ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফোক ফেস্ট বা ঢাকা আন্তর্জাতিক লোকসংগীত উৎসব শুরু হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার।
রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে শুরু হতে যাওয়া এ উৎসব চলবে শনিবার পর্যন্ত।
প্রতিদিন সন্ধ্যা ছয়টায় শুরু হয়ে এ উৎসব চলবে রাত বারোটা পর্যন্ত।
যাতে বাংলাদেশসহ সাত দেশের দেড় শতাধিক শিল্পী অংশ নিচ্ছেন। সান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগ ও সান কমিউনিকেশনের আয়োজনে মেরিল নিবেদিত এ আয়োজনে সহযোগিতা করছে ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, গ্রামীণফোন ও রাঁধুনী।
এবারের উৎসবে বাংলাদেশের শিল্পীদের মধ্যে অংশ নেবেন- মমতাজ বেগম, বাউল আব্দুল হাই দেওয়ান, বাউল কবির শাহ, অর্ণব, নকশীকাঁথা, স্বরব্যঞ্জ ও ভাবনা নৃত্য দল। ভারত থেকে অংশ নিচ্ছে ওয়াদালি ব্রাদার্স, রাঘু দীক্ষিত ও সাত্যকি ব্যানার্জি, পাকিস্তান থেকে শাফকাত আমানাত আলী, বাহ্রাইন থেকে মাজাজ, যুক্তরাষ্ট্র থেকে গ্র্যামি পুরস্কার বিজয়ী লস টেক্সমেনিয়াক্স, পোল্যান্ড থেকে দিকান্দা এবং স্পেন থেকে অংশ নিচ্ছেন লাস মিগাস।
আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টায় সামিনা হোসেন প্রিমার পরিচালনায় নৃত্যদল ভাবনার পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হবে ঢাকা আন্তর্জাতিক লোকসংগীত উৎসবের চতুর্থ আসরের।
আজ উৎসবে গান গাইবেন বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের আবদুল হাই দেওয়ান, পোল্যান্ডের লোকগানের দল, ভারতের পাঞ্জাবের ওয়াদালি ব্রাদার্স, ভারতের সাত্যকি ব্যানার্জী।
অারো পড়ুন…
বারী সিদ্দিকীর জন্মদিন আজ
প্রথম দিনের পরিবেশনা
দিকান্দা
পোল্যান্ডের ব্যান্ড দিকান্দার যাত্রা শুরু ১৯৯৭ সালে। তাদের মৌলিক গানগুলোতে ঐতিহ্যগত লোকজ সুরের পাশাপাশি পাওয়া যায় প্রাচ্যের প্রভাব। দিকান্দার গানে বলকান থেকে শুরু করে ইসরায়েল, কুর্দি, বেলারুশ, ভারত প্রভৃতি দেশের লোকজ সংগীতের অনুপ্রেরণা খুঁজে পাওয়া যায়। এ পর্যন্ত সাতটি অ্যালবাম বের করেছে দলটি। বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় ব্যান্ডটি জার্মানি, অস্ট্রিয়া, সুইজারল্যান্ড, রাশিয়া, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র প্রভৃতি দেশের লোকজ কনসার্টে অংশ নিয়েছে। ২০০৫ সালে জার্মান ম্যাগাজিন ‘ফোকলার’ আয়োজিত ‘ডিস্ক অব দ্য ইয়ার’ অ্যাওয়ার্ড পায় দিকান্দার অ্যালবাম ‘উশতিজো’।
