বাংলাদেশে সত্যিকার অর্থে ত্যাগ আর বিপ্লবের আদর্শ নিয়ে সমৃদ্ধ দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন যাঁরা তাঁদের মধ্যে কমরেড মোহাম্মদ ফরহাদ অনন্য।এদেশে বাম ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তিনি ছিলেন অবিসংবাদিত নেতা।তাঁর ব্যাপক পরিচিতি ছিল ‘কমরেড ফরহাদ’ হিসেবে।
মেধা আর অধ্যাবসায়ের জোরে তিনি এই বলয় থেকেই জাতীয় নেতার পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন, নির্বাচিত হয়েছিলেন জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে।
কমরেড মোহাম্মদ ফরহাদের জন্ম ১৯৩৮ সালের ৫ জুলাই দিনাজপুরে।
১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এম.এ করেন তিনি।
সাম্যবাদী আদর্শে সংগ্রামী ও আত্মত্যাগী রাজনৈতিক জীবনে অনেকটা সময় তাঁকে কারাবন্দি অবস্থায়, রাজদ্রোহ মামলায় নির্যাতিত হয়ে এবং আত্মগোপন অবস্থায় কাটাতে হয়েছে।
৫২’র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৭১–এর মহান মুক্তিযুদ্ধ সহ এদেশের সকল প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে কমরেড ফরহাদ সম্পৃক্ত থেকেছেন। ১৯৫৫ সালে নিষিদ্ধ কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম সংগঠক ও সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য ছিলেন তিনি।
স্বাধীনতার পর দলটির সাধারণ সম্পাদক হন এবং আমৃত্যু এই দায়িত্ব পালন করেন। নীতি–আদর্শ বা দল পরিবর্তন করেন নি কখনো। রাজনৈতিক জীবনে প্রচুর লেখালেখি করেছেন পার্টির মুখপত্র এবং কখনো কখনো জাতীয় দৈনিকে।
১৯৬০–৬২ সাল পর্যন্ত বিখ্যাত দৈনিক ‘সংবাদ’ পত্রিকার সহকারী সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন।
১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ এরশাদের ক্ষমতা দখলের পর সামরিক শাসনবিরোধী রাজনৈতিক ঐক্য তথা ১৫ দলীয় ঐক্যজোট গঠন, জাতীয় দাবি ৫ দফা প্রণয়ন এবং যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তিনি বলিষ্ঠ ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৮৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি পঞ্চগড়-২ (বোদা-দেবীগঞ্জ) নির্বাচনী এলাকা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
অসাধারণ বাগ্মী কমরেড ফরহাদ ব্যক্তিজীবন যাপন করতেন সহজ, সরল, সাদামাটাভাবে। মানুষের সাথে তাঁর সম্পর্ক ছিল হৃদ্যতার। চোখে ছিল সাম্যের সমাজ বিনির্মাণের উজ্জ্বল স্বপ্ন।
এই স্বপ্ন চোখেই ১৯৮৭ সালের ৯ অক্টোবর আকস্মিক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মস্কোয় জীবনাবসান ঘটে তাঁর। নিভে যায় বাংলাদেশের এক উজ্জ্বল রাজনৈতিক জ্যোতিষ্ক।