কবিতা না হোক
প্রবেশ করতে চাইছি- প্রতিকুলতা, পক্ষপাত, বিরুদ্ধচারন ও অনৈতিকতার যে কোন অসহনীয় অন্ধকার অধ্যায়ের পাঁচিল পেরিয়ে, স্তব্ধতা উপড়ে ফেলে, স্বচ্ছন্দে-অবলীলায়। ভ্রুক্ষেপহীন এত অধোগামিতা, প্রলুব্ধময় জিজ্ঞাসার অতলান্ত ছুঁয়ে ছুঁয়ে বুঝতে চাইছি, ঝরে পড়া শুকনো পাতার বুকে সঞ্চিত আগুনের নির্বাসিত ধরন। ধুলোয় গড়িয়ে যাওয়া প্রহেলিকা পথ অথবা শপথ কিংবা প্রণয়ের অভ্যূদ্বয়ে যে মালঞ্চ নিরবধি প্রশান্তি ছড়ায়, তার সন্নিধানে দাঁড়াতে চাইছি, নির্ভার।
ভ্রমে নিমজ্জমান অস্থির কালপ্রবাহের অন্তরাত্মায় যত অবজ্ঞাই লুকোন থাকুক, বিদ্রুপের তলিয়ে যাওয়া তরঙ্গ মাস্তুলের সর্বশেষ যে আলোকচুম্বন ডানা খুলে উড়ে যায়, উড়তে উড়তে সন্ধান করে জলতট, মরুতট, মৃত্তিকার অতলে ঘুমন্ত স্বপ্নবীজ, তার কুলে স্থিতি নিয়ে শুনতে চাই বিপন্ন প্রবাহে অঙ্কুরিত একটি শব্দের স্বর। কবিতা না হোক, সে হতে পারে আমাদের আত্মার অন্ধকার অনুরনন, হতে পারে অবিচলিত নক্ষত্রের দগ্ধ ক্রন্দন, নিদেন পক্ষে, একটি সবুজ তৃণলতা।
কবিতা:
খুব দেখতে ইচ্ছে করে
মেঘের গহন সুর ভেঙ্গে ভেঙ্গে
শিশির কাঁদে, সবুজ পাতায় পাতায়
ঝরে পড়ে বৃষ্টির হৃদয়।
মৃত্তিকার উষ্ণ জঠরে প্রথিত হয়
স্বপ্নের বীজ, যারা উৎসারণের স্বরলিপি আঁকে
চোখের পাতায়, অসুন্দরের প্রতিপক্ষ দু’বাহু বাড়িয়ে সামনে দাঁড়ায়
দিনরাত্রির বুকের ভিতরে পোড়ে স্বপ্ন শশ্মান
নীল চাঁদ কুয়াশার ধুসরতা মেখে নিরুদ্দেশ
নৈঃশব্দ ঘেরা প্রহর সর্বাঙ্গে জড়িয়ে থাকে
তখন
পৃথিবীকে
খুব
দেখতে ইচ্ছে করে
সেই
পৃথিবীকে
মুগ্ধ প্রভাতে যে এসেছিল কড়ানেড়ে
যে এসেছিল ঝড়োরাত্রির শেকল বাঁজিয়ে
প্রথম দেখা সেই পৃথিবীকে, খুব দেখতে ইচ্ছে করে।
৩১.০৭.২০১৭
যশোর রোডের বৃদ্ধ বৃক্ষের কথা
উদভ্রান্ত ভাবনায় দেহতত্ত্বে মত্ত পর্যালোচনা
গান এবং পানের জলসা যখন উচ্ছন্নে পীড়িত ;
তখন বিভ্রমে ডুবন্ত রসনার কত কী নাম
বাজারী ভূষন- উদ্ধৃত্ম্যমূল্য- উন্নয়ন
স্তুতিভরা আধোগামিতা- বিচিত্র সব পরিসংখ্যান
আঁতশ কাঁচে অস্পস্ট বিম্বিত ম্লান ভংগুর মনবোধ।
অলিগলিতে ধাবমান প্রেম-অ-প্রেমের যৌক্তিকতা
আত্মনাসের নিমজ্জমান এ অধ্যায়ে
জল রক্ষা- বৃক্ষ রক্ষা- স্বপ্ন সংরক্ষন উৎকন্ঠায়
তাড়িত নয় বহু ভাবনার সংক্রমন, এখন।
স্মৃতিহীন দুঃখের বিপরীতকালে
অজানা বস্তুর মতো সরব অস্তিত্বে ভর করেছে
