ করতে পারো হৃদপিন্ডের শ্বাস-দীর্ঘশ্বাস
সবকিছু করার এখতিয়ার তোমার দখলে- আয়ত্বে, আজ।

ভুলে যেতে পারো
চিরতরে হারিয়ে যেতে পারো নির্দিধায়
ইচ্ছে হলে ধুয়ে নিতে পারো চোখের কাজল
অঙ্গুরী ছুড়ে ফেলেদিতে পারো অতল জলের গহনে
দেয়াল থেকে নামিয়ে নিতে পারো সুখের চিত্রকল্প-ছবি
স্মৃতির যা কিছু অধিকার, কেড়ে নিতে পারো অবলীলায়
ইচ্ছে হলে ভেঙ্গে ফেলতে পারো প্রতিটি প্রহর
জীবনের অনেক মুহুর্ত, একটি মহাকাল।

নির্বাক জানালার ধারে যে রোদ্দুর
তাকিয়ে দেখে নির্ভূল কবিতারপ্রাণ, স্বপ্নের মানচিত্র।
ইচ্ছে হলো তাকে বিষদাহে জ্বালিয়ে দিতে পারো
যেন পুষ্পিত হয়ে উঠে নিভৃত শশ্মান।

০৪ জুন ২০১৭ খ্রি.

অলংকরণ: মাহবুব রহমান

খোপার কাঁটায় রক্তক্ষরণ

কাপড় কেঁচে দুপুর গড়ায়
ঘাটের কোনে রইলে বসে, খাবে কখন ?
তালপাতার পাখায় আঁকবে যখন স্মৃতিকথা
তখন পায়ে পায়ে গোধুলীর কাল, যাচ্ছো কোথায় ?

বাঁশরিয়া নদীর ওপার গঞ্জে গেল
ফিরলো না আর, সেখানে কী যাত্রাপালা, খবর রাখো ?
মোহিনীরা আসছে গাঁয়ে-ছুটবে সবার পরান পাখি, ঐ সীমানায়
বুলবুলিরা ধান খেয়েছে, খোপার কাটায় রক্তক্ষরন, উদাস মেয়ে
রাত জেগেছো কিসের আসায় ?
হরির উপর হরির নৃত্য
আখি জুড়ে জলজোৎস্না
মুক্তোদানা ছড়িয়ে গেলে গাথবে মালা দীর্ঘশ্বাসে !

অশ্রু ঝরে নীবিড় হাওয়ায়
খঢ়কুটো যে এনে দেবে, বাবুই পাখির অনাকাঙ্খা- বাধনে না নীড়
রাত গড়িয়ে প্রভাত এলো
শিশির এলো কুয়াশার গায়ে, মানুষটি কই ?
মত্তভ্রমর উড়াল দিল অন্যকুলে
ওগো মেয়ে বসে থাকো কিসের আশায় ?
বৃক্ষ বনের পাতায় পাতায় রইলো লেখা-চিরকালই স্বপ্নে দু’জন
আসলে সব এপার-ওপার।

১৮ মে ২০১০ খ্রি.

সাহস নিয়ে

সাহস করে বলতে হয়
সাহস করে ভাবতে হয়
সাহস করে জানতে হয়
কোথায় ছিলেম-কোথায় এলাম
গন্তব্যটা বুঝতে হয় ভালোভাবে।

ভুল পথে হেটে হেটে
ভুল স্বপ্নে ভেসেছি সমুদ্দুর
ভুল আঙুলের ছোয়া প্রান্তর-প্রণয়ী কন্ঠস্বর
ভুল কন্ঠে ধ্বনিত শপথ- উদ্দেশ্যহীন।

সাহস করে বাঁচতে হয়
ঘরের পাশে পড়শী উঠোন
শিশিরের ঘ্রান-গহীন মাটির স্বপ্নের শ্বাস
গুনতে হয়, সাহস করে।
সাহস নিয়ে বাঁচতে পারে মানব জীবন
নদীর জীবন- পাহাড় বৃক্ষ তৃণলতার

১৬ এপ্রিল ২০১২ খ্রি.

কতবার তুমি জন্ম নিয়েছো

কতবার তুমি
অশ্রুজলে ভিজিয়েছো কাজল
কতবার তুমি
রবীন্দ্রনাথের হৈমন্তী সেজেছো
কতবার তুমি
উজান ঠেলেছো-বৈঠা ধরেছো গাঙে
কতবার তুমি
আকাশের বুকে আকাশ মেলেছো গানে
কতবার তুমি
পৃথিবী সেজেছো-ক্ষতনিয়ে একাকী হয়েছো আলো অন্ধকার
কতবার তুমি জন্ম নিয়েছো ত্রিভুবনে হেটে গেছো একা একা
হৃদয় গহিনে ঝড় তুলেছো- ভাঙ্গন ধরিয়েছো-নিঃশেষে জ্বলেছো, প্রদীপ হয়েছো সখা।

২৪ এপ্রিল ২০০৯ খ্রি.

ঝুলে আছি স্বর্ণলতা

শেকড়বিহিন ঝুলে আছি
স্বর্ণলতা, রৌদ্রে পুড়ি
হাওয়ায় দুলি
মৃত্যুহীন এক মৃত্যুকথা।

শেকড়বিহিন ছুইছি আকাশ
মেঘ জমেছে-জল ঝরেছে
জলের ধারায় ভিজেছে বাতাস।

শূণ্য বুকে কষ্ট বাজে
ঝরণা ছুয়ে কান্না ঝরে
দুরসীমানায় পাতালপুরীর রাজকন্যা
দেখছে চেয়ে পরিণামহীন স্বর্ণলতার কষ্ট বিলাপ।

১৩ মার্চ ২০০৯ খ্রি.

