প্রকৃতি

পরিবেশ দূষণ : বাংলাদেশে এক বছরে মারা গেছে ৮০ হাজার মানুষ

নরসুন্দা ডটকম   সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৮

বিশ্ব ব্যাঙ্ক বলছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর যতো মানুষের মৃত্যু হয় তার ২৮ শতাংশই মারা যায় পরিবেশ দূষণজনিত অসুখবিসুখের কারণে। কিন্তু সারা বিশ্বে এধরনের মৃত্যুর গড় মাত্র ১৬ শতাংশ।

রবিবার বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দূষণ ও পরিবেশগত ঝুঁকির কারণে যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত তার একটি বাংলাদেশ।

গবেষণায় আরো বলা হয়েছে, ৭ থেকে ৮ প্রবৃদ্ধির একটি উচ্চতর মধ্যম আয়ের দেশ হয়ে উঠতে হলে বাংলাদেশকে এখনই, বিশেষ করে শহর এলাকায় দূষণ রোধ করতে ও পরিবেশ রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে।

বিশ্বব্যাংক ২০১৫ সালের এক পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেছে, শহরাঞ্চলে এই দূষণের মাত্রা উদ্বেগজনক পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে তারা বলছে, দূষণের কারণে ২০১৫ সালে বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে ৮০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে তুলনা করতে গিয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পরিবেশ দুষণজনিত কারণে বাংলাদেশে যেখানে ২৮ শতাংশ মৃত্যু হয় সেখানে মালদ্বীপে এই হার ১১ দশমিক ৫ শতাংশ।

ভারতে ২৬ দশমিক ৫। পাকিস্তানে ২২ দশমিক ২। আফগানিস্তানে ২০ দশমিক ৬। শ্রীলঙ্কায় ১৩ দশমিক ৭।

এর আগে ইকোনমিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের একটি গবেষণায় ঢাকাকে বসবাসের জন্যে দ্বিতীয় অযোগ্য শহর হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। এক নম্বরে ছিল যুদ্ধ-বিধ্বস্ত সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক।

বিশ্বব্যাংক বলছে, দূষণের কারণে বাংলাদেশের বছরে ৬৫০ কোটি ডলার ক্ষতি হয় – যা মোট জাতীয় উৎপাদন বা জিডিপির প্রায় সাড়ে তিন শতাংশ।

বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দূষণ ও পরিবেশগত ঝুঁকির কারণে যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত তার একটি বাংলাদেশ।

বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর রাজশ্রী পারালকার বলেছেন, “নগরাঞ্চলে দূষণ ও পরিবেশের অবনতি হওয়ার কারণে বাংলাদেশকে অনেক মূল্য দিতে হচ্ছে। এর ফলে দেশটির ভালো প্রবৃদ্ধিও এখন হুমকির মুখে।”

এজন্যে বিশ্বব্যাংক জলাভূমি দখল, ক্ষতিকর বর্জ্য ঠিকমতো না ফেলা ইত্যাদিকে দায়ী করা হয়েছে। আর এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে নারী, শিশু এবং দরিদ্র মানুষের।

বিশ্বব্যাংকের হিসেবে দেখা গেছে, যে গার্মেন্ট খাত থেকে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেই সেই খাত থেকেই প্রতি বছর ২৮ লাখ টনেরও বেশি বর্জ্য তৈরি হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রায় ১০ লাখ মানুষ, যাদের বেশিরভাগই দরিদ্র, সীসা দূষণের ঝুঁকিতে রয়েছে। এর ফলে শিশুদের বুদ্ধির বিকাশসহ স্নায়ু-জনিত ক্ষতি হতে পারে।

গবেষণাটি বলছে, এর ফলে নারীর গর্ভপাত এবং মৃত শিশুর জন্মদানের ঝুঁকিও বৃদ্ধি পেতে পারে।

বলা হচ্ছে, বৃহত্তর ঢাকার যেসব এলাকা ভারী ধাতবের কারণে দূষিত সেখানে সাধারণত দরিদ্র মানুষেরাই বসবাস করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা শহরে যতো জলাভূমি ছিল গত ৪০ বছরে তার ৭৫ শতাংশ হারিয়ে গেছে। এসব জলাভূমি ভরাট করে সেখানে বাড়িঘর তোলার কারণে শহরের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়ে যাওয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে ছোট ছোট শহরগুলোও পরিবেশ দূষণের শিকার হচ্ছে।

এরকম একটি উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে পাবনার কথা।

বিশ্বব্যাংক বলছে, ১৯৯০ সালের পর পাবনা শহর তার অর্ধেক জলাভূমি হারিয়ে ফেলেছে এবং এই শহরের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ ইছামতী নদী এখন মৃতপ্রায়। সূত্র: বিবিসি বাংলা।

আরো পড়ুন…

অটোরাইচ মিলগুলো নিয়মনীতি মানছে না : অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঈশ্বরদীতে পরিবেশ কর্মকর্তারা

নাগাল্যান্ডের আদিবাসীরা বন রক্ষার জন্য তাদের প্রাচীন ঐতিহ্য শিকার করা ছেড়ে দিয়েছে

About the author

নরসুন্দা ডটকম