আধুনিক যাপিত তাড়না, দেখতে পাই
সংহার পূর্বক্ষণে বৃদ্ধ বৃক্ষদের পাশে
বিভ্রমে তলিয়া যাওয়া অন্ধকার উৎসবে
এগিয়ে আসেনি কারো আলোকিত অন্তর।
বুঝি তাই নিরীক্ষক- তার্কিকদের
মত্ত উত্থান ও পতন কাহিনি বেলায়
ভালবাসাহীনতার বিবরণে ক্ষুদ্ধ নয় স্বপ্নময়- স্বপ্নভঙ্গুর প্রহর।
২২.০১.২০১৮
সম্পর্কের সারমর্ম
ব্যক্তিগত এবং অ-ব্যক্তিগত যন্ত্রণায় দ্রবীভূত মুহুর্ত
চারিদিকে। আহ্লাদী সমাজনীতি, কদর্য সহায়তা ভীতি
উন্নাসিক মানুষ্যবোধের করুন খেয়ালে নিপতিত
দৈনন্দিন জীবনাচার। শেকড় ওপড়ানো ক্লান্ত অসহায়
বৃক্ষের মতো দীর্ঘশ্বাসে ঝরে পড়ে সময়ের সবুজ পাতা,
মলিন দিন-রাত, মানুষের আবারিত অভিজ্ঞান!
শব্দগুচ্ছের কাছে আশ্রিত মানুষ, তখন দাঁড়াবে কোথায় ?
ধুলোমাখা সময়ের মধ্যিখানে অপেক্ষমান তুমি
কেউ আসছেনা জেনেও অসহনীয় এই দৃঢ় প্রতীক্ষা
চুর্ণ করেনি তোমায়। গাছ-গাছালীর ভেতর অবিরাম
বয়ে চলা প্রহরগুলো অনিচ্ছা সত্বেও তোমাকে স্পর্শ করে যায়।
তুমি ভেঙ্গে ফেলতে চাইছো নিজেকে
দাপুটে বাতাস যেভাবে তনছন করে উদ্ধত বৃক্ষ শরীর
রৌদ্র ও রাত্রী দেহের বালুকণাগুলো ঝরে পড়ে মৃত্তিকায়
ছাইভস্মের জরায়ু ছিড়ে নির্গত অগ্নিলোক
মেঘের বাকঁলে চিত্রিত করে বহুকালের কথোপকথন
দুবির্নীত প্রহরে তোমার চর্তুদিকে ঝরে পড়ছে বৃষ্টির গান, প্রত্যাখ্যান।
প্রতীক্ষার কোন বয়স নেই, জেনেছো। প্রমত্ত তরঙ্গে যেমন
ভাসমান নদীদের হৃদয় গহিন জ্যোৎস্নালোক যেভাবে অনিদ্রায় পোড়ায়
বনহরিণির ধ্যান-স্বপ্নহীন অচিন প্রান্তরে যেভাবে প্রথিত স্মৃতিশ্বাস।
ধুসর আঁচল ছুঁয়ে প্রবাহকাল পেরিয়ে যায় ডানাখোলা জলচিল
কতো রৌদ্র কতো রাত্রী কতো দুঃখকালের সঞ্চিত পরিণতি
কতো ব্যক্তিগত ইতিহাস খসে পড়ে পালকের শ্বাসে।
গন্তব্যহীন চরাচরে তীরবিদ্ধ সময়
কেউ কারো প্রতীক্ষা করেনা, আর। সম্পর্কের মর্মার্থ
এখন সম্পর্কহীন দূরগম্য পৃথক সড়কে ধাবমান
দৌরত্ম্যময় প্রেম যেন আশাতীত প্রেমহীন নিজস্ব অবয়বে।
লুকানো হাত খুলে নেয় দরজা-কপাট। অন্য হাতে
জানালার শার্সিতে জমে থাকা নীল ধুলো
দেয়ালে টাঙানো ছবি উড়ছে দীর্ঘশ্বাসে,
প্রতীক্ষা চুর্ণ করেনি তোমায়।
সম্পর্কের সারমর্ম খুঁজে নিতে চাইছে যখন আরো কিছুকাল।
৩০.০১.২০১৮
আরো পড়ুন :
ফয়সাল অাহমেদ এর তৃতীয় গল্পগ্রন্থ “চিরকুট” প্রকাশিত
নৈতিক নিঃসঙ্গতা, নিরন্তর
ভালবাসাহীন প্রহর