অলংকরণ: মাহবুব রহমান

অধিকা একা

বদলে যাচ্ছে
দিনরাত্রী-শুকনো পাতা-ধুলোয় ছড়ানো কবিতা
বদলে নিচ্ছো আকাশ আলোর গহীন ভুবন- ভালোবাসার পথ।

একার ভিতর অধিক একা
একলা নদীর-নিশিথ পাখী আঁধার ভেজা একলা দেখা চাঁদ
বদলে যাচ্ছে হরহামেশা মতবাদের রথ।

ফিরে আসার দরজা বন্ধ
ভাঙ্গা উঠোন- শয্যা শেষের স্মৃতি-দুঃখের দেয়াল
ভালো নেই বলিনি কখনো, ভালো আছি
হীমস্তব্ধ পাথুরে প্রাণে প্রথিত যখন ব্যক্তিগত কবিতা।

০৫ জুন ২০০৭ খ্রি.

 

শহীদ কাদরী’র জন্য নিবেদন
(কবির শেষ স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকালে)

নিস্পলক পৃথিবীর অবয়ব, দেখুন।
স্পর্শ করে আছেন দীর্ঘকাল আগে ছেড়ে যাওয়া
প্রিয়তম করুন এ মাটিকে।
দেখুন, কতকাছে-আপনার বুকের পাশেই
পৃথিবীর সবুজ শয্যা
ঘাস ফড়িং
উন্মুক্ত জলনদীর হাওয়া
ভাদ্র মেঘের রৌদ্রকণা ঝরছে প্রিয়তমের শবমিনার ঘিরে।

গহিন স্মরণে স্মৃতিতপ্ত এ মৌন মিছিলে
সমবেত হতে চেয়েছে আপনারই স্বর্গোদ্যান ঘিরে
অব্যাক্ত সেইসব কবিতার রক্তক্ষরনের মেলায়
স্বীকার করছি, বহুদিনের বেদনাবোধ ও সংশয় এর সিঁড়িতে দাড়িয়ে
আজ প্রণতি রাখছি সেইসব অদম্য কবিতার পাতায়
যারা বলে যায়, বহুদূরের প্রিয়তম
ফিরে এসেছে শ্যামল বাংলায়
তোমাকেই
দীর্ঘ প্রতিক্ষিত সেই অভিবাদন- প্রিয়তমা।

৩১ আগস্ট ২০১৬ খ্রি.

অপ্রেম

অজুহাত তুলে বাঁচিয়ে রাখতে চাইছি
আমাদের প্রেম, প্রেমের অভিনয়গুলো
দুর্দশার গল্পগুলো এবং পরস্পরকে বিদ্ধ করে লেখা
কবিতাগুলোকেও সংরক্ষন করতে উদগ্রীব হয়ে উঠেছি।

বাণিজ্যরসদ যেহেতু এগুলো নয়
নিদেনপক্ষে বুড়ো দৈত্যদানবদের ক্রীড়াকৌশলও এটা নয়
ফর্দলিখে কাকে জানাবো বিস্তারিত পরাজয়ের বিবরণ
নানা অজুহাতে লোকচক্ষুর আড়ালে বাঁচিয়ে রাখতে পারি
অভিসার ও সর্বনাশের যুক্তিতর্কগুলো
প্রযুক্তি নির্ঝরিত জোৎ¯œায় ভিজে জীবনের অসত্যগুলোকে
কতকাল সংরক্ষন করবে হৃদয়, হৃদয়াবৃত আঁধারও বহুকাল
সহ্য করেনা অপ্রেম ও বেদনাগুলোকে ।
১০ জুন ২০১৭ খ্রি.

অলংকরণ: মাহবুব রহমান

ইরেনবুর্গের জমানাও এখন

ভালবাসা ও ঘৃনা যত্ন করে বুকে রেখে
ইরেনবুর্গের মত ক’জন পথ চলতে পারে ?
দেশান্তরিত গ্রাবিয়েলা- হারনানদেজদের মতো বাঁশরীতে
সশস্ত্র হয়ে নেমে যেতে পারে মেঠো পথে…….

এ শহশ্রাব্দে মনবোধের দায় বহুভাবে গ্রন্থিত
জাঁজেঁনেরা পানশালায় নিশ্চুপ- নাট্য সংলাপে
গ্রানাডার জঙ্গলে গিটারের ধ্বনিস্তব্ধ রক্তাক্ত পাথর
বলিভিয়ার পাহাড়ি প্রভাত ইতিহাসের চিত্রপট মুঁছে দিয়ে যায়।

দুঃসহ দায় কাধে নিয়ে শিশুরা পৃথিবীতে আসে
গৃহকোনে করুন আঁধার- দাবদাহ
পিকাশোর চিত্রকলায় নেই বহুজতিক বাণিজ্যের উদ্ধত চিহ্ন
রবীন্দ্রনাথ একালে অক্ষম- হৃদয়তন্ত্রে মানবিক বোধের দুঃসময়
ঘৃনা ও ভালোবাসার জমজ সমাধি
চারিদিকে। ধনবাদ যেহেতু দখল করেছে
মানবিকতাহীন যাবতীয় স্বপ্নের পাকস্থলী।

২৯ জুন ২০০৭ খ্রি.

About the author

মাহবুব রহমান

Leave a Comment