মানুষ- সমাজ

সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত : ‘নাম্বার ওয়ান’ পার্লামেন্টারিয়ান

নরসুন্দা ডটকম   ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১৮

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সাবেক সদস্য, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী ৫ ফেব্রুয়ারি, সোমবার।

২০১৭ সালের এই দিনে ৭২ বছর বয়সে সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত রাজধানী ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানী ঢাকা ও সুনামগঞ্জে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

সত্তরের প্রাদেশিক পরিষদে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ছিলেন অন্যতম কনিষ্ঠ সদস্য। স্বাধীন দেশের প্রথম সংসদসহ প্রায় সব সংসদেই নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। ষাটের দশকের উত্তাল রাজনীতি থেকে উঠে আসা বামপন্থি এই নেতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে।আইনি দক্ষতা ও বিচক্ষণ রাজনৈতিক জ্ঞান সমৃদ্ধ সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত প্রথম জীবনে বামপন্থি রাজনীতিতে নাম লেখালেও, পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হয়ে, বর্তমানে দলটির উপদেষ্টা পরিষদের দায়িত্বে ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত

সংসদ বিষয়ক জ্ঞানে ঋদ্ধ এই রাজনীতিক বর্তমান সংসদের আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কমিটির সভাপতির দায়িত্বেও ছিলেন। পাশাপাশি, সুপ্রিম কোর্ট বার কাউন্সিলেরও সদস্য ছিলেন।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাগ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংসদ বিষয়ক দায়িত্ব পালন করা সুরঞ্জিত ২০০৮ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে দল ক্ষমতায় এলে রেল মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীত্ব গ্রহণ করেন।

জাতীয় সংসদের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, সুপরিচিত এই রাজনীতিবিদের জন্ম ১৯৪৫ সালে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায়। রাজনৈতিক কেরিয়ারে সাতবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।এমন কী মুক্তিযুদ্ধের আগে ১৯৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জোয়ারের সময়েও ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি থেকে মাত্র ২৫ বছর বয়সে নির্বাচিত হয়েছিলেন এই রাজনীতিবিদ।

নব্বই-এর দশকের শুরুতে তিনি যোগ দেন আওয়ামী লীগে।

সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী জয়া সেনগুপ্ত এমপি

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সরাসরি অংশ গ্রহণ করা এই রাজনীতিকের একটি অন্যতম পরিচয় ছিল সংবিধান এবং আইন বিশেষজ্ঞ হিসেবে।

মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির একজন কনিষ্ঠ সদস্য ছিলেন তিনি।

সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন ১৯৬৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এরপর আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেন সেন্ট্রাল ল কলেজ থেকে।

 

অভিজ্ঞ এই রাজনীতিবিদ মানুষের মাঝে বেশি পরিচিত ছিলেন সংসদে তার চাতুর্যপূর্ণ এবং রসাত্মক বক্তব্যের জন্য। রাজনীতিবিদ হিসেবে বিপক্ষের নেতাদেরও সমীহ পেয়েছেন তিনি।

তাঁর মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা তোফায়েল আহমেদ বলেছিলেন, “তিনি যখন পার্লামেন্টে বক্তৃতা করতেন, সকল সদস্য সেটা তন্ময় হয়ে শুনতেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের নাম সব সময় লেখা থাকবে। একজন মহান নেতাকে আমরা হারালাম, তার শূন্যতা পূরণ হওয়া অত সহজ নয়।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমেদ বন্ধু সুরঞ্জিতের’ মৃত্যুর পর প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, “আমরা একই দলে কখনো কাজ করিনি, কিন্তু আমাদের বন্ধুত্ব থেকে গেছে। সত্যিকার অর্থে রাজনীতিবিদ বলতে যেটা বোঝায়, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সেই রাজনীতিবিদদের মধ্যে অন্যতম। স্বাধীনতার পর থেকে প্রায় প্রতিটি সংসদে তিনি ছিলেন, এটিই প্রমাণ করে যে তিনি একজন জনপ্রিয় একজন জাতীয় নেতা ছিলেন”।

তাঁর একমাত্র সন্তান সৌমেন সেনগুপ্ত

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুতে কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ছিলেন এক বর্ণাঢ্য ব্যক্তিত্ব। পার্লামেন্টারিয়ান হিসেবে তিনি এক নম্বর ছিলেন বলে তাঁর মনে হয়। তাঁর মৃত্যুতে বিরাট শূন্যতা তৈরি হয়েছে। এই শূন্যতা সহজে পূরণ হবে বলে মনে করার কারণ নেই।

চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে সুরঞ্জিত ছিলেন সবার ছোট। তিন ভাই আগেই মারা গেছেন; একমাত্র বোন কলকাতায় বসবাস করছেন।

সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী জয়া সেনগুপ্ত  বর্তমানে তাঁরই আসনের নির্বাচিত এমপি।

সৌমেন সেনগুপ্ত তাদের একমাত্র সন্তান।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে খ্যাতিমান এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব তার কর্মে বেঁচে থাকবেন সব স্তরের মানুষের মাঝে।

স্ত্রী জয়া সেনগুপ্ত, পুত্র সৌমেন সেনগুপ্ত ও পুত্রবধুসহ সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত । ছবি: সংগ্রহ।

আরো পড়ুন-

ফয়সাল অাহমেদ এর তৃতীয় গল্পগ্রন্থ “চিরকুট” প্রকাশিত  

About the author

নরসুন্দা ডটকম