জলের তরঙ্গ ভেঙ্গে
উড়তে থাকে দিগন্তহীন ভ্রম যাত্রায়।
দহিত পরাণে ঝরে দীর্ঘশ্বাস
শিমুল তুলোর মতো ঘর সংসার
উড়তে উড়তে পতিত, পতনের অভ্যন্তরে যার উত্থান
মেঘ বৃষ্টি জল ও কুয়াশার রাখি বন্ধন
অসত্য আবরনে নিঁপুন মগ্নতা, পারস্পরিক অভিনয়,
সকলের নৈতিক নিঃসঙ্গতা, এভাবেই নিরন্তর?
ভালআছি, অসত্য তর্জ্জমায় কী বলে তাকে ?
আঁধারে প্রথিত হৃদয়-দরজা জানালা খুলে পলাতক
সমুদ্রের রূপালী পাতায় নীল রোদের কলম লেখে
তাহাদের নাম-অসুখীদের পরিণাম
জোৎস্নামগ্ন বৃষ্টির রাত গ্রাস করে শৃঙ্খলিত মনন।
নির্দয় দিবস রাত্রির শঙ্কালগ্নে অতল জলে
বাসকী ভগ্নি বিষহরির ছায়া হয় প্রীতিময়।
অমৃত-গরল পানব্রতে নিমগ্ন কেউ কেউ তখনও জানেনা
কখন আবর্তিত ব্যক্তিগত তুমুল নৈতিক নিঃসঙ্গতা, যা নিরন্তর।
২৬.১০.২০১৭
আনন্দ নগরের আকাশ
(মরহুম সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া’কে )
আনন্দনগর থেকে মালিবাগ, সিদ্বেশ্বরী ছুঁয়ে শান্তিনগর
হৃদয়ে কবিতার উৎকন্ঠা, সমাজ বদলের নৃতাত্ত্বিক বাত্যয় দেখে।
অভিরুচী বদল হয়েছে বলে তিরস্কার করেছেন সমাজবাদীদের
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের গানের জলসাগুলো কখনোই প্রাণ কাড়েনি আপনার
বলতেন, রবীন্দ্রনাথ বেসুরো গলায় বড়ো বেদনা জাগায়।
রূপ ঝলসানো নির্বোধ রমনীয় দিনগুলো
কেন শুকনো পাতার মতো ঝরে যায়,
এসব নিয়ে তর্কে যুক্ত হতেন কেশব’দা। উদাস রাতের আকাশে
চোখ রেখে তিনি বলতেন, জীবনানন্দীয় বিবর্তণ সহসা
এ তল্লাটে যৌক্তিক হয়ে উঠবেনা
মানুষের করোটিতে সুখ ও যন্ত্রণা সহোদর হয়ে থাকে
স্রোতহীন নদীর মতই সব বিবর্ণ-ধুসর-শ্রীহীন বলেই
কোন ভাবনা বুকের অতলে স্বপ্নের ঢেউ তুলতে অক্ষম।
বলতেন, ভালবাসার স্বরূপ বদল হয়েছে স্বার্থবাদীদের পকেটে
গুঞ্জনহীন মধুর রাত্রীগুলো নক্ষত্রের ভারে
যৌবনরিক্ত প্রেমিকার মতো
দুঃসহ স্মৃতি হয়ে সঙ্গ দেয় সকলের।
স্তব্দতার চাদর মুঁড়ি দিয়ে কতোদিন চেনা পথ পেরিয়ে
গৃহস্থের দায় ছিলনা এমন উদাসীন
অন্তহীন পথের পথিক হয়ে হেটেছেন অলিগলি,
অজানাই রয়ে গেছে কি দুর্দমনীয় উৎকন্ঠা প্রতিক্ষণে তীরবিদ্ধ
শারসের অসহায়ত্ব নিয়ে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছিল হৃদয়ে, আপনার।
দস্তয়ভস্কির লাঞ্চিত বঞ্চিত কিংবা তলস্তয়ের ফাদার সিয়ের্গি
গৃহহীন করে তুলেছিল আপনাকে ?
