খেলাধুলা

আজই কি এশিয়াসেরার মুকুট উঠবে মাশরাফিদের মাথায়?

নরসুন্দা ডটকম   September 28, 2018
জয় দিয়ে শুরু করতে মরিয়া বাংলাদেশ

সঞ্জয় সাহা পিয়াল, দুবাই থেকে >>

আরবের লোককথার আরব্য রজনীতে সম্রাট শাহরিয়ারকে তার স্ত্রী শেহেরজাদ এক হাজার এক রাত ধরে অপূর্ণ গল্পগুলো শুনিয়েছিলেন! প্রতিটি গল্পের শেষে অমোঘ এক আকর্ষণ থাকত পরের গল্পের শুরুর জন্য। এশিয়া কাপে বাংলাদেশের গল্পও তো ঠিক এমনই, সেই ২০১২- সাকিবের কাঁধে মুশফিকের কান্নার ছবিটা। চার আসরে একে একে তিন-তিনটি ফাইনাল। কিন্তু তার পরও অধরা অস্পর্শই থেকে গেছে স্বপ্নের ট্রফিটি। আজ দুবাইয়েই কি শেষ হবে বাংলাদেশ ক্রিকেটের আরব্য রজনীর উপাখ্যান, আজই কি এশিয়াসেরার মুকুট উঠবে মাশরাফিদের মাথায়। ভারতের সঙ্গে বকেয়া একটা হিসাব আজই চুকিয়ে ফেলবেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল- আপনার হাতে এখন একটি ট্রফি ছাড়া যে ঠিক মানাচ্ছে না। হেসে দিয়েছিলেন- ‘আমি নিজেকে অত সস্তা মনে করি না। একটি ট্রফি দিয়ে নিজেকে কখনোই বিচার করি না। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে, এ ট্রফিটি দেশের জন্য খুব দরকার। আমরা এতবার এশিয়া কাপের ফাইনালে এসেছি; কিন্তু ট্রফি জিততে পারিনি। সেই হিসাবে এই ট্রফি জয়ের মূল্য অনেক।’

বাংলাদেশের প্রথম এশিয়া কাপ ফাইনালে কী ঘটেছিল?

মাশরাফি যখন তার টিম হোটেলে বসে কথাগুলো বলছিলেন, তখনও তার বোলিং হাতের আঙুলে ব্যান্ডেজ বাঁধা। তবে টিম মিটিংয়ে ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন- ‘আজকের ফাইনাল আমি খেলবই।’ গেল কয়েকদিন ধরে আমিরশাহির গরমের সঙ্গে দুরূহ যুদ্ধ চালিয়েছেন; কিন্তু কী অকল্পনীয় সংযমে মুড়ে রেখেছেন ভেতরের অসহ্য অন্তর্দাহটা। পাকিস্তানের বিপক্ষে চোট-আঘাতে অর্ধেক হয়ে যাওয়া দলটিকেই জিতিয়ে এনেছেন। মাঠের কৌশলে কিছু কিছু বাজিও তিনি খেলেছেন। আজও তেমন কিছুই করতে চান, যা কেউ ভাবছে না, তেমন কিছু করেই চমকে দিতে চান রোহিত শর্মাদের। আর এজন্য তিনি এদিন দলের কম্পিউটার অ্যানালাইসিস্ট ‘শ্রী’র শরণাপন্ন হন। দলের ভারতীয় এই কোচিং স্টাফকে এ নামেই ডাকে টাইগাররা। প্রতি ম্যাচের আগে এই শ্রীর কাছে গিয়েই মাশরাফি তার গেম প্ল্যান ঠিক করে নেন। এই যেমন শোয়েব মালিক যে স্কয়ার লেগে ক্যাচ তুলতে পারেন, তা নাকি আগে থেকেই জানিয়ে দিয়েছিলেন। আজকে ভারতের বিপক্ষেও মাশরাফির কাছে তিনি ল্যাপটপ ঘেঁটে এই তথ্য দিয়েছেন যে- ধাওয়ান কিংবা রোহিত শর্মা, তাদের দুর্বলতা স্পিন বোলিংয়ে। এমনকি হংকংয়ের সঙ্গেও ভারত যে স্ট্রাগল করেছিল, তা একজন বাঁহাতি স্পিনারের কাছেই। এই চিন্তা থেকেই আজকের একাদশে নাজমুল ইসলাম অপুকে নামাতে যাচ্ছে টিম ম্যানেজমেন্ট।

আরো পড়ুন..

