বাংলাদেশে নারী শিক্ষা ও কর্মোদ্যোগে অন্যান্য সাধারণ নেতৃত্বের জন্য গ্লোবাল উইমেন’স লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড অর্জনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গৌরবের মুকুটে আরো একটি উজ্জ্বল পালক যুক্ত হলো।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গ্লোবাল সামিট অব উইমেন শুক্রবার সন্ধ্যায় অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে সংগঠনের এক উৎসবমুখর নৈশভোজে শেখ হাসিনাকে এই মর্যাদাবান সম্মাননা প্রদান করে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সেখানে এক নারী নেতৃত্ব সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত প্রায় ১৫শ’ নারী নেতাদের মুহূর্মুহূ করতালির মাঝে গ্লোবাল সামিট অব উইমেনের প্রেসিডেন্ট আইরিন নাতিভিদাদের কাছ থেকে এ পুরস্কার গ্রহণ করেন।
এ সময় বিশ্ব নারী নেতারা কয়েক মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান।
১৯৯৮ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রায় দুই দশক ধরে চলা বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করার এক বছর পর ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘ শেখ হাসিনাকে ‘ইউনেস্কো হুফে বইনি’ শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করলে শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক পাদপ্রদীপের আলোয় আসেন।
১৯৯৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে পুরস্কার তুলে দেয়ার সময় ইউনেস্কোর তৎকালীন মহাপরিচালক ফেডেরিকো মেয়ার বলেন, ‘একটি জাতি প্রতিষ্ঠায় জীবন বিসর্জন দেয়া পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আপনিও সেই জাতিকে শান্তি ও মীমাংসার পথে নিয়ে গেছেন। দেশের অভ্যন্তরীণ সীমান্তে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রয়াস বৈশ্বিক শান্তি প্রতিষ্ঠার সংস্কৃতির প্রতি আপনার আত্মনিবেদন এক মোহনায় মিলিত হয়েছে।’ সেই থেকে শেখ হাসিনা বিশ্ব শান্তি, জলবায়ু পরিবর্তন, কৃষি, নারী শিক্ষা ও আইসিটির ক্ষেত্রে তাঁর অঙ্গীকারের স্বাক্ষর রাখার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে নতুন করে পরিচিত করে তুলছেন এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জাতিকে একটি উচ্চতর আসনে সমাসীন করে চলেছেন।
আন্তর্জাতিক শিক্ষাঙ্গনও তাঁর অবদানের উল্লেখযোগ্য স্বীকৃতি দিয়েছে। এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম ও ভারতের খ্যাতনামা বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, সাহিত্য, উদার মানব বিদ্যা ও মানবিকতায় তাঁকে ৯টি সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেছে। ২০১০ সালে শিশু মৃত্যুর হ্রাস সংক্রান্ত এমডিজি-৪ অর্জনের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতিসংঘ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল (এমডিজি)’ পুরস্কার প্রদান করে। দেশের উন্নয়নে অব্যাহত অঙ্গীকারের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতিসংঘ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজিজ) অর্জনে আইসিটির ব্যবহার উদ্বুদ্ধ করার জন্য ২০১৫ সালে তাঁকে ‘আইসিটি টেকসই উন্নয়ন পুরস্কার’ প্রদান করা হয়।
উইমেন ইন পার্লামেন্ট (ডব্লিউআইপি) ও ইউনেস্কো দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার রাজনৈতিক অঙ্গনে নারী-পুরুষ বৈষম্য হ্রাসে অগ্রণী ভূমিকার জন্য তাঁকে এ বছর ডব্লিউআইপি গ্লোবাল ফোরাম পুরস্কার প্রদান করে এবং ২০১৪ সালে নারী ও কন্যা শিশু শিক্ষা ও উন্নয়নে বিশেষ অবদানের শান্তিবৃক্ষ পুরস্কারে ভূষিত করে।
স্বাস্থ্যখাতে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার হ্রাস এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে অবদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ ও ২০১৩ সালে দুইবার সাউথ সাউথ পুরস্কার লাভ করেন।
এছাড়া তিনি পার্ল এস বাক পুরস্কার (১৯৯৯), ফাও কর্তৃক ‘সেরেস পদক’ (১৯৯৯), মাদার তেরেসা পুরস্কার, এম কে গান্ধী পুরস্কার, ইন্দ্রিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কার (২০০৯), ইন্দ্রিরা গান্ধী স্বর্ণ ফলক, রাষ্ট্রপ্রধান পদক, বিশ্ব বৈচিত্র্য পুরস্কার (২০১১, ২০১২) ও নেতাজী স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯৭) লাভ করেন।
খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন ও আইসিটি উন্নয়নে অবদানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল ইউনিভার্সিটি ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একটি সনদ প্রদান করে।
এছাড়াও ১৯৯৭ সালে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব আলবার্টা ডান্ডি সম্মানসূচক ডক্টর অব লিবারেল আর্টস, যুক্তরাষ্ট্রে বোস্টন ইউনিভার্সিটি ও জাপানের ওয়াসেদা ইউনিভার্সিটি শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লজ ডিগ্রি প্রদান করে।
১৯৯৯ সালে ভারতের বিশ্ব ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে দেশিকোত্তম ডিগ্রি (ডক্টর অব লিটারেচার) এবং অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি তাঁকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লজ ডিগ্রি প্রদান করে। ২০০৫ সালে শান্তি, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় অবদানের জন্য রাশিয়ার পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটিও তাঁকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে। ১৯৯৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও তাঁকে ডক্টর অব লজ ডিগ্রি প্রদান করে এবং ২০০০ সালে ব্রাসেলসের ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয়ও তাঁকে একই ধরনের সম্মাননা প্রদান করে।
২০১৫ সালে বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় তাঁর দূরদর্শী কর্মসূচির জন্য তিনি পরিবেশের জন্য বিশ্বের সর্বোচ্চ সম্মাননা চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থ অর্জন করেন। ২০১৬ সালে শেখ হাসিনাকে নারী ক্ষমতায়নে অনন্য অবদানের জন্য এজেন্ট অব চেঞ্জ পুরস্কার ও প্লানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন সম্মাননা প্রদান করা হয়। সে বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ইউএন উইমেন প্রধানমন্ত্রীকে প্লানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন স্বীকৃতি প্রদান করে এবং গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফোরাম তাঁকে এজেন্ট অব চেঞ্জ পুরস্কারে সম্মানিত করে।