রাইনের জলে ডুবন্ত শেলীর মুখ চঞ্চল করে তুলেছিল, হৃদয় ?
ফিরে আসতেন রবীন্দ্রনাথে
সুভাষ অনুদিত হাফিজ পড়েছেন
নেরুদাকে বলেছেন অসামান্য।
ভাবনীদা’কে এজন্য দূরভাষে কৃতজ্ঞতাও জানিয়েছেন।
অথচ পুগাচেভ কাহিনী পড়তে পড়তে ফাঁকি দিয়ে
নিঃসঙ্গ পোষাক জড়িয়ে কোথায় হারিয়ে গেলেন
আমরা খুজেঁই পেলাম না আর;
গ্রন্থগারের লাল ইটের গাঁথুনীতে আপনার উদাস স্পর্শচিহ্ন এখনো পড়ে আছে
বাংলামোটরের সিঁড়িগুলো তেমনই নির্বাক
অন্ধকারের পোশাক পড়ে আছে মালিবাগের ধুঁসর আকাশ
শহীদবাগে কেশবদা’র লেখার টেবিলে পড়ে আছে আপনার হস্তাক্ষর।
রবীন্দ্রনাথের শেষের কবিতা। শান্তিনগরের
আকাশ দখলে মত্ত সুউচ্চ প্রাসাদগুলোর ছায়া
ধুঁলোউড়া প্রহরগুলো আপনার বুকের দীর্ষশ্বাসে একাকার।
শুধু রামপুরা ব্রীজ পেরিয়ে সেই শান্ত সৌম্য আনন্দনগর,
আনন্দনগর আকাশের প্রজ্বলন্ত নক্ষত্রগুলো দুর্ভাবনাময়
আপনার অতৃপ্ত মুখচ্ছবি
প্রিয় অনুজদের বার বার দেখিয়ে দেয়।
০৯.০৩.০৭
ফুলার রোডে আশ্রয়স্থল
(অধ্যাপক সৈয়দ আহমদ খান, দীর্ঘকালের স্মৃতি অমলিন)
অনেকের নিশ্চিত প্রেরণাস্থল হয়ে উঠেছিল
আপনার ঘর। কারো কারো আশ্রয়স্থলও ছিল আপনার ঠিকানা।
যেদিন গিয়াস কামাল চৌধুরীকে শীতের রাতের
মৃদু অন্ধকার দেয়ালে ঠেস দিয়ে ঘুমূতে দেখেছি,
সেদিন থেকে ভেবেছি- পাপিষ্ঠরাও পরিত্রাণ পেতে ছুটে যেতো
আপনার ফুলার রোডের বাড়ীতে।
বুদ্ধিচর্চার চেয়ে অনেকেরই দরকার ছিল উর্ধমুখী পথের ঠিকানা
আপনি বিরক্ত না হয়ে কতো সহজে চিনিয়ে দিয়েছেন
প্রয়োজনীয় পথের ঠিকানা,
রাজনীতির জটিল অন্ধকারে নিমজ্জমাণ সুবিদাবদীদের
দক্ষিণা দিতে আপনি কার্পন্য করেননি।
দু’হাত খুলে দিয়েছেন
অবারিত ভূবনের পথের দিশা।
আপনার ক্ষুদ্ধ বেদনার স্পর্শ কেউ পেতে চায়নি
বলেই ভাগ্যহতরা আজও ভাগারে নিমজ্জমান জন্তুর মতো
দেখি পথ হাতরে বেড়ায়।
আপনি শিক্ষার্থীদের মানচিত্র ছিলেন
রাজনীতিক এমনকি স্বজন বন্ধুদের; সেনাঅভ্যূত্থানে নিহত
খালেদ মোশারফের অন্তিম শয়াণে
ছিল আপনার স্বপ্রাণ উপস্থিতি। আপনার স্নেহাম্পদ শেখ কামাল
আমৃত্যু আপনাকে দাঁড় করিয়ে রেখেছিল তাঁর স্মৃতি রক্ষা কমিটিতে
ধূঁসর প্রান্তর হতে তাকিয়ে দেখুন
কোথায় সেই অনুরক্ত স্বজনেরা, ভালবাসার মানুষেরা ?