“কাগজে মনে হয় ইন্ডিয়া জিতবে, কিন্তু খেলা তো কাগজে হয় না খেলা মাঠে হয়”

বাংলাদেশের প্রথম এশিয়া কাপ ফাইনালে কী ঘটেছিল, জানেন?

তৃতীয়বারের মতো এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ

এদিন দুপুরে  বসেছিলেন মাশরাফি আর রিয়াদকে নিয়ে। সেখানে আকরাম খান, খালেদ মাহমুদ সুজন ছাড়াও দুবাইয়ে আসা বিসিবির কয়েকজন পরিচালক ছিলেন। খোলামেলা আলোচনা হয় সেখানে। যেখানে মাশরাফি পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছেন, ভারতকে হারাতে হলে এমন কিছু করতে হবে, যা ওরা চিন্তাও করতে পারেনি। অর্থাৎ এখানেও একধরনের ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন মাশরাফি। কিন্তু সেটা কী- তা কৌশলগত কারণেই মিডিয়ায় প্রকাশ করা যাচ্ছে না। তবে এই ম্যাচ ঘিরে সমর্থকদের অযথা বিদ্বেষ ছড়ানোর পক্ষে নন মাশরাফি। এতে নিজেদের অজান্তেই একটা চাপ চলে আসে। যা মোটেই মাথায় নিতে চাচ্ছেন না মাশরাফি। ‘এটা ঠিক যে, ফাইনালে নামার সময় একটা ইমোশন কাজ করে সবার মধ্যেই। কিন্তু সেটা কোনোভাবেই নেতিবাচক হতে দেওয়া যাবে না।’ এর আগে ভারতের সঙ্গে গ্রুপ পর্বের ম্যাচেও অগোছালো লেগেছিল গোটা দলকে।

এশিয়া কাপের ফাইনালে বাংলাদেশ

টিম ম্যানেজমেন্ট ভীষণভাবে চাইছেন, আজকের ম্যাচে যেন টপঅর্ডার থেকে কিছু রান আসে। মাশরাফির হিসাব বলছে, শুরুতে ব্যাটিং করলে ২৬০ থেকে ২৭০ রান তুলতে হবে এবং বোলিং করলে যত অল্প রানে তাদের বাঁধা যায় সেই চেষ্টা করতে হবে। এজন্য টপঅর্ডার থেকে কিছু আসতেই হবে। মুশফিকও মনে করছেন তা। ‘যুদ্ধে নামতে হলে সামনে কে পেছনে কে, তা ভেবে লাভ নেই। হয় মরতে হবে, না হয় মারতে হবে। আমরা সেই কৌশল নিয়েই মাঠে নামব।’ পাঁজরের ব্যথাটা তার এখনও রয়েছে। আজও হয়তো একাধিক টেপ লাগিয়ে ব্যাটিং করতে নামবেন মুশফিক। ব্যাটিং অর্ডারে সিনিয়রদের মধ্যে এখন আছেন শুধু মুশফিক আর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ইমরুলও আছেন তাদের সঙ্গে। আজ এ তিনজনই বাড়তি দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। গরমের মধ্যে মাঠে অনুশীলনে না গিয়ে প্রত্যেকেই কম্পিউটার অ্যানালাইসিস্টের দেওয়া ভিডিও ডুকমেন্ট নিয়ে হোটেল রুমেই নিজেদের মতো প্রস্তুতি নিয়েছেন।

এই ম্যাচ ঘিরে শেখর ধাওয়ানও বারুদ ছড়াতে দেননি দুবাইয়ে। বাংলাদেশ দলকে ‘হ্যাটস অফ’ বলে বরং তিনি ফাইনালকে আর কয়েকটা সাধারণ ম্যাচের আবহই দিয়েছেন। কিন্তু তার পরও ফাইনাল বলে কথা, টিম মিটিংয়ে পরিস্কার বলে দেওয়া হয়েছে, কোনোভাবেই মাথা গরম করে সম্ভাবন গুলো নষ্ট করা যাবে না। তাই বাইরে থেকে টাইগারদের ঠাণ্ডা স্থির মনে হলেও ভেতরে কিন্তু ছাইগুলো চাপাই পড়ে আছে…। সূত্র: সমকাল।

About the author

নরসুন্দা ডটকম