আব্দুল হাই দেওয়ান
জন্ম ১৯৬০ সালের ১০ জুন নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁয়ে। কৃষক পরিবারের সন্তান আব্দুল হাই দেওয়ানের শৈশব শুরু হয় আড়বাঁশি বাজানোর মধ্য দিয়ে। এলাকায় পালাগান, ফকিরি গানের দল গান গাইতে এলে সারা রাত জেগে গান শুনতেন। একদিন তাঁর গ্রামে গান করতে আসেন কৃষ্ণনগরের মাতাল কবি রাজ্জাক দেওয়ান। রাজ্জাক দেওয়ানের গান মনে ধরে আব্দুল হাই দেওয়ানের। তারপর রাজ্জাক দেওয়ানের শিষ্য হন এই শিল্পী। গুরুর কাছ থেকে পান ‘হাফ মাতাল’ উপাধি।
ওয়াদালি ব্রাদার্স
পদ্মশ্রী ওস্তাদ পূরণচন্দ্র ওয়াদালি ও প্যায়রেলাল ওয়াদালি ভ্রাতৃদ্বয় সুফিসংগীতের স্বনামধন্য নাম। ভারতের পাঞ্জাবের অমৃতসরে এক সংগীত পরিবারে জন্ম তাঁদের। বড় ছেলে পূরণচন্দ্র ওয়াদালিকে গানের তামিল নিতে উৎসাহিত করেন বাবা। তারপর পূরণচন্দ্র পাতিয়ালা ঘরনার তামিল নেন নামকরা পণ্ডিত দুর্গা দাস ও ওস্তাদ বড়ে গোলাম আলী খানের কাছে। এরপর প্যায়রেলাল ওয়াদালি বড় ভাইকে নিজের গুরু হিসেবে নেন। গুরুবাণী, কাফি, গজল ও ভজন ঘরানার গান দিয়ে শুরু করলেও সুফি গানের প্রতি দুই ভাইয়ের ঝোঁক ছিল সবচেয়ে বেশি। তাঁদের মতে, সংগীতচর্চা কখনো বাণিজ্যিক ব্যবসা হতে পারে না। ২০১৮ সালের ৯ মার্চ ৭৫ বছর বয়সে মারা যান প্যায়রেলাল ওয়াদালি। বর্তমানে পূরণচন্দ্র ওয়াদালির সঙ্গে সংগীত পরিবেশন করে থাকেন তাঁর ছেলে লাক্ষিণদার ওয়াদালি।
সাত্যকি ব্যানার্জি
ভারতীয় বাঙালি শিল্পী সাত্যকি ব্যানার্জি। কলকাতার জুলিয়ান ডে স্কুল থেকে পড়াশোনা করা সাত্যকি ব্যানার্জি সংগীতে একাডেমিক ডিগ্রি লাভ করেন। ফোক ছাড়া ক্লাসিক্যাল গানেও পারদর্শী তিনি। বাজিয়ে থাকেন দোতারা ও সরোদ। প্রথমে সরোদের তামিল নেন প্রয়াত পণ্ডিত দীপক চৌধুরীর কাছ থেকে। বর্তমানে শিখছেন পণ্ডিত তেজেন্দ নারায়ণ মজুমদারের কাছে। দোতারা বাজানো রপ্ত করেছেন লোকজ সংগীত দলের সঙ্গে পরিবেশন করতে গিয়ে।
ভাবনা নৃত্যদল
ভাবনা নৃত্যদলের যাত্রা শুরু ২০০৭ সালে বাংলাদেশের জনপ্রিয় নৃত্যশিল্পী ও কোরিওগ্রাফার শামীমা হোসাইন প্রেমার হাত ধরে। শুদ্ধ নৃত্যচর্চায় বিশ্বাসী ভাবনা নৃত্যদল প্রথম থেকেই নৃত্যের মাধ্যমে নজরুল ও রবীন্দ্রনাথকে মঞ্চে নিয়ে আসে। দেশের বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী লোকনৃত্য, রায়বেশে ও আধুনিক ধারার নাচও পরিবেশন করে থাকে তারা। এরই মধ্যে ‘ভানুসিংহের পদাবলি’, ‘শকুন্তলা’, ‘শাপমোচন’ পরিবেশন করে প্রশংসিত হয়েছে।