নির্লোভ মানুষ আপনি সুর্যরশ্মির মতো বিলিয়েছেন
স্বীয় আলো, ভালবাসা, চেতনার বিস্ময়কর রঙ।
০৮.০৩.০৭
পূর্ণ হও, স্নিগ্ধ হও
বলিলেন, পূর্ণ হও- স্নিগ্ধ হও
জলস্থলের প্রবাহিত ধারা অপরিবর্তিত।
বলেছেন, বসন্ত বদলায়, জোৎস্নালোকে আধাঁর নিমজ্জিত কাল,
কন্ঠে ধ্বনিত বহুযৌক্তিক শপথ- দায়দেনা-অভিযোগ-অভিমান
ধূলোয় গড়িয়ে যায় ব্যর্থজীবন, অহংকার
অতঃপর?
সুললীত জলধারা মৃত্তিকার হৃদয় ছিড়ে অগ্রসরমান যে কোন গন্তেব্যে।
তাহারা বলিলেন, পুষ্পের অভিন্ন আদল
নক্ষত্র কিংবা গোলার্ধের মলিনতা অথবা প্রেম
অপরিবর্তিত, চিরকাল। প্রভাতি আলোকরেখা
গোধুলী কিংবা ছায়াছন্ন বিষন্ন বিরহ কালে
অজস্র করোতলে স্বপ্নভাসান
মগ্নচৈতন্যে অঙ্কুরিত কারো স্বপক্ষে রক্তক্ষরন।
বলিলেন, পূর্ণহও-অপূর্ণতার সরোবরে ডুবে
তৃনলতাময় বিনম্র প্রণয়ে তিক্ততার গান করো
ভালবাসার- প্রেমহীন দূরহ এ প্রান্তর ছেড়ে যেতে যেতে।
০৭.১০.২০১৭
নির্ণয়হীনতায় যদি
যাত্রা সমকালে, অথচ
ছায়ায় বসতি দুই জগতের দু’জনার
শশ্মানের আহবান বাজিছে পরাণে
কারো দিকে বনফুলে ভরা বাহারী চন্দ্ররাত
জলের অতলে কারো দাহ্য জীবন শ্রান্তি অন্বেষণে
বিপরীত স্রোতে ভাসমান স্বপ্ন-স্বপ্নহীনতার শৃঙ্খল,
অমৃতের ধ্বনি বাজে, চারিদিকে !
