১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পর বহু অত্যাচার আর নিপীরণের শিকার হই আমারা। এমনকি মুখের ভাষা ও ছিনিয়ে নিতে চেয়েছিল পাকিস্তানীরা। বহু সংগ্রাম আর শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমাদের এই সোনার বাংলাদেশ। সারা বিশ্ব আমাদের ভাষা আর সংস্কতি নিয়ে গর্ব করে। যা আমাদের গর্বিত করে একজন প্রবাসী হিসেবে।
পাশাপাশি নিজের কাছে কিছু লজ্জার কারণ হয়ে দাড়ায় যখন আমার দেশের অবনতি চোখে দেখি। সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ এখনও সম্ভাবনা নিয়ে আলোকিত করছে। কিন্তু আমরা এখন ও আলোকিত নই। যখন শোলাকিয়া ঈদের জামাতে ও সিলেটের ইসকন মন্দিরে হামলা হয় তখন কোরিয়ান একজন টেক্সি চালক বলে বাংলাদেশে তো অশুভ শক্তি আছে। তারাতো নিজের লোককে নিজেরা মারে। ভাই কে ভাই মারে। তাহলে কিসের এই ধর্ম!
কোরিয়ান চালক বলে আমরা সুখে আছি। আমার কোন ধর্ম নেই। আমার বউকে আমি ভালবাসি। দেশকে ভালবাসি। আমার দেশের মাঝেই দেবতা বা ঈশ্বরকে খুঁজে পাই। এই হল আমাদের সম্ভাবনা। দেশ প্রেমের কারণে আজ তারা বিশ্বের উন্নত দেশের মধ্যে একটি। অথচ দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের উপনিবেশ ছিল আমাদের মতো। দক্ষিণ কোরিয়া ও আমাদের মতো যুদ্ধবিদ্ধস্ত ছিল। মজার কথা হল ১৯৭১ সালের দিকে দক্ষিণ কোরিয়া, সিংঙ্গাপুর, মালেশিয়ার মাথাপিছু আয় প্রায় কাছাকাছি ছিল। তাহলে কি তাদের সাফল্যের চাবি?
বাস্তবতা হচ্ছে তারা এখন তাদের সংস্কৃতিকে লালন করে। শুধু লালন করে বললে ভুল হবে তারা পালন করে। কোরিয়ানরা উন্নত হওয়া সত্ত্বেও তাদের পূর্বপুরুষদের সংস্কৃতি বজায় রেখেছে। পূর্বপুরুষদের স্ম্মান করে প্রতি আগষ্টের ১ তারিখ থেকে ১৪ তারিখ পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গা ও নোংরাস্থান পরিষ্কার করে।
এই কাজ করে কোরিয়ান প্রেসিডেন্ট ও। আর আমার প্রিয় মাতৃভূমির সংস্কৃতি ধ্বংস করার জন্যেতো ষ্টারপ্লাস, জি বাংলা পরিবার আছেই। কোরিয়ানরা সবচেয়ে বেশী অনুসরণ করে আমেরিকানদের কিন্তু তারা গ্রহণ করে আমেরিকানদের ভাল দিকগুলো। এর উল্টোটাই হলাম আমরা। খারাপ দিকটাকেই গ্রহণ করি।
১৮ কোটি জনগণের আমার প্রিয় জন্মভূমিতে অনেক ভাল আইন আছে কিন্তু এর যথাযথ বাস্তবায়ন নেই। অন্যদিকে কোরিয়াতে কিন্তু একজন আইন ভঙ্গ করলে তার শাস্তি নিশ্চিত। আইন ভঙ্গকারি প্রেসিডেন্ট হলেও।
পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি যুবশক্তি আছে আমাদের, যা আর ৫০ বছর পর থাকবে না। এ নিয়ে সরকার কি কোনপরিকল্পনা করছে? না এর কোন বাস্তবায়ন আছে?
অথচ পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে শিক্ষার্থীরা ছুটির সময় বিভিন্ন কাজ করে। কোরিয়াতে নাগরিকদের বিভিন্ন টেকনিক্যাল বিষয়ে বিনামূল্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। থাক পরদেশ চর্চা। কথা হল আমাদের যুব শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। আমাদেরকে সরকারি চাকুরি চিন্তাথেকে বের হতে হবে। ছোট ছোট কাজ করতে হবে। আমাদের তো মনেই আছে বিন্দু বিন্দু জলে গড়ে ওঠে সমুদ্র। তেমনি আমাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রচেষ্ট গড়ে তুলবে সোনার বাংলা।
মানবধর্ম পালন করলে থাকবেনা হানাহানি। দুর্নীতির মত কাজ কে বয়কট করতে হবে। এর জন্য আমাদের মানসিকতাকে পরিবর্তন করতে হবে।ইতিবাচক মানসিকতাই গড়ে তুলবে উন্নত বাংলাদেশ। যেখানে শুধু ইট পাথর থাকবে না থাকবে মানবতা। যেখানে প্রযুক্তি থাকবে কিন্তু রেমিটেন্স চুরি থাকবে না। যেখানে দেশের স্বার্থে সকল স্বার্থকে ত্যাগ করবে। আমি স্বপ্ন দেখি মানবতার বাংলাদেশ;উন্নত বাংলাদেশ; দুর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ।