ইউরোপিয়ান ফুটবলে ক্লাবগুলোর অন্যতম মুখ্য লক্ষ্য সমর্থক তৈরি।
শুধু নিজ দেশেই নয়, সারা পৃথিবী জুড়ে তাদের সমর্থকদের সাথে যোগাযোগ গড়ে তোলার লক্ষ্যে এসব ক্লাব বিভিন্ন ভাষায় তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়মিত পোস্ট দিয়ে থাকে।
অথচ বাংলাদেশে লক্ষ্য করে দেখা গেছে, শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব বা নবাগত সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব ছাড়া অন্য ক্লাবগুলোর ফেসবুক পেজই নেই। থাকলেও সেগুলো তৎপর নয়।
ফুটবল সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বাংলাদেশে ফুটবল প্রেমী অনেক, কিন্তু দেশের ফুটবল অনুসরণ করেন এমন লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিল।
ঢাকা লীগের বর্তমান চ্যাপিয়ন আবাহনীও স্বীকার করছে পুরোনো সমর্থকরা এখনো আছেন কিন্তু নতুন সমর্থক তৈরি হচ্ছে না । পুরোনো দিনের আরেক জনপ্রিয় ক্লাব মোহামেডানেরও একই অবস্থা।
ফুটবলপ্রেমীরা কীভাবে দেখছেন?
নিয়মিত ফুটবল খেলা দেখেন সিলেটের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী এরিক কায়সার। তার মতে, বাংলাদেশে এখন যতটা আন্তর্জাতিক ফুটবল নিয়ে যতটা চর্চা হয়, দেশের ফুটবল নিয়ে তার ছিটেফোঁটাও হয়না।
“আমরা যদি ইউরোপের ফুটবল দেখি, তারা নিয়মিত জার্সি তৈরি করে। নিজস্ব বিপণন ব্যবস্থা আছে। ক্লাব নিজের স্বার্থেই এটা করে থাকে। মাঝে মধ্যে দেখা যায় ফেসবুকে বাংলাদেশের দর্শকদের জন্য বাংলায়, ভারতের দর্শকদের জন্য ভারতের যে কোনো ভাষায় পোস্ট করা হচ্ছে। এটা সমর্থকদের আরো সম্পৃক্ত করে তোলে।”
পাশাপাশি, তার মতে, বাংলাদেশে ক্লাবের সাথে সমর্থকদের যোগাযোগই নেই।
“ইউরোপের ছোট ছোট ক্লাবগুলোও সমর্থকদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে, এমনকি এমকে ডনস বা ব্রিস্টল সিটির মতো দলগুলোও সমর্থক টানতে নিয়মিত ক্যাম্পেইন করে।”
বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবল সমর্থক না থাকার কারণ হিসেবে ক্রিকেটের উত্থানকে বড় করে দেখেন ফুটবল ভক্ত আল বিরুনী প্রমিথ।
তিনি বলেন, “২১ বছর ধরে ক্রিকেট যে আলো পেয়েছে, তাতে মানুষ ফুটবল থেকে বিচ্যুত হয়েছে।”
“ফুটবলের অনিয়মের সংবাদ হরহামেশাই দেখছি, ক্লাব ফুটবলের প্রতি মনোযোগী নয়। তাই আরো পেশাদারিত্ব থাকলে দর্শকরাও দেখবে খেলা।”
তিনি মনে করেন, বাংলাদেশে যে সংস্কৃতি দাঁড়িয়েছে তাতে সমাজের প্রতিষ্ঠিতদের ফুটবলের সাথে সম্পৃক্ত করতে হবে। যেমন ভারতে বলিউড ও ক্রিকেট তারকারা ইন্ডিয়ান সুপার লিগের সাথে জড়িয়ে তাতে গ্ল্যামার নিয়ে আসছেন।
ক্লাবগুলো কী বলছে?
ঢাকা আবাহনীর কর্মকর্তা ও ম্যানেজার সত্যজিৎ দাস রুপু বলেন, “আমাদের দেশে সেই সংস্কৃতি (সমর্থকদের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের)এখনো চালু হয়নি, তবে আমরা এবার শিরোপা জিতেছি। আমরা দর্শকদের চ্যাম্পিয়ন লেখা আকাশী-নীল ও হলুদ জার্সি দেয়ার ব্যবস্থা রেখেছি।”
বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রেজওয়ান উজ জামান বিবিসি বাংলাকে বলেন, “বাংলাদেশে তেমন তারকা তৈরি হয়নি যাদের কেন্দ্র করে ক্লাবকে সমর্থন করবে দর্শকরা। যেমন নেইমারের কারণে অনেকে প্যারিস সেইন্ট জার্মেই সমর্থন করছে, কতিনিয়োর জন্য অনেকেই লিভারপুলের বদলে এখন বার্সেলোনার জার্সি গায়ে তুলবে। বাংলাদেশে তেমন তারকা নেই।”