তরঙ্গ কহিলো, ভালবেসে সর্বদিকে গন্তব্যর ভরসা খুজে যাই
উজান ভাটিতে, সমুদ্র কিংবা মেঘের আহ্বানে সাড়া পেতে চাই।
কহিলো আকাশ, আসিতে পারো নির্ণয়হীনতায়
যদি সংসার বাঁধিবার জাগে স্বাধ। উড়ে উড়ে ভস্ম হবে
অশ্রু জল হবে অভিলাস, এসে ঘর বাঁধো-মরনের দিকে বাঁধো
তাবৎ পরাণের মৃত্যুহীন গান।
ফিরেছে সবাই গৃহস্থলে, সুখ দুঃখে দহনে
নিত্যদেখি শঙ্কিত জীবনে গৃহহীনের যাত্রাকাল
দুর মেঘের দেশে- জলের দেশে
ফুলের দেশে, পতঙ্গের উচ্ছসিত নিঃসঙ্গতায়
শশ্মান ডাকিছে, দিবস চরণে ঝাপ দিয়ে আসি
দহিত প্রহরে ঘুঁঙুর বাঁজিছে রৌদ্রের নামে
চোখের কাজল ধুয়ে দিলে কিছু কুয়াশার জল
জল ছিলনা, সে ছিল প্রত্যাখ্যনের চিরায়ৎ ছল।
১২.১০.২০১৭
ভেসে যায়, ভেঙে যায়
নিঃসঙ্গের আসক্তি
ভাবনায়- দূর্ভাবনায়।
নিঃস্তরঙ্গ প্রহর প্রতিবিম্বের চোখে চোখ রেখে
দুরে ভেসে যায়, ভেঙ্গে যায়।
আদিম উৎস ধ্বনিতে নিঃসহায়
সংক্রমিত মনোলোক, ভালবাসা চিত্রিত
সম্পর্কহীন দ্যোতনায়। দরোজার পাশে শবছায়া
আলোহীন স্তব্ধস্বর, সুর, তরঙ্গ, বিনাস-অবিনাস।
সর্বনাস দহিত স্বপ্নস্বর
আজও ভালবাসা সর্বাঙ্গ ছেড়ে যায়নি কোথাও,
প্রাণে-অ-প্রানে জড়িয়ে থাকে নৈঃশব্দ প্রিয় কবিতার মতো।
১৭.১০.২০১৭
ভূল শব্দে, ভূল বর্ণে
কারো চোখে
ভূল ছবি বিম্বিত
ভূল শব্দে ভূল বর্ণে
অন্তরে রচিত ছিল যা দীর্ঘকাল।
ভূল মানুষের ছায়ায় ছায়ায়
নির্ণয়হীন সংসার, চারিদিকে
ভ্রান্ত প্রদীপ জ্বলে, ভূল গানে ঝরে জো বিলাপ
ভালবাসাহীন ক্লান্ত প্রহর ভূল মানুষের বুকে, অবিরাম ফিরে আসে।
দেয়ালে টাঙানো ভূল ছবি
হৃদয়ে ছড়ানো ভূল রঙ
ভুল চোখে ভূল নদী- ভূলে ভরা বসন্তকাল
সব ভূল ভেসে আসে অশ্রুজলে, নির্দয় দিনযাপনের রীতি।
১৮.১০.২০১৭
অপরূপ সর্বনাশ
প্রশ্নহীন কবিতার
ললাট তরঙ্গে এঁকে দিলো নীল টিপ
মুখমন্ডলে ব্যবচ্ছেদের ছায়াকাল
উড়ে আসে উড়ে যায়
সবুজ পাখী
হলুদ বসন্ত কাল
তিরস্কৃত জোৎস্নায় ঝরে নক্ষত্র পোষাক
পতঙ্গ হৃদয়ে অভিমান, ঝর্ণা জলে ভাসে
ভবিতব্য, অবিরাম।
প্রশ্নহীন জগতের
অপরূপ সর্বনাশ, দহনপ্রিয়
শশ্মানের আহবানে জ্বলে।
১৪.১১.২০১৭
সেই গোধুলীর প্রার্থনা
দেবদূত, সেদিন কুয়াশাচ্ছন্ন আঁধার পেরিয়ে
যখন জীবনে ঝরিয়ে দিলেন কৃপা ও আর্শিবাদ, সুরভীত
গোধুলীর প্রাণে গাহিয়া উঠিল নিভৃতের যতো গান।
আপনার স্পর্শে জাগ্রত হলো যাপিত ক্লান্ত ভুবন
যেন সুদুর হতে উড়ে এলো মহালোকের বাণী
বলো, কী যেন বলিবে তুমি, কী যেন বলিতে চাও?
