সোহেল আহমেদ খান>>
বুকটা ভারী হয়ে উঠেছিল দেশমাতার অপমানে। কাঁদতে ইচ্ছে হলো। পরক্ষণেই রাগে ক্ষোভে শরীরে আগুন জ্বলে উঠেছিল। একদলা থুতু ফেলেই রাগটা কমানোর চেষ্টা করেছিলাম।
আজ বই মেলায় ছিলাম মেজাজটা ছিল সপ্তমে। ৭১ টেলিভিশন এর সাংবাদিক ছোট ভাই এবং বন্ধু নাট্যকর্মী বুলবুল আমার একটা সাক্ষাতকার নিচ্ছিলো। সম্ভবত ভদ্র মহিলা সাক্ষাতকার দেয়ার ইচ্ছাতেই ওখানে এসেছিলো। পরিচয় দিয়ে যাচ্ছিল জন্ম নাকি তার জার্মানীতে থাকেনও জার্মানী বা ইউরোপের কোন এক দেশে। এসেছেন বই মেলায় তার নাকি ১৬ টি বই প্রকাশ হয়েছে। বুলবুল নাট্যকলায় রবীন্দ্র ভারতী থেকে পড়ালেখা করে এসে একাত্তর টেলিভিশন কাজ করছে। এই কথা জানার পর ভদ্র মহিলা বুলবুলকে জিজ্ঞেস করলেন এইদেশ কেমন লাগছে, বুলবুল এবং আমার উত্তর ছিল নিজের দেশতো ভালো লাগবে এটাই স্বাভাবিক। ভদ্র মহিলার যে উত্তর তার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। তার একটা কথা হলো নিজের দেশ হয়েছে তো কি পুজা করা লাগবে? এদেশ খুনিদের দেশ, এদেশ জঙ্গীদের দেশ, এদেশের সৃষ্টি খুন করে। জার্মানী সহ ইউরোপের দেশগুলোর প্রশংসায় তিনি পঞ্চমুখ। তাকে বলার চেষ্টা করলাম মুক্তিযুদ্ধকে আপনি খুন করা বলছেন? আর দেশে মানুষ খুন হচ্ছে এটা কি দেশের সমস্যা নাকি মানুষের সমস্যা? সরকার যদি খারাপও হয় তাই বলে আপনি দেশকে ঘৃনা করবেন? সরকারের সমস্যা হলে আমরা সরকার পরিবর্তন করতে পারি ভোট বা আন্দোলনের মাধ্যেমে।
দেশের সমস্যা বলে কি বুঝাতে চাইছেন? আমরা কি তাহলে দেশকে আবারো বৃটিশ, বা পাকিস্তান নাকি অন্য দেশের হাতে তুলে দিবো। কিন্তু উনি অনর্গল কথা বলে যাচ্ছিলেন আমাদের কোন কথা বলার সুযোগ দিচ্ছিলেন না। ওনার অসংলগ্ন কথার মধ্যে বুলবুল চলে গেলো তার প্রেসবক্সে। আমি দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করার চেষ্টা করলাম ঠান্ডা মাথায়, যেহেতু তিনি একজন নারী। তারপর মেজাজ কিছুটা নিয়ন্ত্রন করে বললাম আপনি এই দেশে কেন বই প্রকাশ করতে এসেছেন? যে দেশের জন্য নুন্যতম ভালোবাসা আপনার মনে নেই সেই দেশে আপনাকে বই বের করতে কে অনুরোধ করেছে? জার্মানি থেকে কি এখানে বইয়ের ব্যবসা করতে এসেছেন? বাঙ্গালী দাবী করছেন অথচ বাংলাদেশকে যারপর নাই ছোট করে যাচ্ছেন! কেন? আর এই বই মেলাতেই বা কেন এসেছেন? যা হোক তার সাথে আর কথা বলার ইচ্ছে হচ্ছিল না, ছি. বলেই সেখান থেকে চলে গেলাম আমার স্টলের দিকে। আর মনের মধ্যে প্রচন্ড রাগ হচ্ছিল। কিছুতেই রাগকে নিয়ন্ত্রণ কতে পারছিলাম না। ঘৃনায় একদলা থুতু ফেললাম সেই বাংলাপিয়ানের উদ্দেশ্যে। তার ছবি নেয়ার কথা মনে হয়েছিলো কিন্তু পরিশ্রমের টাকায় কেনা স্মার্ট ফোনে একটা অমানুষের ছবি তুলে ফোনটা নোংড়া করতে চাইনি। তার নামটা প্রথমেই বলেছিলো কিন্তু রাগ সপ্তমে যাওয়ায় সেই নামটাও ভুলে গেছি। ভালোই হয়েছে আমার মনে এমন অমানুষের নামটা স্থান না পাওয়ায় আমি খুশি।
আমাদের প্রাণের বই মেলার আজকের এই তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের সম্মানিত প্রকাশদের প্রতি আমার বিনীত অনুরোধ অধিক মুনাফার লোভে মুরগী ধরার নামে এসব ইউরোপীয়ান বার্ড ফ্লুওয়ালা মুরগীকে ধরে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় ছেড়ে মেলাকে কলঙ্কিত করবেন না। যারা দুইদিন হলো ইউরোপে গিয়ে নিজের দেশের গৌরবময় ইতিহাস ভুলে ইউরোপীয়ান সেজে নিজের দেশকে হেয় করার ধৃষ্টতা দেখিয়ে যাচ্ছে। কারণ বার্ড ফ্লুর আর এন এ ভাইরাস সোয়াইন ফ্লুতে রূপান্তরিত হয়ে মানুষকে সংক্রমিত করতে পারে।
এরপর একঘন্টার মতো মেলায় আমার স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম কিন্তু স্বস্তি পাচ্ছিলামা না কিছুতেই। কাক হয়ে ময়ুরের পেখম লাগিয়ে ময়ুর সাজা সেই ভদ্রমহিলার প্রতি ঘৃনা প্রকাশ করে এখনও নিজের ক্ষোভ সামলাতে পারছি না। থেকে থেকে শুনতে পাচ্ছি আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সেই ফেব্রুয়ারিতে যেন আমিও শ্লোগান দিচ্ছি রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই। যেন ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে আমিও আজ যুদ্ধে লিপ্ত। যেনো শ্লোগান দিচ্ছি বীর বাঙ্গালী অস্ত্র ধর বাংলাদেশ স্বাধীন করো। আর অনর্গল গেয়ে যাচ্ছি আমার প্রাণের সঙ্গীত “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি”…
সোহেল আহমেদ খান : কবি ও সংগঠক।