এক বছর আগে সিরিয়াতে যে হামলা চালানো হয়েছিলো, এবারের আক্রমণ ছিলো তারচেয়েও বড় ধরনের। সেবার আক্রমণ করেছিলো যুক্তরাষ্ট্র একা। এবার তাদের সাথে যোগ দিয়েছে ব্রিটেন ও ফ্রান্স।
কিন্তু মূল যে প্রশ্ন সেটা রয়ে গেছে একই- এর মাধ্যমে কি যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব? যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তাদের লক্ষ্য সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ যাতে আবারও রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার না করেন। সেজন্যে এই আক্রমণের মাধ্যমে তাকে একটি বার্তা দেওয়া হয়েছে।
গত বছরের এপ্রিল মাসের আক্রমণের পর সিরিয়ায় যুদ্ধের অবসান ঘটেনি। কিন্তু দুটো বড়ো ধরনের পরিবর্তন ঘটেছে।
প্রথমতঃ এই যুদ্ধে এখনও পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট আসাদ সরকারের জয় হচ্ছে এবং তার কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে জনগণকে ভীতসন্ত্রস্ত করে রাখা। প্রেসিডেন্ট আসাদ এখনও হয়তো পুরো সিরিয়ায় তার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন নি, কিন্তু রাশিয়া ও ইরানের সমর্থন পাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে দাঁড়াবার মতো সিরিয়াতে এখন আর কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না।
দ্বিতীয়তঃ ওয়াশিংটন ও মস্কোর সম্পর্ক- সাধারণভাবে বলতে গেলে রাশিয়ার সাথে পশ্চিমা বিশ্বের সম্পর্কের উল্লখযোগ্য রকমের অবনতি ঘটেছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে যে অনেকেই বর্তমান অবস্থানকে তুলনা করছেন শীতল যুদ্ধের সাথে।
এরকম পরিস্থিতিতেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সিরিয়ায় আসাদ সরকারকে শাস্তিমূলক বার্তা দিতে চেয়েছেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই বার্তায় কতোটা কাজ হবে? প্রেসিডেন্ট আসাদ কি কিছুটা হলেও ভীত হবেন? নাকি আরো অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠবেন? এর ফলে রাশিয়ার অবস্থানের কি কোন পরিবর্তন ঘটবে?
বিবিসির প্রতিরক্ষা বিষংক সংবদদাতা জনাথন মার্কাস বলছেন, এবিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থান খুব একটা পরিষ্কার নয়। মি. ট্রাম্প নিজেও তার দেশের ভেতরে নানা ধরনের সমালোচনার মুখে জর্জরিত।
কিন্তু সিরিয়ায় যে গৃহযুদ্ধ চলছে তার কি হবে? এই বর্বর যুদ্ধ শেষ হওয়ার কোন লক্ষণই তো চোখে পড়ছে না। অনেকেই বলছেন, সিরিয়াতে যেসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে সেগুলো হচ্ছে ব্যারেল বোমা, বুলেট এবং গোলা-হামলার কারণে। রাসায়নিক হামলার কারণে নয়। কিন্তু এটাই কি শুধু পশ্চিমা বিশ্বকে সিরিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে আগ্রহী করে তুললো?
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহারের কারণে পশ্চিমা বিশ্বে ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক কারণে রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যাপারে একটা ভীতি আছে। এই অস্ত্রের ব্যবহারকে নিষিদ্ধ করে গৃহীত আন্তর্জাতিক চুক্তিও নিরস্ত্রীকরণের ব্যাপারে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা।
কিন্তু বড় প্রশ্ন হচ্ছে, পশ্চিমা বিশ্বের সবশেষ এই আক্রমণ সিরিয়ার পরিস্থিতির কতোটা পরিবর্বতন ঘটাবে? এর ফলে কি গৃহযুদ্ধ অবসানের জন্যে কোন পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে? দুঃখজনকভাবে এর উত্তর হচ্ছে – না।
সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো সুপারপাওয়ার নয় রাশিয়া। এই দেশটির এখন আর তেমন কোন আদর্শ নেই যার ফলে সারা বিশ্বের স্বাধীনতাকামীরা তাদেরকে সমর্থন দিতে পারে। রাশিয়া এখন মাঝারি ধরনের আঞ্চলিক শক্তি যার উল্লেখযোগ্য রকমের পরমাণু অস্ত্র রয়েছে। একই সাথে আছে দুর্বল অর্থনীতিও। কিন্তু এই দেশটি এখন জানে কিভাবে তথ্য দিয়ে যুদ্ধ চালাতে হয়। এবং প্রেসিডেন্ট পুতিন তো রাশিয়ার স্বার্থ রক্ষায় বদ্ধ পরিকর।
সিরিয়ায় রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান প্রভাব ইসরায়েলের সাথেও সংঘাতের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। সম্প্রতি ইসরায়েল সিরিয়ার একটি ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে বলে ধারণা করা হয়। ফলে উত্তেজনা বাড়ছে। এই উত্তেজনার শেষ কোথায়, কিভাবে ও কখন সেটা কেউ বলতে পারে না।