নিরুত্তর রাতের চাদরে নেমে ছিল জোৎস্নাজল
ভাবনার পানসিতে কতকাল উজান ঠেলেছি, কতরাত
নিদ্রাহীন তপস্যায় সমর্পিত হতে চেয়েছি প্রাণপনে।
তাকে বলতে পারিনি, মহাপ্রাণ কাব্যের সঞ্চালক
শব্দদিয়ে নয়, নিরাবতার গহিন উচ্চারণে সমর্পন করেছি
ভাবনা আমার, আমার লোকলজ্জায় ডুবন্ত দহিত পরাণ
আমার এই তুচ্ছ জীবন
যখন অমৃতলোকের শ্লোকগুলো ঝরিল শিরস্থানে
মহাপ্লাবনের তরঙ্গে নৃত্য বিস্ময়াভূত
অবারিত স্বপ্নদল, কিচ্ছু চাইতে পারিনা- কিচ্ছু না
সমর্পিত প্রাণ কী চাইতে পারে ত্রাতার কাছে ?
ভালবাসাহীন কিচ্ছু চাইনা আমি
শশ্মান কিংবা দরিয়ায় মুগ্ধতম সখ্যতা
প্রার্থনা করি। যেন নিরুত্তর গোধুলীকাল
দিগন্তহীন মনোলোকে ছড়িয়ে দেয় গোলাপ পাপড়ী
সৌরভ কালের কথায়
যে অঙ্গুরী অন্তহীন শৃঙ্খলের চিহ্ন পরিয়ে গেল
এই পরিণয় প্রকাশ মহাজগতের বিন্দুসম চিহ্ন হয়ে যায়।
সৃজনের উৎসে আবেগ, সৃষ্টির স্থাপত্যে
প্রেমানুভূতির বিস্ময়াভূত নিদর্শন।
কিছু না চেয়ে বারবার ভালবাসায় ভেসে যাওয়া।
দেবদূত, সেই মুগ্ধ অন্ধকার
কখনো ভূলতে পারিনি, কোনদিন ভুলবো না।
সেই যাত্রাক্ষণের নিভৃত উৎকন্ঠা জাগ্রত থাকুক
প্রাণপনে প্রার্থনা এই করুনাসিক্ত
সেই পুষ্পদল- সেই স্পর্শ- কৃপা- আর্শীবাদ
নক্ষত্রময় অঙ্গুরী হৃদয়ে রক্তক্ষরণে ধুয়ে
ধারন করেছি নিষ্ঠ প্রার্থনার অধিকারে।
জগতের এতো আলো এতো অন্ধকার
ভালবেসে গ্রাস করুক বারবার, এই দহিত পরাণ।
১২.১০.২০১৭
কষ্টের প্রতিশব্দগুলো
কাছেই রয়েছো, খুব কাছে। দূরে চলে যাচ্ছে
পায়ে পায়ে ধুলোর শব্দ রাত্রীর শব্দ, কষ্টের প্রতিশব্দগুলো।
উন্মুখ প্রান্তর ছুয়ে উড়ে যাচ্ছে কাছে না থাকা স্পর্শগুলো।
নাগাল পেরিয়ে যাচ্ছে ফিরে আসা কিংবা চলে যাবার প্রত্যয়।
চলে যেতে যেতে
ফিরে আসতে আসতে
শুনতে পাচ্ছ রূপান্তরিত নদীদের কাহিনি
বর্ষণ মুখর বিকেলের প্রচ্ছদে ভেঙ্গে পড়া মেঘের আর্তনাদ
শুন্য মাস্তুল চিত্রিত করেছে পুনরুত্থিত অভিমান, গান।
যখন অনুযোগে রাঙিয়ে যায় প্রনয়হীন হৃদয়
বিরহকালগুলো তখনও বৃক্ষের মতো সবুজ ঋতুর চুম্বনে মহিমাম্বিত করে।
পাতা ঝরার দৃশ্যপট অন্তরাল করে
বিমুক্ত বেদনার অধিকার। পায়ে পায়ে
ধুলোর শব্দ, কাচের চুড়ি ভাঙা শব্দের পাশে গন্তব্যহীন পথ।
খুব কাছেই রয়েছে, খুব কাছে। তবুও সরে যাচ্ছ দূরে, দূরত্ব
দখল করেছে নিয়ন্ত্রনহীন সকল সময়ের অধিকার
০৪.০২.২০১৮